দেশের সময়ঃ —লোকসভায় এ রাজ্য থেকে ১৮টি আসন পাওয়ার পর এখন বিজেপির লক্ষ্য এ রাজ্যের রাজ্যপাট দখল করা।লোকসভায় এ রাজ্যে বিজেপির মুখ হয়ে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।তবে এ রাজ্যে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসেবে কাকে তুলে ধরা হবে তা নিয়ে বিজেপির অন্দর মহলে বিস্তর আলোচনা চলছে।

এ রাজ্যে বিজেপির পক্ষে কে হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা মুখ।বলা বাহুল্য তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে এখন কৌতুহল তুঙ্গে।বিজেপি ঘরানার রাজনীতিকরা মনে করেন যে কোন নির্বাচনি লড়াইতে নামার আগেই সেই লড়াইয়ের একজন নেতা বা মুখ সামনে আনতে হয়।

সেই কারণেই ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে তারা আডবানি,যশবন্ত সিংদের বাদ দিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে রেখে লড়াই শুরু করেছিল।নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রোজেক্ট করে তাঁর বিজ্ঞাপন করা হয়েছিল ব্যপকভাবে।ভোটের আগেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নামটা দেশের মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে দেওয়া হয়েছিল।

এটাই বিজেপির নির্বাচনী কৌশল।বিজেপি একেবারে কর্পোরেট কালচারের ধাঁচে তাদের নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করে।এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যে সেরকমই কোন কৌশল নিতে চলেছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সে ক্ষেত্রে বিজেপি কাকে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সামনে রেখে লড়াই করবে,আগে থেকে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে বিজেপি কী কাউকে সামনে আনবে, নাকি এখনও কোন হেবিওয়েট তৃণমূল নেতার দল বদলের জন্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব অপেক্ষা করছে,সেই দল বদল হওয়ার পর তাকে সামনে রেখে বিজেপি এ রাজ্যের ভোট যুদ্ধে ঝাঁপাবে?অনেক প্রশ্ন ঘোরা ফেরা করছে।

তবে এর মধ্যে বিজেপি অন্দর মোহলে কান পাতলে যে আলোচনাটা শোনা যাচ্ছে তা হল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মোটামুটি একটা বিষয়ে নিশ্চিত এ রাজ্যে ভোট কৌশল নির্ধারণে মুখ্য দায়িত্ব দেওয়া হবে মুকুল রায়কেই।তাঁর কৌশল নির্ধারণের ক্ষমতা নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতারা কোন সন্দেহ করছেন না,যে ভাবে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে তা যে মুকুল রায়ের ক্যারিসমা ছাড়া সম্ভব ছিল না তা মেনে নিচ্ছেন অমিত শাহরা।

এ রাজ্যের রাজনীতিকে মুকুল রায় যে হাতের তালুর মত চেনেন তা নিয়েও কোন সন্দেহ রাখছেন না বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।তাই মোটামুটি নিশ্চিত যে মুকুল রায়কে সামনে রেখেই আগামী বিধানসভা ভোটের লড়াই এ রাজ্যে লড়তে চলেছে বিজেপি।

এ রাজ্যের শাসক দলের অন্দরে যে ভাঙনের স্রোত শুরু হয়েছে তা যে থামতে দেওয়া হবে না সে বিষয়েও দলের শীর্ষ নেতাদের নিশ্চত করেছেন মুকুল রায়।কৌশলী মুকুল রায় দলের শীর্ষ নেতাদের এ বিষয়টাতেও আশ্বস্ত করেছেন যে কোন ভাবেই বিজেপির স্থানীয় নেতাদের ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে কোন সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন না।

ইতিমধ্যেই তাই মুকুল রায় তাঁর হাত ধরে বিজেপিতে আসে সকলকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।রাজ্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি ইতিমধ্যেই দলের পরবর্তী কৌশল কী হবে সে সম্পর্কে ছক কষে ফেলেছেন।শোনা যাচ্ছে সেই ছক নিয়ে সম্প্রতি তাঁর দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে কথা হয়েছে,অমিতশাহ সেই ছক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও খবর।

আর এই সূত্রেই খবর এর পরেই অমিত শাহ এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন আগামী বিভানসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে বিজেপি দলকে নেতৃত্ব দেবেন মুকুল রায়।এখান থেকেই রাজ্য বিজেপির অন্দর মোহলে একটা আলোচনা মাথাচাড়া দিয়েছে,যে নেতৃত্ব দেবেন মানে কী মুকুল রায় কৌশল নির্ধারণ ও প্রার্থী বাছতে মুখ্য ভুমিকা নেবেন,নাকি তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রোজেক্ট হবেন?

এই ধন্দের সম্পুর্ন নিরসন না হলেও এটা পরিষ্কার যে মুকুল রায় রাজ্য বিজেপিতে প্রধান হয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।অনেকেই মনে করছেন যদি শেষ বেলায় মনে হয় এ রাজ্যে কোন মুখ্যমন্ত্রী পদের মুখ নেই সেক্ষেত্রে মুকুল রায়কেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সামনে আনতে পারে বিজেপি,মমতার পাল্টা হিসেবে তিনিই যে গ্রহন যোগ্য হতে পারেন তা মনে করছেন অমিত শাহরা,এমনটাই শোনা যাচ্ছে।

মমতার শাসনের যাবতীয় দুর্নীতি,দুরাচার,স্বজন পোষন তিনিই যে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছেন,এবং তিনিই যে বিষয়গুলি সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী অবগত,তিনি সেসব প্রকাশ্যে বললে তা যে গ্রহণযোগ্য হবে তা স্বীকার করছে রাজ্য বিজেপির নেতারাও।সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত যদি দেখা যায় এরাজ্যে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য মুকুল রায়কেই সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে তাতে,অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না,অন্তত বিজেপির অন্দরমোহলের ইঙ্গিত কিন্তু সেরকমই।

তবে যাকে নিয়ে এত আলোচনা সেই তিনি কিন্তু এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে নারাজ,বরং বলছেন মুখ্যমন্ত্রী হতে নন তিনি চান এ রাজ্যের পরিবর্তনের পর আর এক পরিবর্তনের ভগীরথ হতে,ভোট যুদ্ধের নেপথ্য কারিগর হয়েই থাকতে চান তিনি।বোঝা যায় মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য নয় রাজনীতির কৌশল সাজাতেই এখন অন্য কোন বিষয় নিয়ে ভাবতে চান না বঙ্গ রাজনীতির এই চানক্য।

তবে মুকুল রায় যে এ রাজ্যের রাজনীতির নতুন তারকা তা কিন্তু বিজেপির অন্দরমোহলে কান পাতলেই শোনা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here