দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিরোধীরা বলে, ১৬ সালের বিধানসভা ভোট ও ১৯ এর নির্বাচনে মালদহে আম ও ছালা দুটোই গিয়েছিল তৃণমূলের। একটাও আসনে জেতেনি, সংগঠনের দৈন্যতাও বেরিয়ে পড়ে!সেই আমের জেলা মালদহে গিয়ে বুধবার আম আদমির কাছে ‘আম’ চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদহের ল্যাংড়া ও ফজলি দুটো আমেরই নাম রয়েছে। দিদি চাইলেন ফজলি আম।জেলার কর্মীসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবদারের সুরে বলেন, “এই নির্বাচনে আমায় ফজলি আম দিতে হবে।” সভার শুরুতেও তিনি একবার বলেন, মালদায় গত ভোটে আমরা একটা আসনও জিততে পারিনি। এ বার জিততে চাই।

লোকসভা ভোট তাঁকে হতাশ করেছে, কিন্তু বিধানসভা ভোটে মালদহ জেলা নিয়ে আর হতাশ হতে চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই কারণে মালদহের জনসভা থেকে বিজেপি-কে একেধারে তুলোধনা, আর নিজের সরকারের সাফল্য তুলে ধরলেন তিনি। মমতার কথায়, ‘সারা দেশে আর একটাও সরকার দেখাতে পারবেন না, যারা বিনা পয়সায় রেশন দেয়। কিন্তু আমরা দিই। আমরাই একমাত্র। বিজেপি-র মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, এরা কেউ দেয় না। তাই বিনামূল্যে রেশন পেতে হলে তৃণমূলকেই ভোট দিন। বিজেপি বলবে, এটা করব-ওটা করব। কিন্তু ভোট মিটে গেলেই সব হাওয়া। কিন্তু আমরা যা বলব, তাই করব।’

নিজের সরকারের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কথাও এদিন মালদহের সভামঞ্চ থেকে তুলে ধরেছেন মমতা। বলেন, ‘আমরা সবার জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করে দিয়েছি। যাঁরা ইতিমধ্যেই সেই কার্ড পেয়ে গিয়েছেন, তাঁরা চিকিৎসা করাতে পারবেন। আর যাঁরা পাননি, তাঁদের জন্যও আমরা বিশেষ কার্ডের ব্যবস্থা করেছি। পরে আসল কার্ড পেয়ে যাবেন। আমরা এই কার্ড পরিবারের মা-বোনেদের নামে দিচ্ছি, কারণ তাঁরাই জানেন সংসারে কার কী দরকার।’

এদিন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জেও বিজেপি-কে নানা ইস্যুতে বিঁধে মালদহে এসে আরও সুর চড়ান মমতা। রাজ্যজুড়ে রথযাত্রা বের করেছে বিজেপি, সেই প্রসঙ্গেও এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘ভোট এসেছে বলে এখন বিজেপি নেতারা জগন্নাথ সাজছে, বলরাম সাজছে, সুভদ্রা সাজছে। কিন্তু এরা কেউ কোন ধর্মকে সম্মান করে না। আমরা রথযাত্রাকে সম্মান করি, কিন্তু বিজেপি যা করছে, তাকে সম্মান করি না। এরা একটা বড় বাসের মধ্যে একটা করে হোটেল বানিয়েছে। আর নাম দিয়েছে রথযাত্রা।’

বিজেপি-র বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, ‘মুর্শিদাবাদ এবং মালদা জেলায় কিছু মুসলিম সংগঠনকে টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে অশান্তি করার জন্য।’ মালদহের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে সংখ্যালঘুদের ভোটের উপর। তা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্র যাতে নাগরিক আইন এই রাজ্যে চালু করতে না-পারে, সে জন্য আমি বিধানসভায় আইন পাশ করেছি। কোনও দিন ওই আইন এখানে চালু করতে পারবে না। আমি যা বলি তাই করি।’ কর্মীদের মনোবল বাড়াতে এর পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তৃণমূলকর্মীরা আমার সম্পদ। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উল্লেখ করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যাবাদী বলে অভিযোগ তুলে তাঁর বক্তব্য, ‘তিনি বলে গেলেন সরকারি কর্মীরা মাইনে পাচ্ছে না। এত বড় মিথ্যা তিনি বলতে পারলেন কেমন করে?’ এদিন কৃষকদের জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

ষোল সালের ভোটে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত যখন তৃণমূলের জয়রথ অশ্বমেধের গতিতে ছুটছে তখন মালদা ছিল যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। সে বার ভোটে মালদায় স্যুইপ করেছিল বাম-কংগ্রেস। এমনকি একটি আসন জিতে নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু তৃণমূল পেয়েছিল শূন্য।

যদিও খাতা ফাঁকা রাখতে চায়নি তৃণমূল। পরে সিপিএমের দীপালী বিশ্বাস-সহ কংগ্রেসের দু’জন ও একজন বাম-কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় তৃণমূলে যোগ দেন।

এই সব করতে করতে উনিশ সালে লোকসভা ভোট আসে। এ বার বরকত গণিখান চৌধুরীর ভাগ্নী তথা কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নুর অনুপ্রাণিত হয়ে যোগ দেন তৃণমূলে। কিন্তু তাতেও লাভের লাভ হয়নি। বরকতের পরিবারের কেউ এই প্রথম বেনজির ভাবে পরাস্ত হন মালদহে।বরঞ্চ সিপিএম থেকে বিধায়ক খগেন মুর্মুকে বিজেপিতে টেনে মালদহ উত্তর আসন জিতে অমিত শাহর থেকে সাবাশি পেয়েছিলেন মুকুল রায়।

যদিও দিদি এদিন বলেছেন, মৌসমকে চক্রান্ত করে হারানো হয়েছিল। তাই মালদাকে সম্মান দিতেই আমি মৌসমকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছি। মনে রাখবেন, কংগ্রেস কিন্তু কখনও বরকতদাকে রাজ্যসভায় পাঠায়নি।

একদিকে যেমন বিজেপি রয়েছে তেমন বাম-কংগ্রেস জোটও সংখ্যালঘু এলাকায় বড় ফ্যাক্টর হতে পারে বলে অনেকের মত। তাই ভোটের আগে দিদির গলায় এদিন কিছুটা আর্তিই শোনা গেল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here