দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকায় তবলিঘি জামাত গোষ্ঠীর সদর দপ্তর, মরকজ নিজামুদ্দিন ভবনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ২৪জনের শরীরে কোভিড–১৯ পজিটিভ ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার একথা জানিয়েছেন দিল্লি সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। ইতিমধ্যেই মসজিদ সিল করে দেওয়া হয়েছে।
অন্ধ্র প্রদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর সূত্রে খবর, ওই অনুষ্ঠান থেকে ফেরা ১৭জনের শরীরেও কোভিড–১৯ পজিটিভ ধরা পড়েছে। সোমবার রাত ৯টা নাগাদ তাঁদের সোয়্যাব পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন অনন্তপুর জেলা, একজন করে কৃষ্ণা জেলা এবং পূর্ব গোদাবরী জেলার বাসিন্দা, আটজন প্রকাশম জেলা এবং পাঁচজন গুন্টুর জেলার বাসিন্দা।
এপর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, কোভিড–১৯–এ মোট মৃত ৪৬জন এবং আক্রান্ত ১৩৫০জন। মঙ্গলবার তেলঙ্গানায় ছয়জন এবং শ্রীনগরে একজন মারা যান। দিল্লিতে আক্রান্ত ৯৭জনের মধ্যে মৃত দুজন। যদিও বেসরকারি মতে এপর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১৪১৭জন।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গত সোমবার থেকে দেশে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাই তাতে সায় দিয়েছিলেন। তার মধ্যেও গত ১৩–১৫ তারিখ মরকজ নিজামুদ্দিন ভবন নামে ১০০ বছরের পুরনো ওই মসজিদ চত্বরে তবলিঘি জামাত সম্প্রদায় দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। ওই মসজিদ চত্বরে একটা ছয়তলা ডর্মিটরি আছে। সেখানেই এতোদিন ছিলেন কমপক্ষে ২০০০ মানুষ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ২৮০জন বিদেশিও।
সত্যেন্দ্র এদিন বলেছেন, ‘‌নির্দিষ্ট সংখ্যা না জানলেও কমপক্ষে ১৩০০–১৭০০ মানুষ ওই মরকজ ভবনে ছিলেন। প্রত্যেকের স্ক্রিনিং হয়েছে। এপর্যন্ত ১০৩৩জনকে সরানো হয়েছে সেখান থেকে। ৩৩৪জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং ৭০০জনকে কোয়ারানটাইন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এপর্যন্ত মোট পজিটিভ ২৪জন।’‌ দিল্লিতে এখন বিপর্যয় আইন এবং সংক্রামক রোগ আইন জারি রয়েছে। পাঁচজনের বেশি একজায়গায় জমায়েত হওয়া অবৈধ। তা সত্ত্বেও এধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে চিঠি লিখেছেন সত্যেন্দ্র। উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করতে নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি সরকার, জানালেন সত্যেন্দ্র।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবিষয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। তারপরই দিল্লি সরকারের তরফেও বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, মরকজ নিজামুদ্দিন করোনাভাইরাস লকডাউনের শর্ত লঙ্ঘন করেছে এবং এখন সেখানে প্রচুর মানুষ পজিটিভ ধরা পড়েছেন। অবহেলার অভিযোগে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মরকজ নিজামুদ্দিনের মৌলানার বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করতে দিল্লি পুলিশকে বলেছে দিল্লি সরকার।
যদিও নিজেদের সাফাইয়ে মরকজ নিজামুদ্দিন মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রধানমন্ত্রী জনতা কার্ফু ঘোষণা করার পরই তারা অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছিল। কিন্তু তারপর প্রথমে দিল্লি সরকার এবং তারপর কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউন ঘোষণা করে দেওয়ায় এবং গণ পরিবহন থমকে যাওয়ায় ভক্তরা ফিরতে পারেননি। তবে লকডাউন ঘোষণার অনেক আগে থেকেই যে দিল্লি সরকার কোনওরকম ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জমায়েত সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বলেছিল, সেকথাও স্বীকার করেছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here