দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশজুড়ে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই পরিস্থিতিতে সবাইকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুব জরুরি কাজ ছাড়া কেউ যেন না বের হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখছে পুলিশ। কিন্তু তারমধ্যেই দেখা গেল কাঁধে ১০ মাসের ছোট্ট ছেলে ও পাশে স্ত্রী ও আরও দুই সন্তানকে নিয়ে হেঁটে আসছেন এক যুবক। গ্রামে ফিরছেন তাঁরা। যাতায়াতের কিছু নেই। তাই দু’দিন ধরে হেঁটে চলেছেন তাঁরা।

এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে দিল্লিতে। বান্টি নামের ওই যুবক দিল্লিতে মজুরের কাজ করেন। এই পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ। দিন আনি দিন খাইয়ের পরিবারের কাছে না আছে টাকা, না খাবার। আর তাই লকডাউনের মধ্যেই গ্রামে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। রাস্তায় গাড়ি না থাকায় পায়ে হেঁটেই গ্রামে ফিরছেন তাঁরা। বান্টির মতো বেশ কিছু পরিবারই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমের সামনে ছেলেকে কাঁধে নিয়েই বান্টি বলেন, “আমার গ্রাম দিল্লি থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে। আমরা এখানে কী খাব? পাথর খেয়ে তো বাঁচতে পারব না। তাই গ্রামে ফিরছি। ওখানে হয়তো রুটি নিয়েও সবার মধ্যে মারামারি হচ্ছে। কিন্তু শান্তি তো আছে। কিন্তু এখানে আমাদের জন্য কিচ্ছু নেই।” স্বামীর কথায় সায় দেন পাশে নীল রংয়ের একটা ব্যাগ মাথায় নিয়ে থাকা স্ত্রী।


গ্রামে ফেরার ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দু’দিন সময় লেগেছে তাঁদের। এতটা পথ হেঁটে ক্লান্ত তাঁদের আরও দুই সন্তান। কিন্তু মায়ের হাত ধরে নির্বিকারে হেঁটে চলেছে তারা। এই দু’দিন সেরকম খাবার কিছুই জোটেনি তাঁদের। খালি জল খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন। গ্রামে ফিরে খেতে পাবেন, সেই বিশ্বাস নিয়েই এগোচ্ছে এই পরিবার।

যদিও এরমধ্যে জানা গিয়েছে, আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করতে চলেছে মোদী সরকার। সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মোদী সরকার অন্তত দেড় লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে। এর আগে গত সোমবার এক প্রস্ত ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, বড় আর্থিক প্যাকেজ শিগগির ঘোষণা হবে।


বুধবার নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র বারাণসীর মানুষদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার সময় মোদী আবেদন করেছেন, যাঁদের সামর্থ্য আছে তাঁরা যেন এই ২১ দিন ন’টি পরিবারকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নেন। এটাই হবে প্রকৃত অর্থ নবরাত্রি। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাও দলের এক কোটি সদস্যকে বলেছেন পাঁচজন করে মানুষকে খাওয়াতে। তাহলে এই ২১ দিন ধরে অন্তত ৫ কোটি মানুষের খাওয়ার সমস্যা থাকবে না। কিন্তু সেইসব হওয়ার আগেই দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে শান্তিতে থাকতে লকডাউনের মধ্যেই বাড়ি ফিরতে দেখা যাচ্ছে বান্টির মতো একাধিক পরিবারকে।


শুধু বান্টিই নয়, লকডাউনে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন সারা দেশের দিনমজুর, ভাগচাষি, চা শ্রমিকদের মতো মানুষরা যাঁদের রোজগার প্রতিদিনের পারিশ্রমিকের উপরই নির্ভরশীল। সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কাজ হারিয়েছেন এই সব মানুষরা। কবে এই সমস্যা মিটবে সেই দিশা দিতে পারছে না সরকার। আর এই সব দরিদ্রদের পক্ষে টানা ২১ দিনের খাবার, ওষুধ মজুত করার সামর্থ্যও নেই।

বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, কেন্দ্রের অনেক আগেই উচিত ছিল দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে প্রথম থেকেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া। কারণ ইওরোপ বা চীনের মতো অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ভারতে যেহেতু গরিব মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি, সেহেতু তাঁদের বিষয়ে সবার আগে প্রাধান্য দেওয়া উচিত ছিল কেন্দ্রের। যা কার্যত এড়িয়ে গিয়েছে মোদি সরকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here