কড়া বিএসএফ প্রহরা পেট্রাপোল সীমান্তে।ছবি- পার্থ সারথি নন্দী।

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন। তবে পরিস্থিতি বুঝে ২০ এপ্রিল থেকে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে বলেও নববর্ষের সকালে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। লকডাউনের ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই কর্মসংস্থান ও মানুষের জীবিকার উপর টান পড়েছে। বিশেষ করে গ্রাম ও মফস্বলের গরিব মানুষের সংকট বেড়েছে। তাই সরকার যাবতীয় কিছু বিবেচনা করে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি গাইডলাইন প্রকাশ করে জানিয়েছে, নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্স কর্পোরেশন, মাইক্রো-ফিনান্স সংস্থাগুলি আজ ২০ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করতে পারে। এ ব্যাপারে এনবিএফসি এবং মাইক্রো-ফিনান্স সংস্থাগুলির তরফে সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ও নর্থ ব্লকও মনে করছে, অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দর্শনই হল আরও বেশি ঋণের যোগানের ব্যবস্থা করে বাজারে নগদের যোগান বাড়ানো ও তার মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা যথাসম্ভব ঘোরানোর চেষ্টা করা।

এ ছাড়া নারকেল, স্পাইস বাম্বু, কোকো গাছের বাগান, দুধ, দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন, পোলট্রি ও অন্যান্য পশুপালন, চা, কফি বিভিন্ন বনজ উৎপাদনের কাজ ২০ এপ্রিল থেকে শুরু করার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। গ্রামীণ অঞ্চলে জল সরবরাহ ও স্যানিটেশন, বিদ্যুৎতের কাজ, টেলিকম সংস্থার অপটিকাল ফাইবার এবং কেবল লাইন পাতার কাজেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আজ থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকেও। সেই সঙ্গে কৃষি ও তার সম্পর্কিত কাজকর্ম পুরোদমে শুরু হবে। গ্রামে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, রাস্তা নির্মাণ, সেচ প্রকল্প, বাড়ি নির্মাণ, ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ, সবই শুরু হয়ে যাবে। ১০০ দিনের প্রকল্পে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে সেচ ও জল সংরক্ষণের কাজে। লকডাউনের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন। তাঁদের কথা ভেবেই ওই ছাড় দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।

সোমবার থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরকেও কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কয়লাখনি, অন্যান্য খনিতে কাজ ও তেল উৎপাদনেও অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র।

এ ছাড়া এদিন, ২০ এপ্রিল থেকে চালু হবে সব ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স সংস্থাগুলি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ডেলিভারি করতে পারবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কদিন আগে নির্দেশিকা জারি করে বলেছিল, জরুরি নয় এমন পণ্যও ডেলিভারি দেওয়া যাবে। রবিবার সেই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এবং পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিসও চালু হবে ২০ এপ্রিল থেকে। তবে বিমান, ট্রেন, সড়কপথে চলাচল, শিক্ষায়তন, শিল্প ও বাণিজ্য, হোটেল, সিনেমা হল, শপিং কমপ্লেক্স এবং থিয়েটার হল বন্ধ থাকবে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশ করারও অনুমতি দেওয়া হবে না।

তা ছাড়া সোমবার থেকে আন্তঃরাজ্য পণ্য পরিবহণে পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হয়েছে। হাইওয়েতে যেসব ধাবা, ট্রাক সারানোর কারখানা ও সরকারি কল সেন্টার আছে, সেগুলিও ওই দিন থেকে খুলে যাবে।

তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এও পরিষ্কার জানিয়েছে যে, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করেই সব কাজ করতে হবে। যেই সব জেলা করোনা হটস্পট নয় সেই সব জায়গায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে কল কারাখানাতেও ২০ এপ্রিলের পরে অল্প শ্রমিক ব্যবহার করে উৎপাদন চালু হতে পারে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তাতে প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও কিছু অংশকে জরুরি পরিষেবার আওতায় আনা হয়েছে। যেমন পশু চিকিৎসকরা প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে বিধি মেনে তা করতে হবে। চালক ছাড়া আর একজন বসতে পারবেন গাড়িতে। তাঁকে বসতে হবে গাড়ির পিছনের সিটে। স্কুটার বা মোটর সাইকেলে জরুরি কাজে গেলেও একজনের বেশি চাপা যাবে না।

