দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ তিন স্তরের ট্রায়ালের পরে ক্যানসিনো বায়োফার্মাসিউটিক্যালকে টিকার স্বত্ত্ব দিল চিনের সরকার।

টিকার দৌড়ে চিনে হাড্ডাহাড্ডি প্রযোতিযোগিতা সিনোফার্ম ও ক্যানসিনো বায়োফার্মার। সিনোফার্মও তিন স্তরের ট্রায়ালে এগিয়ে। অন্যদিকে, ক্যানসিনো দেশের বাইরেও টিকার ট্রায়াল চালাচ্ছে। এই মুহূর্তে সৌদি আরবে ক্যানসিনো বায়াফার্মের তৈরি ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। চিনেও সেনা ক্যাম্পে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হচ্ছে।

চিনের সরকারি মুখপত্র পিপল’স ডেইলি জানিয়েছে, ক্যানসিনো বায়োফার্মের তৈরি ভ্যাকসিনকে পেটেন্ট দিয়েছে সরকার। খুব তাড়াতাড়ি এই ভ্যাকসিন চলে আসবে দেশের বাজারে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির মতো ভেক্টর ভ্যাকসিন তৈরি করেছে চিনের ক্যানসিনো। সর্দি-কাশির ভাইরাস অ্যাডেনোভাইরাসের নিষ্ক্রিয় স্ট্রেন থেকে ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়েছে। এই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের নাম Ad5-nCoV। ক্যানসিনোর ভাইরোলজিস্টরা জানিয়েছেন, করোনার স্পাইক (S)প্রোটিন নিষ্ক্রিয় করে অ্যাডেনোভাইরাসের স্ট্রেনের সঙ্গে মিলিয়ে ভেক্টর ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। 

যেহেতু অ্যাডেনোভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা সার্স-কভ-২ ভাইরাসের মতো নয়, তার উপর ভাইরাল স্ট্রেনকে আগে থেকেই দুর্বল করে ফেলা হয়েছে তাই এই টিকা শরীরে ঢুকলে কোনও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। নিষ্ক্রিয় ভাইরাল স্ট্রেন প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বাড়তে পারবে না। বরং বি-কোষকে সক্রিয় করে রক্তরস বা প্লাজমায় অ্যান্টিবডি তৈরি করবে।

চিনের সেনা হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চেন ওয়েইয়ের দাবি, Ad5-nCoV ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের তিন স্তরের ট্রায়ালেই ভাল ফল দেখা গেছে। তাঁর দাবি, এই ভ্যাকসিনের প্রভাবে শরীরে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ‘অ্যাডভার্স সাইড এফেক্টস’ দেখা যায়নি। প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরে যাদের টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। সৌদি আরবে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে কয়েক হাজারজনকে ক্যানসিনোর তৈরি টিকা দেওয়া হচ্ছে। রাশিয়া, ব্রাজিল ও চিলিতেও এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।

অন্যদিকে, টিকার দৌড়ে এগিয়ে সিনোফার্মও। কিছুদিন আগেই ‘জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (JAMA)-তে টিকার প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে এনেছে সিনোফার্ম। সেই রিপোর্টে চিনের ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট দাবি করেছে, এই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে নিরাপদ ও সুরক্ষিত। প্রথম পর্যায়ে ৯৬ জনকে অল্প ডোজে টিকা ইনজেক্ট করা হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২২৪ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছিল। ওই পর্যায়ের ডোজের পরিমাণ সামান্য বাড়ানো হয়।

এতদিন পর্যবেক্ষণে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তাঁদের প্রত্যেকের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখা গেছে, টিকার ডোজে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, টি-কোষও সক্রিয় হয়েছে। এই টি-কোষ হল শরীরের প্রতিরক্ষার মূল অস্ত্র। গোটা ইমিউন সিস্টেমকে চালনা করে এই টি-কোষ বা টি-লিম্ফোসাইট কোষ। শরীরে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা প্যাথোজেন ঢুকলে তার মোকাবিলায় টি-কোষ শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে তোলে।

ফলে শরীরে ঢুকে আসা ভাইরাল অ্যান্টিজেনকে আটকাতে একটা সুরক্ষা বলয় তৈরি হয়। যে কোনও ভ্যাকসিন গবেষণার মূল লক্ষ্যই থাকে বি-কোষ ও টি-কোষকে অ্যাকটিভ করে এই সুরক্ষা বলয় তৈরি করা। সিনোফার্ম দাবি করেছে, তাদের তৈরি ভ্যাকসিন ঠিক এই কাজটাই করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here