দেশেরসময় ওয়েবডেস্ক: আতঙ্কের প্রহর শেষ হল। বন্দিদশা থেকে মিলল মুক্তি। দেশে ফিরলেন সমুদ্রের বুকে জাহাজে আটকে পড়া ক্রু মেম্বার ও যাত্রী মিলিয়ে ১১৯ জন ভারতীয়। ফেরানো হল শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পেরু, দক্ষিণ আফ্রিকার আরও পাঁচজন যাত্রীকেও।
কথা ছিলই ফিরিয়ে আনা হবে। জাপানের ভারতীয় দূতাবাস আশ্বাসও দিয়েছিল। সেইমতো কাজও হল খুব তাড়াতাড়ি। জাপানের ইয়োকোহোমা বন্দরের কাছে প্রায় একমাস ধরে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেস থেকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে গতকালই রওনা দিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান।

দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছিল, যাঁদের আইসোলেশন কেবিনে রাখা হয়েছে তাঁরা ছাড়া বাকিদের ফিরিয়ে আনা হবে। সূত্রের খবর, যাত্রী ও ক্রু মেম্বার মিলিয়ে ১১৯ জন ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাঁদের কিছুদিন আইসোলেশন ইউনিটে রেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। তারপর বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
দু’সপ্তাহের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সমুদ্রের মাঝে আটকে রাখা হয়েছে ডায়মন্ড প্রিন্সেসকে। জাহাজের ভেতরে ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হুহু করে। রিপোর্ট বলছে, জাহাজের ৩,৭০০ যাত্রীর মধ্যে ৬৫০ জনই ভাইরাস আক্রান্ত। সংক্রমণ সন্দেহে আইসোলেশন কেবিনে রাখা হয়েছে আরও শতাধিক যাত্রীকে। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১৪।

জাহাজের ১৬০ জন ভারতীয় ক্রু মেম্বারদের মধ্যে তিনজনের সংক্রমণের কথা জানা গেছে। ইতিমধ্যেই জাহাজে ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে দুই জাপানি যাত্রীর। গত সোমবারের রিপোর্টে আরও একজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সংক্রমণের ভয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দেশে ফিরে যাওয়ার কাতর আর্তি জানিয়েছিলেন ভারতীয় যাত্রীরা।
জাহাজের ৩,৭০০ যাত্রীর মধ্যে ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ১৩৮ জন। যার মধ্যে ক্রু মেম্বার ১৩২ জন এবং যাত্রী ৬ জন। সূত্রের খবর, ১৬ জন ভারতীয়ের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণের কথা জানা গেছে। আইসোলেশন কেবিনে রেখে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। https://twitter.com/DrSJaishankar/status/1232807585876774913?s=19

ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ১১৯ জন ভারতীয় ও ভিন দেশের পাঁচজনকে নিয়ে টোকিও থেকে দিল্লির বিমানবন্দরে ল্যান্ড করেছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। জাহাজে আটকে থাকা সংক্রামিতরা সেরে উঠলে তাঁদেরকেও ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

দিনকয়েক আগেই এক ভিডিও বার্তায় বাড়ি ফেরার কাতর আর্জি জানিয়েছিলেন ওই জাহাজের ক্রু মেম্বার বিনয় কুমার সরকার-সহ পাঁচজন ভারতীয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ দাবি করে জাহাজে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।

ভারতীয় দূতাবাসের তরফে জানানো হয়েছে, উদ্ধারকাজ শুরু হবে খুব দ্রত। এখনও অবধি যেসব ভারতীয় যাত্রীর শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েনি, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনে আইসোলেশন ইউনিটে রাখা হতে পারে। মেডিক্যাল টেস্টের পরেই তাঁদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। জাহাজের আইসোলেশন কেবিনে যে ভারতীয় যাত্রীদের চিকিৎসা চলছে তাঁদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে।

কারও সুস্থ হয়ে ওঠার খবর মিললেই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
গত ২০ জানুয়ারি জাপানের ইয়োকোহামা থেকে রওনা দেয় ডায়মন্ড এক্সপ্রেস। ২৫ জানুয়ারি জাহাজে ওঠেন হংকংয়ের এক যাত্রী। কিছুদিনের মধ্যেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। পরীক্ষা করে দেখা যায় ওই যাত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সংক্রমণ নিয়েই জাহাজে উঠেছিলেন। তারপর থেকেই যাত্রীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে।

প্রথম দফায় ৪১ জনকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়, এখন সেই সংখ্যা বেড়েছে। সন্দেহের তালিকায় আরও ৩৫৬ জন। এই পরিস্থিতিতে দু’সপ্তাহের জন্য সমুদ্রের মাঝে কোয়ারেন্টাইন করে রাখার সিদ্ধান্ত হয় জাহাজ। যাত্রীদের অভিযোগ, ভেতরে আইসোলেশন ওয়ার্ড বা উন্নত চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থাই নেই। ফলে ভাইরাস কার্যত তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেছে জাহাজের ভেতরে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন একজন করে আক্রান্ত হচ্ছেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here