WB Covid: ফের করোনার থাবা! রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ পেরোল ১ হাজারের গণ্ডি, কলকাতায় আক্রান্ত ৫০০-র বেশি

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা আক্রান্ত কলকাতা পুরসভার বরো চেয়ারম্যান সাধনা বসু। গতকাল, মঙ্গলবার মেয়র এবং মেয়র পারিষদ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ৪ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সাধনা। জানা গেছে, বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। করোনা পজেটিভ বরানগরের বিধায়ক তাপস রায়। কলকাতা পুরসভার এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরও আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন পুর-কর্মীর জ্বর এসেছে বলে খবর।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সাধনা বসুর আশেপাশে যাঁরা বসেছিলেন, তাঁদের নিজেদের খেয়াল রাখতে বলেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম । প্রয়োজনে টেস্ট করিয়ে নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাঁদের যাঁদের শরীরে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তাঁদের প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে।

মঙ্গলবার কলকাতার মেয়র হিসেবে শপথ নেন ফিরহাদ হাকিম। শপথ গ্রহণ পর্বে ছিল ঠাসা ভিড়। অধিংকাংশের মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক। শারীরিক দূরত্ববিধিও চোখে পড়েনি। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, অনেকেই আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন। সামনের সারিতে ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়, তাপস রায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যেরা। তবে তিনি সুস্থ আছেন বলে জানাগিয়েছে তৃণমূল সূত্রে৷।

এই পরিস্থিতিতে সবথেকে বেশি প্রয়োজন পুরভবন স্যানিটাইজ করা। কারণ, শপথের পর কোভিড আক্রান্তের সংস্পর্শে হয়ত অনেকেই এসেছেন। তারপর তাঁদের কেউই যে পুরভবনে আসেননি, তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। সাংবাদিকরাও ছিলেন। কিন্তু সূত্রে পাওয়া খবরে এখনও গোটা পুরভবন স্যানিটাইজ করা হয়নি। এবিষয়ে পুরসভার কোনও বক্তব্য মেলেনি।সোমবার ৪৩৯, মঙ্গলে ৭৫২, বুধে একলাফে রাজ্যে নতুন সংক্রমণ ১০৮৯, কলকাতায় ৫৪০৷

সোমবার ৪৩৯, মঙ্গলে ৭৫২, বুধে একলাফে রাজ্যে নতুন সংক্রমণ ১০৮৯, কলকাতায় ৫৪০৷

অর্থাৎ রাজ্যে ফের করোনার দাপট।
দৈনিক সংক্রমণ পেরোল এক হাজারের গণ্ডি। একদিনে আক্রান্ত ১ হাজার ৮৯ জন। যা মঙ্গলবারের থেকে অনেকটাই বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। সোমবার রাজ্যে সংক্রমিত হয়েছিলেন ৪৩৯ জন। কিন্তু বুধবারের বুলেটিন অনুযায়ী সংক্রমণ সংখ্যা বাড়ল প্রায় আড়াই গুণ। বুধবার রাজ্যের বুলেটিন অনুযায়ী, কলকাতাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪০ জন। মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৮০৭ জন। আক্রান্তের সংখ্যা সুস্থতার সংখ্যার চেয়ে অনেকটাই বেশি হওয়ায় বাড়ল অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা। রাজ্যে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ হাজার ৭২৭। গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় করো না পরীক্ষা হয়েছে ৩৮ হাজার ৩৭৫ জনের। যতই পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে ততই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।

এদিকে রাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে কড়া বিধিনিষেধের ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গঙ্গাসাগরে প্রশাসনিক বৈঠকে কলকাতায়ও প্রয়োজনে কনটেনমেন্ট জোন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। দৈনিক সংক্রমণ কয়েকদিনে এইভাবে বাড়ায় উদ্বেগ বাড়ছে।

ইংরেজি নতুন বছরের আগে করোনার নতুন রূপ ওমিক্রন যে সংক্রমণের গতিকে দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে, সে সতর্কবার্তা দিয়েছিল স্বাস্থ্য মহল। তা সত্ত্বেও শহর জুড়ে করোনাবিধির পরোয়া না করেই বড়দিন উদ্‌যাপনে রাস্তায় নেমেছিলেন মানুষজন। মাস্কহীনদের ভিড়ে অশনি সঙ্কেত দেখেছিলেন চিকিৎসকেরা। বুধবার সন্ধ্যায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিনে সেই আশঙ্কাই যেন প্রতিফলিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের ১ হাজার ৮৯ জন বাসিন্দার মধ্যে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যা দিল্লিতে নতুন আক্রান্তের (৯২৩) থেকেও বেশি।

ঘটনাচক্রে, করোনার সংক্রমণ রুখতে রাজ্য সরকার ফের কড়াকড়ির পথে যেতে পারে বলে বুধবারই ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরে ফের কন্টেনমেন্ট জোন চিহ্নিত করা বা লোকাল ট্রেনের সংখ্যা কমানোর মতো পদক্ষেপ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। এমনকি, স্কুল-কলেজ বন্ধ করা বা অফিসের কর্মী সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে কাজ চালানো হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

২৪ ঘণ্টায় কলকাতা লাগোয়া জেলাগুলিতেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। উত্তর ২৪ পরগনায় নতুন আক্রান্ত ১৪৫ জন। হাওড়ায় ৭৯, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৬০, হুগলিতে ৫৯ জন কোভিড রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানে আক্রান্ত আরও ৪৭ জন। অন্যান্য জেলাও কমবেশি সংক্রমণ ছড়িয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিলে দৈনিক সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে বাড়তে ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১৪ মে তা বেড়ে ২০ হাজার ৮৪৬-এ পৌঁছেছিল। পরে তা কমলেও দুর্গাপুজোর পর থেকে ফের সংক্রমণ বাড়তে থাকে। তবে ডিসেম্বরের গোড়া থেকে দৈনিক সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমছিল। সোমবার তা ছিল ৪৩৯। মঙ্গলবার সংক্রমণ ৭৫২ হয়েছিল। বুধবারের সংক্রমণের সংখ্যা ফের উদ্বেগ বাড়াল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here