দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত নভেম্বর মাসে কলকাতার মেয়র পদ থেকে ইস্তফার পর প্রকাশ্যে তৃণমূল বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে তিনি টুঁ শব্দও করেননি। কিন্তু এখন, আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর একটু একটু করে মুখের আগল খুলতে শুরু করে দিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।

একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়ে শোভন স্পষ্টতই অভিযোগ করলেন, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সবার সামনে বারবার তাঁকে অপদস্ত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে, কখনও বিধানসভার বারান্দায়, কখনও বা দলের কোনও মিটিংয়ে।

শোভনের কথায়, এক বার বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য তাঁকে অপমানিত হতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি সভায় এক প্রশ্নের জবাবে কোনও সরকারি কাজ সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সভার মধ্যে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ও ঠিক বলছেন না। এ কথা বলে দ্বিগুণ সংখ্যা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিরোধীরা অনেকে বলছেন, শোভনের এ কথার মধ্যে রাজনীতির খোঁচাও রয়েছে। উনি হয়তো কৌশলে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন ‘নয়-কে হয় বলা’ মুখ্যমন্ত্রীর অভ্যাস। তিনি এ ভাবেই সংখ্যা বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলেন।

সাক্ষাৎকারে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র এও বলেন, প্রত্যেকটা মানুষেরই ব্যক্তিগত জীবনে গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত স্তরে সম্পর্ক বরাবরই ভাল ছিল। তাই তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে অশান্তি হচ্ছে সে কথা মমতাকে তিনি জানিয়েওছিলেন। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই একদিন তাঁকে বলেছিলেন, রোজ রোজ অশান্তির চেয়ে তুই ওঁকে ডিভোর্স দিয়ে দে।

মজার ব্যাপার হল, শোভন বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার দিন অর্থাৎ গত বুধবার সন্ধ্যায় বেহালার একটি অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে ছিলেন মমতা ও রত্না। সে দিন মাইক হাতে নিয়ে দিদি মঞ্চে বলেন, রত্না দুঃখ পেও না। তোমার শ্বশুরবাড়ির পরিবার বাপের বাড়ির পরিবার, তৃণমূল সবাই তোমার সঙ্গে রয়েছে।

অনেকে মনে করছেন, এ ব্যাপারে মমতার দু’রকম অবস্থান ফাঁস করে দিতে চেয়েছেন শোভন। একদিকে তিনিই নাকি শোভনকে বলেছিলেন রত্নাকে ডিভোর্স দিতে, আবার রত্নাকে সহানুভূতি যোগাচ্ছেন সেই মমতাই।

তৃণমূল যে ভিতর থেকে কতটা দীর্ণ হয়ে গিয়েছে সাক্ষাৎকারে তা বোঝাতে চান শোভন। তিনি বলেন, এই যে জেলায় জেলায় অশান্তি হচ্ছে, তৃণমূলের মধ্যেই ঝগড়া-মারামারি হচ্ছে তার কারণটা স্পষ্ট। দলের নিচু তলার উপর উপরতলার কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই অশান্তিও থামানো যাচ্ছে না। এ ভাবে একটা দল চলে?

সেই সঙ্গে এও বলেন, প্রথম দিন থেকে যাঁরা তৃণমূল করেছেন তাঁরা এখন দলে ব্রাত্য। তৃণমূলে তাঁদের গুরুত্ব নেই। বিশ্বাসের জায়গাটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

মেয়র ও তিন দফতরের মন্ত্রী থাকার পাশাপাশি শোভন চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন। পরে তাঁকে সরিয়ে শুভাশিস চক্রবর্তীকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলা সভাপতি করেছেন মমতা। শোভনের দলত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বুধবার শুভাশিস বলেছিলেন, দলে কেউ অপরিহার্য নন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখটাই একমাত্র পুঁজি। রবিবার ওই সাক্ষাৎকারে শোভন বলেন, অনেকেই মনে করছেন আমি অপ্রসাঙ্গিক হয়ে গিয়েছি। সেটা তাঁদের ভাবনা। আমি রাজনীতিটা সিরিয়াসলিই করব। যেমন আগে করেছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here