দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মালদার মানিকচক ঘাটে সোমবার সন্ধ্যায় বার্জ উল্টে গঙ্গাবক্ষে লরি পড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্ধারকাজ চলছে জোরকদমে। গভীর রাত পর্যন্ত ১৪জন নিখোঁজ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১২জন সাঁতার কেটে গঙ্গার বিভিন্ন পাড়ে উঠে এসেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে ২ জন এখনও নিখোঁজ। নিখোঁজ দু’জন হলেন বছর পঁয়ত্রিশের ময়না শেখ এবং বছর চল্লিশের মন্টু শেখ। শোনা যাচ্ছে, তাঁরা ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার ভোরে গতি পেয়েছে সেই উদ্ধারকাজ।পাশাপাশি পাথর বোঝাই ৮টি লরি-সহ বার্জটি এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গঙ্গাবক্ষে জলের তলায়। ক্রেন এনে সেগুলিকেও তোলা হবে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ঘটনাস্থলে রয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ।

চলছে উদ্ধারকাজ

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার সন্ধ্যায় ঝাড়খণ্ডের রাজমহল ঘাট থেকে পাথর বোঝাই ১০টি লরি মালদহের মানিকচক ঘাটে এসে ভিড়েছিল। বার্জ থেকে এক এক করে লরি নামছিল। একটি লরি নেমে নিরাপদে নদীর ঘাট থেকে উপরে উঠে আসে। কিন্তু দ্বিতীয় লরিটি নামার সময়েই বিপত্তি। লরিগুলির ভারে এক দিকে কাত হয়ে উল্টে যায় বার্জটি। ফলে ৮টি লরিই ডুবে যায় জলে। এই দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মানিকচক ঘাটে পৌঁছেছিল পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এবং জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মালদহেই ছিলেন সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী। খবর পেয়ে তিনি-সহ জেলা সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব ঘটনাস্থলে যান ৷দ্রুত শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। প্রাথমিক ভাবে নিখোঁজের সংখ্যা ছিল ২২। পরে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের দাবি, এখনও ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। যদিও প্রশাসনের দাবি নিখোঁজর সংখ্যা ২। রাতভর তল্লাশি করেও কোনও মৃতদেহ মেলেনি। গভীর রাত পর্যন্ত ডুবুরি এবং স্পিডবোট দিয়ে চলে তল্লাশি। যায়া ডুবে গিয়েছিলেন তাঁদের অধিকাংশই ট্রাকগুলির ড্রাইভার ও খালাসি। দুর্ঘটনায় পর মঙ্গলবার থেকে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল।

কীভাবে দুর্ঘটনা

কীভাবে এই লঞ্চ ডুবির দুর্ঘটনাটা হল তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে। উদ্ধারকার্যের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্চ লাইট বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনকে স্থানীয় ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের রাজমহল থেকে মালদার মানিকচকের আসছিল বিশাল মাপের এই বার্জ (টলার লঞ্চটি)। দশটি পণ্যবাহী লরি ছিল এই লঞ্চে। প্রতিটি লরিতে বালি, পাথর মজুত ছিল। মানিকচকের গঙ্গার ঘাটে বার্জ( লঞ্চ)টি থামার মুহূর্তেই বেসামাল হয়ে পড়ে এবং লরিগুলি নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে একের পর এক গঙ্গায় তলিয়ে যেতে শুরু করে। সেইসঙ্গে বার্জের পিছন দিকের অংশের একটি যন্ত্রাংশ মুহূর্তের মধ্যে বিকল হয়ে ভেঙে যায়। তারপরই ডুবে যায় লঞ্চ। স্থানীয়দের দাবি, বার্জটিতে(লঞ্চে) ওভারলোডিং এর জন্যেই এই দুর্ঘটনা হয়েছে। সোমবার ঘটনাস্থলে আসেন  জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র এবং পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া।

ঝাড়খণ্ড থেকে মালদহের মানিকচক ঘাটের মধ্যে বার্জে (স্থানীয়দের কাছে লঞ্চ বলেই বেশি পরিচিত) লরি চলাচল এখানকার পরিচিত দৃশ্য। এক একটি বার্জে ১০ থেকে ১২টি লরি পারাপার করা হয়। সড়কপথে অনেক ঘুরে আসতে হয় বলে লরি চালকরা এই জলপথই বেছে নেন। যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীরাও পারাপার করেন এই বার্জগুলিতে। দু’টি ঘাটই নিয়ন্ত্রণ করে ঝাড়খণ্ড সরকার। ঘাটের বরাতও পড়শি রাজ্য থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু বার্জগুলিতে ক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত লরি বা পণ্য পরিবহণ হচ্ছে কি না, সে সব ঠিকমতো নজরদারি হয় না বলে অভিযোগ। এমনকী, যাত্রী বা বার্জ কর্মীদের জন্য লাইফ জ্যাকেট-সহ জীবনরক্ষার সামগ্রীরও সঙ্কট রয়েছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here