দেশের সময়: –এ রাজ্যের শাসক দলের অত্যন্ত পছন্দের আইপিএস অফিসার রাজীবকুমারকে নিয়ে রীতিমতো টানাপোড়েন শুরু হয়েছে,সিবিআই ও রাজ্য সরকারের মধ্যে।হাইকোর্ট রাজীবকুমারের উপর থেকে গ্রাপ্তার এড়ানোর রক্ষাকবজ তুলে নেওয়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন এই দুঁদে আইপিএস।তাঁকে নাকি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,তিনি নাকি একেবারে বেপাত্তা।সিবিআই অফিসাররা এমনকী রাজ্য প্রশাসনের সদর দপ্তর নবান্নে গিয়েও কোন হদিশ পান নি রাজীবুমারের।রাজ্য পুলিশের ডিজি,মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি দিয়েও নাকি রাজীবকুমারের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

অথচ মজার বিষয় কাগজে কলমে রাজীবকুমার এখনও রাজ্য পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক হিসেবে বহাল রয়েছেন।এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে তখনও পর্যন্ত রাজীবকুমার নিরুদ্দেশ।এখন প্রশ্ন হল একজন সরকারি আধিকারিক কি এভাবে গা ঢাকা দিতে পারেন,কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার জেরা এড়িয়ে যেতে পারেন?এটাই যদি একজন সাধারণ ব্যক্তি করতেন তবে হয়তো তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে যে কোন উপায়ে তাকে ধরার আদেশ বেড়িয়ে যেত।

তবে কী এটাই মানতে হবে এদেশে আইন সবার জন্য সমান নয়.প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের মত করে আইনকে ব্যবহার করতে পারেন।অন্তত রাজীবকুমার যে ভাবে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন তাতে এই আশঙ্কা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।নবান্নও এখনও পর্যন্ত রাজীবকুমারের গতি বিধি নিয়ে কোন হদিশ দিতে পারে নি,তারা নাকি জানেন না রাজীবকুমার কোথায়।তাহলে তো অনিবার্যভাবে যে প্রশ্নটা ওঠে তা হল একজন নিরুদ্দেশ ব্যক্তিকে কোন যুক্তিতে নবান্ন গুরুত্বপুর্ণ সরকারি পদে বহাল রেখেছে এখনও?

আর এই প্র্শ্নের উত্তরের মধ্যেই রয়েছে সব রহস্যের সামাধান।আসল কথা হল খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব কাছের লোক হওয়ায় রাজীবকুমার বার বার সিবিআইয়ের ডাককে উপেক্ষা করার সাহস দেখিয়েছেন।কয়েক মাস আগে রাজীবকুমারের বাড়িতে গিয়ে সিবিআই অফিসারদের যেভাবে হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছিল,গোটা ভারতবর্ষে তার দ্বিতীয় কোন উদাহরণ নেই।

তবুও সিবিআই কিছু করতে পারেনি,কারণ সিবিআই যেমন কোন রাজনৈতিক শক্তির অঙ্গুলি হেলনে নিয়ন্ত্রিত হয়,তেমনি রাজীবকুমারও আসলে মমতার হাতের পুতুল হয়েই কাজ করে যাচ্ছিলেন।সারদা তদন্ত মমতা চেয়েছিলেন নিজের মত করে ধামাচাপা দেবেন।আর সেই জন্যই রাজীবকুমারের মত বংশবদ অফিসারদের দিয়ে গুটি সাজিয়েছিলেন তিনি।

শোনা যাচ্ছে অনেক নথিই নাকি আগেই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে রাজীবকুমারদের সৌজন্যে।এরই মধ্যে লোকসভা ভোটের পর এ রাজ্যে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি হতে সিবিআই আবার নতুন উদ্যমে সারদা তদন্ত শুরু করেছে।তাই রাজীবকুমারকে আবার হেপাজতে নেওয়ার প্রয়াস শুরু করেছে সিবিআই।

এই নতুন প্রয়াসেই একটা নতুন খবর বাজারে চলে এসেছে,সূত্র বলছে রাজীবকুমার আছে রাজ্য সরকারের নজরদারিতেই রাজ্য সরকার চাইলে রাজীবকে এখনই সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে পারে কিন্তু রাজ্য সরাকার তথা মুখ্যমন্ত্রী নাকি বিষয়টি নিয়ে বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে আগ্রহী।

আর এখান থেকেই একটা প্র্শ্ন উঠে আসছে তবে কি রাজীবকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন মমতা?একাধিক সূত্র মারফত যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তা কিন্তু রাজীবের পক্ষে খুব সুখকর নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।সারদা তদন্তে মমতা যে কোন ভাবেই এখন নিজেকে ও তাঁর ভাইপোকে রক্ষা করতে চাইছেন বলে খবর।

রাজীব যে ভাবে তদন্ত চালিযেছেন তা যে আইনের দিক থেকে ঠিক নয় তা বুঝতে কারোর বাকি নেই,তাই সব দায় রাজীবের উপর দিয়ে যদি নিজের সরকার ও তাঁর নিকটজনদের বাঁচানো যায় তার প্রয়াস করছেন মমতা এমনটাই খবর।এই খবরের সত্যতা কিছু হলেও পরিলক্ষিত হয়,যখন মমতা তড়িঘড়ি দিল্লিতে গিয়ে মোদী ও অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করে একান্ত বৈঠকে বসেন।

মুখে বলছেন বটে যে সরাকারি কথা হচ্ছে কিন্তু প্রশ্ন উঠছেই যে মমতা এর আগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি মিটিং এ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান নি তিনি আচমকা এভাবে এইসময় কেন দিল্লিতে উড়ে গেলেন?কেউ কেউ বলছেন রাজীবকুমারকে সিবিআইয়ের হেপাজতে দিয়ে সারদা মামলার জাল গুটিয়ে ফেলার একটা ছক মমতার মাথায় আছে।

এখন সেটা বিজেপি মানবে কিনা তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে।তাছাড়া রাজীবকুমারকে বলির পাঠা করলে রাজীবও কী চুপচাপ সব হজম করে নেবে?আর এখানেই কেউ কেউ বলছেন অনেক বড় রাজনৈতিক খেলা হতে যাচ্ছে।এমনটাও হতে পারে রাজীবকে মানিয়ে আপাতাত সিবিআইয়ের কাছে তাঁকে জেরার জন্য পাঠানো হবে,তদন্তে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে,বিনিময়ে আপাতাত গ্রেপ্তারের থেকে নিস্তার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করা হবে।যদি দেখা যায় অবস্থা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না তবে রাজীবকে হয়তো শেষ বেলায় ঝেড়ে ফেলা হবে।

তবে আপাতাত যা হবে সব বোঝাপড়ার মাধ্যেমেই হবে,সেই বোঝাপড়াটা কতটা এগুলো বোঝা যাবে কিছুদিনের মধ্যেই,মমতা দিল্লি থেকে ফারার পরেই।বিজেপি বা তৃমমূল কেউই কিন্তু সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত নিয়ে চিন্তিত নয় যে যার মত করে রাজনৈতিক ফায়দা ও ড্যামেজ কন্ট্রোলের অংক কষছে।মানুষের প্রাপ্তিটা কিন্তু শূণ্যই থাকবে।

এখন দেখার রাজীবকুমারকে নিয়ে মমতার এই নতুন বোঝাপড়ার খেলা শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়ায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here