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিংয়ের মতো বেশ কিছু ক্ষেত্রকে জরুরি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করেছে কেন্দ্র। সোমবার থেকে সেই ধরনের সংস্থাগুলির অফিস খুলবে। তবে বেশ কয়েকটি বিধি মানতে হবে। ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ করতে হবে। সকালে যাঁরা কাজে যোগ দেবেন তাঁদের মধ্যাহ্নভোজের আগে ছুটি দিতে হবে। ওই সময় থেকে দ্বিতীয় শিফট শুরু হবে। যাতে মোট কর্মী সংখ্যার ৩৩ শতাংশের বেশি একসঙ্গে না থাকে। অফিসের ভিতর কাজ করতে হবে ১০ ফুট দূরত্ব মেনে। লিফটে চারজনের বেশি ওঠা যাবে না।

সরকার বলেছে আজ থেকে নির্মাণ কাজ করা যাবে। তবে রিয়েল এস্টেট সংস্থাগুলিকে খেয়াল রাখতে হবে ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকরা যেন কাজ না করেন।

ইলেকট্রিক মিস্ত্রী, কলের মিস্ত্রী, ছুতোর, কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মীরা আজ থেকে কাজ করতে পারবেন। কাজ করার ক্ষেত্রে ছাড় থাকছে কেবল টিভি ও ডিটিএইচ পরিষেবাতেও।

রবিবার জেলাশাসকদের মাধ্যমে রাজ্যকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছে, যে এলাকাগুলি হটস্পট বা ক্লাস্টার নয়, সেখানে আংশিক ভাবে আর্থিক কর্মকাণ্ড শুরু করা যাবে। সেই মোতাবেক প্রস্তুতি নিয়েছে রাজ্যও। 

বনগাঁ সীমান্ত পরিদর্শনে পুলিশ প্রশাসন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, ‘হটস্পট’ চিহ্নিত জেলাগুলির মধ্যে ‘কন্টেনমেন্ট’-এর জন্য শনাক্ত এলাকা আপাতত সিল করা হচ্ছে। হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনার কিছু অংশকে ‘কন্টেনমেন্ট’ করা হয়েছে। সেখানে বাড়ি থেকে মানুষকে যাতে না বেরোতে হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। সরকারি ভাবে মুখ খুলতে না চাইলেও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, জেলা প্রতি দু’জন করে নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের এক জন খাদ্যসামগ্রী সংক্রান্ত চাহিদা দেখভাল করবেন। অন্য জন বাকি জরুরি পরিষেবার চাহিদা মেটাবেন৷

অনুপ্রবেশ রুখতে পুলিশের টহল বনগাঁয়

প্রশাসন সূত্রে খবর, ‘কন্টেনমেন্ট’ এলাকার বাসিন্দারা প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট জেলার কন্ট্রোলরুম নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় ভাবে পাওয়া সেই চাহিদা-বার্তা সংশ্লিষ্ট নোডাল অফিসারকে জানিয়ে দেওয়া হবে। তিনি জরুরি জিনিসপত্র স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশের মাধ্যমে পৌঁছে দেবেন। অনলাইনে কেউ অভিযোগ জানালে সেই তথ্য নবান্ন ছাড়াও জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যাবে। অভিযোগের নিষ্পত্তি করার পরে সংশ্লিষ্ট জেলা বা প্রশাসন অনলাইনেই সেই তথ্য জমা করবে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকাভিত্তিক ভাবে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে যে দল গঠন করা হয়েছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখবে। ‘সিল’ করা এলাকায় কেউ অসুস্থ হলে তাঁর চিকিৎসা এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ড পিছু একজন করে সিনিয়র অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০০-৪০০টি বাড়িসমেত এলাকাতেও একজন করে অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে বস্তি এবং ঘিঞ্জি এলাকায়। 

জনে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ড পিছু একজন করে সিনিয়র অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০০-৪০০টি বাড়িসমেত এলাকাতেও একজন করে অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে বস্তি এবং ঘিঞ্জি এলাকায়। 

আজথেকে কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ শিথিল এক নজরে:
(আক্রান্ত হয়েছে এমন এলাকায় নয়)

