দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দীর্ঘ টালবাহানার পরে সবুজ সঙ্কেত দিল চিন। উহান থেকে ৭৬ জন ভারতীয়-সহ মোট ১১২ জনকে ফিরিয়ে আনল বায়ুসেনার বিমান। এর আগে দু’ দফায় মোট ৬৪৭ জন ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে এনেছিল এয়ার ইন্ডিয়া জাম্বো-বোয়িং। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, এবার ভারতীয় নাগরিকরা ছাড়াও বাংলাদেশ, মায়ানমার, মলদ্বীপ, দক্ষিণ আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মাদাগাস্কারের আরও ৩৬ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমার দাবি করলেও, চিনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন জানাচ্ছে, ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ছুঁতে চলেছে প্রায় তিন হাজার। সংক্রামিত লক্ষাধিক। উহানে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরাতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান ‘সি-১৭ গ্লোবমাস্টার’ উহানে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু বিমানটি উহানের উদ্দেশে পাড়ি দিতে পারেনি। কারণ চিন সরকার ছাড়পত্র দেয়নি। পরে ভারতের তরফে জানানো হয়, চিনকে সাহায্য করতে একটি বিশেষ বিমানে করে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সে দেশে পাঠানো হবে।

ফেরার সময় উহানে আটকে থাকা বাকি শ’খানেক ভারতীয়কে নিয়ে আসবে তারা। পড়শি দেশের কোনও নাগরিক ভারতের বিমানে ফিরতে চাইলে, তাঁদেরও নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু অনুমতি দিতে রাজি হয়নি চিন সরকার। এতদিনে সেই ছাড়পত্র মিলেছে।
উহান থেকে ফিরিয়ে আনা ভারতীয় ও ভিন্ দেশের নাগরিকরা সংক্রমণ মুক্ত হলেও তাঁদের এখনই বাড়ি ফিরে যেতে দেওয়া হবে না। মানেসর সেনা ক্যাম্পের আইসোলেশন ইউনিটে কিছুদিন তাঁরে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সমস্ত পরীক্ষার রিপোর্ট সন্তোষজনক হলেই তাঁদের ছাড়া হবে।

নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে চিনে মৃত্যুমিছিল শুরু হলে দেশে ফেরার আবেদন জানান সেখানে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকরা। মূলত উহান ও চিনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত ভারতীয় পড়ুয়াদের সংখ্যাই ছিল শতাধিক। ফেব্রুয়ারি ১ ও ২ তারিখে, দু’দফায় জাম্বো-বোয়িং ৭৪৭ জেটে চাপিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় ৬৪৭ জন ভারতীয় ও সাতজন মলদ্বীপের বাসিন্দাকে। বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের পরে চিন-ফেরত সকল যাত্রীকেই নিয়ে যাওয়া হয় মানেসরের কাছে সেনাবাহিনীর তৈরি বিশাল আইসোলেশন ইউনিটে।

যাঁদের জায়গা হয়নি, তাঁদের রাখা হয়েছিল ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের বিশেষ ক্যাম্পে। সেখানেও তৈরি হয়েছিল আইসোলেশন কেবিন। এই ইউনিটে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সরা ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন চিন-ফেরত যাত্রীদের। দিনকয়েক আগেই সেখান থেকে প্রথম দফায় ৩৪৮ জনকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাকিদের এখনও কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। তাঁর ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট এলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। চিনের পর্যুদস্ত অবস্থার থেকেও চিনের বাইরের এই পরিসংখ্যান এখন অনেক বেশি করে ভীতিপ্রদ।

চিন ছাড়িয়ে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ২৭টি দেশে। সম্প্রতি প্রথম ইউরোপীয়ের মৃত্যু হয় ইতালিতে। চিনে ১০ জন চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন ভাইরাস সংক্রমণে। আক্রান্ত ১৭০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী।গত দেড় মাসে সারা বিশ্বে ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here