দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সাড়ে ছ’ঘণ্টা বন্দি থাকার পরে রাজ্যপালের কনভয়ে অবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে পেরেছেন বাবুল সুপ্রিয়৷ ঘুর পথে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের গাড়ি করেই ক্যাম্পাস ছাড়েন তিনি৷ ক্যাম্পাস ছাড়তে পারেন রাজ্যপালও। আর এসবের মধ্যেই তৈরি হয়ে গেল নতুন প্রশ্ন। তুললেন খোদ রাজ্যপাল। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি সত্যই স্বাভাবিক?

এদিন কার্যত বিক্ষোভরত বামপন্থী পড়ুয়াদের চোখে ধুলো দিয়ে চার নম্বরের বদলে তিন নম্বর গেট দিয়ে বাবুল সুপ্রিয় ও রাজ্যপালের কনভয় বের করে পুলিশ৷ তবে সেটা দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ার পরে। স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে প্রশ্ন– রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান আটকে থাকার পরেও কেন এত সময় লাগল তৎপর হতে?

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করতে যাদবপুর ক্যাম্পাসে রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনখড়। তিনি ক্যাম্পাসে গিয়ে বাবুলকে গাড়িতে তুলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর রাস্তায় বসে পড়েন বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা। রাজ্যপালের সঙ্গে থাকা পুলিশ আধিকারিকরাও ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ছাত্রদের দাবি ছিল, বাবুল ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান থেকে সরবেন না। অন্য দিকে ক্যাম্পাসের চার নম্বর গেটের পাশে ছাত্র সংসদ কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে এবিভিপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

বাবুল ও রাজ্যপালকে ঘেরাও মুক্ত করার জন্য পড়ুয়াদের বোঝানোর চেষ্টা করেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা৷ কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি বলেই সূত্রের খবর৷ অবশেষে, কৌশলে রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশ৷ চার নম্বর গেটের দিকে যেতে যেতেই হঠাৎ তিন নম্বর গেটের দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়৷ আর ওই গেট দিয়েই বের করে দেওয়া হয় কনভয়কে৷

অন্য দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের সামনে কার্যত তাণ্ডব শুরু করে গেরুয়াপন্থী ছাত্র সংগঠন আখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)৷ রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় তারা৷ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়গোটা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর৷ মোতায়েন হয় পুলিশ বাহিনী৷ বিক্ষোভকারীদের থামাতে রাস্তায় নামে ব়্যাফ৷

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর অশান্তির পরে শুরু হল রাজনৈতিক লড়াই। এদিন সাড়ে ছ’ঘণ্টা বন্দি থাকার পরে রাজ্যপালের কনভয়ে অবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে পেরেছেন বাবুল সুপ্রিয়৷ ঘুর পথে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের গাড়ি করেই ক্যাম্পাস ছাড়েন তিনি৷ ক্যাম্পাস ছাড়তে পারেন রাজ্যপালও। আর এসবের মধ্যেই তৈরি হয়ে গেল নতুন প্রশ্ন। তুললেন খোদ রাজ্যপাল। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি সত্যই স্বাভাবিক?

এর জবাবে রাজ্য সরকারও অভিযোগ তুলল রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে। ‌শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারকে না জানিয়েই রাজ্যপাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন। এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও সরকারকে না জানিয়ে ওখানে যান। একই সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এও জানিয়েছেন যে, এদিন রাজ্যপাল রাজভবন ছাড়ার আগে সরকারকে কিছু না জানালেও রাস্তায় বেড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে বিষয়টি জানান। তখন মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে না যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু সেটা না শুনে রাজ্যপাল যাদবপুরে যান।

এদিন কার্যত বিক্ষোভরত বামপন্থী পড়ুয়াদের চোখে ধুলো দিয়ে চার নম্বরের বদলে তিন নম্বর গেট দিয়ে বাবুল সুপ্রিয় ও রাজ্যপালের কনভয় বের করে পুলিশ৷ তবে সেটা দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ার পরে। স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে প্রশ্ন– রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান আটকে থাকার পরেও কেন এত সময় লাগল তৎপর হতে?

এই প্রসঙ্গে সরকারের দাবি, পুলিশ প্রথম থেকেই ঘটনার উপরে নজর রাখছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে মজুত ছিল বাহিনী। কিন্তু উপাচার্যের অনুমতি না মেলায় ভিতরে ঢুকতে পারেনি। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চার নম্বর গেটের পাশে ছাত্র সংসদ কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে এবিভিপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার কেন নিন্দা করলেন না রাজ্যপাল জগদীশ ধনকড় তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷

এদিনবিকেল গড়িয়ে সন্ধে ও রাত হয়ে গেলেও উত্তেজনা এক ফোটাও কমেনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বরং, দফায় দফায় তা বেড়েই চলে। এরই মধ্যে চাপ নিতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস ও সহ-উপাচার্য প্রদীপ মিত্র। দু’জনকেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন দু’জনের অবস্থাই স্থিতিশীল। রক্তচাপ জনিত সমস্যা রয়েছে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পড়ুয়াও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে হেনস্থার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসেন যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস৷ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি৷ তবে ব্যর্থ হন৷ অভিযোগ, তাঁর পরামর্শ উপেক্ষা করেই বাবুলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বামপন্থী ছাত্ররা৷ কিল, চড় মারা হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে৷ পড়ুয়ারা দাবি তোলে ক্ষমা না চাইলে কোনও ভাবেই মন্ত্রীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে দেওয়া হবে না। জানা গিয়েছে, এই নিয়ে প্রচণ্ড ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস৷

কেবল বাবুল সুপ্রিয় নন, বুধবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের হেনস্থার মুখে পড়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনার তথা বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল৷ ঘটনার নিন্দা করে তিনি বলেন, ‘‘এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমিও পড়াশোনা করেছি৷ আজকের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দার৷ আমারও শাড়ি ধরে টানা হয়েছে, অকথ্য গালিগালাজ করা হয়েছে৷’’ বাবুলের বিরুদ্ধে পালটা মারধরের অভিযোগে সরব হয়েছে বামপন্থী ছাত্ররাও৷

ছবিগুলি তুলেছেন- কুন্তল চক্রবর্তী৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here