• ডেপুটি সেক্রেটারি থেকে উচ্চতর পদের সরকারি অফিসার
• গ্রুপ-সি এবং তার নীচের পদের সহকারী
• পর্যায়ক্রমে দফতরে ২৫% কর্মীর হাজিরা
• চটকলে ১৫% কর্মী এক দিন অন্তর
• ইটভাটায় ১৫% কর্মীকে কাজের অনুমতি
• একশো দিনের কাজে ৫০% শ্রমিক
• চা বাগানে ২৫% কর্মী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে
• ফুলবাজার খোলা
• মিষ্টির দোকান সকাল ৮টা-বিকেল ৪টে পর্যন্ত
• ডাক্তারখানা, বাজার, ওষুধ, অত্যাবশ্যক পণ্যের দোকান খোলা
• কৃষিকাজ করা যাবে
• গ্রামীণ এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট বা ক্লাস্টারে কাজ শুরু করতে চাইলে বিবেচনা
• অঙ্গনওয়াড়ি, মিড-ডে মিলে খাদ্যসামগ্রী বিলি
• অত্যাবশ্যক পণ্যে হোম ডেলিভারি
• গ্রামে গিয়ে বোরো ধান কেনার শিবির
• জনস্বাস্থ্য কারিগরি, সেচ, রাস্তার কাজ, পুকুর খননের কাজ শুরু
• রেশন পরিষেবা
• লকডাউন বিধি এবং প্রোটোকল প্রযোজ্য

শনিবারই রাজ্য জানিয়েছিল, ‘কন্টেনমেন্ট’ এলাকায় ব্যারিকেড করা, জরুরি পণ্য পৌঁছে দেওয়া-সহ ১০০ শতাংশ পরিকল্পনা করেই কাজ শুরু করা হচ্ছে। ফলে আজ, সোমবার অন্যত্র কিছু কিছু নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হলেও ‘কন্টেনমেন্ট’ লকডাউন বিধির কঠোর প্রয়োগ হবে৷

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, ‘হটস্পট’ চিহ্নিত জেলাগুলির মধ্যে ‘কন্টেনমেন্ট’-এর জন্য শনাক্ত এলাকা আপাতত সিল করা হচ্ছে। হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনার কিছু অংশকে ‘কন্টেনমেন্ট’ করা হয়েছে। সেখানে বাড়ি থেকে মানুষকে যাতে না বেরোতে হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। সরকারি ভাবে মুখ খুলতে না চাইলেও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, জেলা প্রতি দু’জন করে নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের এক জন খাদ্যসামগ্রী সংক্রান্ত চাহিদা দেখভাল করবেন। অন্য জন বাকি জরুরি পরিষেবার চাহিদা মেটাবেন। 

প্রশাসন সূত্রে খবর, ‘কন্টেনমেন্ট’ এলাকার বাসিন্দারা প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট জেলার কন্ট্রোলরুম নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় ভাবে পাওয়া সেই চাহিদা-বার্তা সংশ্লিষ্ট নোডাল অফিসারকে জানিয়ে দেওয়া হবে। তিনি জরুরি জিনিসপত্র স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশের মাধ্যমে পৌঁছে দেবেন। অনলাইনে কেউ অভিযোগ জানালে সেই তথ্য নবান্ন ছাড়াও জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যাবে। অভিযোগের নিষ্পত্তি করার পরে সংশ্লিষ্ট জেলা বা প্রশাসন অনলাইনেই সেই তথ্য জমা করবে।

এ দিকে দেশ জুড়ে রোজ যেখানে গড়ে হাজারখানেক লোক সংক্রমিত হচ্ছেন, তখন আংশিক ছাড় চালু করার পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে শনিবার বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার পর মন্ত্রক জানায়, হটস্পট এলাকার বাইরে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে অর্থনৈতিক কাজকর্ম খানিকটা শুরু করতে হবে। তার জন্য কোথাও যদি শ্রমিকদের অন্য জায়গা থেকে আনতে বা পাঠাতে হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে জেলাশাসককে। শ্রমিকদের যাতায়াত কেবলমাত্র রাজ্যের মধ্যেই হবে এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পসংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে জেলা প্রশাসনকে। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here