দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাফাল ফাইটার জেট নির্মাতা সংস্থা ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি হয়েছিল ভারতের। তার মধ্যে প্রথম দফায় পাঁচটি রাফাল চলে এসেছে দেশে। কিন্তু রাফাল নির্মাতা দাসো চুক্তির শর্ত পুরোপুরি পালন করেনি বলে এবার অভিযোগ তুলল দেশের কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)।

বুধবার সংসদের বাদল অধিবেশনে সিএজি-র তরফে জানানো হয়, দাসো অ্যাভিয়েশন ও এমবিডিএ চুক্তি করেছিল রাফাল যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তি দিয়েও সাহায্য করবে ভারতের প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনকে (ডিআরডিও)। কিন্তু সেই চুক্তির শর্ত তারা পালন করেনি।

সিএজি-র অভিযোগ, ২০১৫ সালে ৩৬ টি রাফাল কেনার প্রস্তাব দেওয়ার সময় দাসো বলেছিল তাদের উন্নত প্রযুক্তির ৩০ শতাংশ তারা ডিআরডিও-র হাতে তুলে দেবে। যুদ্ধান্ত্র তৈরির প্রযুক্তি, উন্নত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত সুবিধা দিয়ে নানা সময় ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থাকে সাহায্য করবে। কিন্তু রাফাল চুক্তির পরে তাদের আর সেই দায়বদ্ধতা দেখা যাচ্ছে না।

২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ফরাসি সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন ও এমবিডিএ ফ্রান্সের সঙ্গে ৫৮ হাজার ৮৯১ কোটি টাকার বিনিময়ে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই রাফাল চুক্তিতে অনীল আম্বানির সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। রাফাল-চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী।

রাফাল-চুক্তি প্রসঙ্গে সিএজি তার রিপোর্টে বলেছেন, সব বিদেশি সংস্থাই চুক্তি করার সময় নানা রকম প্রস্তাব দিয়ে থাকে। দেশীয় সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার আগে তাদের প্রযুক্তি ও উন্নত সংস্করণ নিয়ে নানারকম আলোচনা করে। কিন্তু একবার চুক্তি হয়ে গেলে তারা আর সে বিষয়ে বিশেষ দায়বদ্ধতা দেখায় না। দাসো অ্যাভিয়েশনও সেই পথেই হাঁটছে বলে অভিযোগ সিএজি-র। ডিআরডিও তাদের তৈরি লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্টের জন্য কাবেরী ইঞ্জিন তৈরির ব্যাপারে প্রযুক্তিগত সাহায্য চেয়েছিল দাসোর কাছে। 

কিন্তু এখনও অবধি সেই টেকনোলজি ভারতকে দেয়নি ফরাসি যুদ্ধবিমান নির্মাতা সংস্থা। সিএজি-র দাবি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আরও একবার সেই চুক্তির শর্ত মিলিয়ে দেখুক। কীভাবে বিদেশি সংস্থা তাদের দায় এড়াচ্ছে সেটা বিবেচনা করা দরকার।

চিন-ভারত সীমান্ত সংঘাতের আবহেই ভারতীয় বায়ুসেনার অন্তর্ভুক্ত হল পাঁচ রাফাল যুদ্ধবিমান। গত ২৯ জুলাই ফ্রান্স থেকে সাত হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভারতের মাটি ছুঁয়েছিল পাঁচ যুদ্ধবিমান। এতদিন আম্বালা এয়ারবেসের ১৭ নম্বর গোল্ডেন অ্যারো স্কোয়াড্রনেই রাখা হয়েছিল ফাইটারজেটগুলিকে। সম্প্রতি পাঁচ রাফালকে আনুষ্ঠানিকভাবে বায়ুসেনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। উপস্থিত ছিলেন ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লে, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত, ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আর কে এস ভাদোরিয়া এবং প্রতিরক্ষা সচিব অজয় কুমার।  ভারতে ফরাসি রাষ্ট্রদূত এমানুয়েল লেনায়েন ও ফরাসি এয়ার জেনারেল এরিক অটলে এবং দাসো অ্যাভিয়েশনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। এই পাঁচ রাফালকে লাদাখ সীমান্তে পাঠানোর তোড়জোড় চলছে। পাহাড়ি এলাকায় রাতের বেলা নজরদারি চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রাফাল যুদ্ধবিমান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here