দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা সংক্রমণ লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে বাংলায়। কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বেড়ে চলেছে তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওমিক্রন পজিটিভ রোগীর সংখ্যা। এ রাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ছয়, যার মধ্যে কলকাতা মেডিক্যালের এক ডাক্তারের বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস ছিল না। এখন ৬ থেকে এক লাফে রাজ্যে ওমিক্রন রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ ছাড়াই ওমিক্রন সংক্রমিত চার। রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি দেখে চিন্তার পারদ সপ্তমে চড়েছে। উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক প্রশাসনিক বৈঠক থেকেও ঘোষণা করেছেন, কোভিড বাড়লে ফের স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। কমতে পারে লোকাল ট্রেনও।

ওমিক্রন যখন মাথা তুলছে তখন বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে স্কুলের ব্যাপারে আরও তীব্র নজরদারি চালাতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন রাজ্য সরকারের শীর্ষ আধিকারিকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্কুল, কলেজে পড়ুয়াদের মধ্যে কোভিড ছড়াচ্ছে কি না খেয়াল রাখো। যদি কোভিড হয় তাহলে আবার আমাদের কিছু দিনের জন্য ছুটি দিয়ে দিতে হবে।

শুধু তাই নয়। আন্তর্জাতিক বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রেও কী করা যায় সে ব্যাপারে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে দেখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে এও বলেন, কলকাতার কোথাও যদি কন্টেইনমেন্ট জোন তৈরি করতে হয় তাহলে তাই করতে হবে।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাস্থ্য সচিব জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় টিকাকরণের কাজ খুব ভাল ভাবে হলেও সারা রাজ্যের ৪০ শতাংশ মানুষ এখনও কোভিড টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাননি। এই তথ্য শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেমদ্রকে বলো সেকেন্ড স্টার দিতে। তারপর তো বুস্টার দেবে। সেকেন্ড ডোজ দেয়নি আবার বুস্টার ডোজ দেবে বলছে।”

লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রেও বিধি আরোপ করা যায় কি না তা নিয়েও ভাবনাচিন্তার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেটা এখনই নয়। গঙ্গাসাগর মিটে গেলে তারপর।

দেশজুড়েই ফণা তুলেছে ওমিক্রন। দেশে ওমিক্রন রোগীর সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। এ রাজ্যেও ওমিক্রন-ভীতি চরমে। বুধবার এক লাফে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ১১। সেই সঙ্গে দৈনিক সংক্রমণও সাঙ্ঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, নতুন ওমিক্রন পজিটিভ রোগীর সংখ্যা পাঁচ। বিদেশ না গিয়েও সংক্রমিত চার। এদের মধ্যে ২ জন কলকাতার ও বাকি ২ জন হাওড়া ও দমদমের বাসিন্দা।

কলকাতায় এখনও অবধি ওমিক্রন রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ জনে।ব্রিটেন ও নাইজেরিয়া ফেরত কলকাতার দুই বাসিন্দার শরীরে ওমিক্রন ধরা পড়েছিল আগেই। গতকাল  ডাবলিন ফেরত ২৭ বছরের এক যুবকের নমুনা পরীক্ষায় ওমিক্রন ধরা পড়ে। ডাবলিন থেকে বিমানে ওঠার আগে কোভিড টেস্ট করিয়েছিলেন ওই যুবক। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

এরপর ডাবলিন থেকে ম্যানচেস্টার, আবুধাবি ও দিল্লি হয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন তিনি। জানা গেছে, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো হাল্কা উপসর্গ তাঁর ছিলই। কলকাতায় ফেরার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনা পরীক্ষার রিপোর্টও পজিটিভ আসে। এরপর জিনোম সিকুয়েন্স করিয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের হদিশ মেলে। আজ আরও দু’জনের শরীরে ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের খোঁজ মিলেছে করোনাও বেলাগাম রাজ্যে। দৈনিক সংক্রমণ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণের হার এবং ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আজ থেকেই দিল্লিতে স্কুল, কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ এবার একই পথে হাঁটতে পারে এ রাজ্যও৷ তবে শুধু স্কুল, কলেজ নয়, এ দিন রাজ্যের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here