দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে টালমাটাল গোটা দেশ। অধীর রঞ্জন চৌধুরী, সুজন চক্রবর্তীর পর এবার করোনা থাবা বসাল মদন মিত্রের শরীরে। বুধবারই এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। সেখানেই করোনা পরীক্ষা করা হয় তাঁর। রিপোর্ট পজিটিভ আসে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগছেন মদন মিত্র। এছাড়াও তাঁর শরীরে রয়েছে উপসর্গ, যা চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের।

তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রর শারীরিক অবস্থার হঠাৎই বেশ অবনতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাঁর শরীরে কোভিড পজিটিভ ধরা পড়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন বেশ কম। পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে সরিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

কামারহাটি বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী হলেন মদন মিত্র। গত ১৭ এপ্রিল কামারহাটিতে ভোটের দিন বিকেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাঁকে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। সেদিন সকালে গঙ্গায় স্নান করে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়ে সারাদিন হুড খোলা জিপে ঠা ঠা রোদে ঘুরেছিলেন মদন।

অনেকে মনে করেছিলেন, সেই কারণেই শরীর খারাপ হয়েছে। কিন্তু বুধবার সকালে শরীরে বেশ অস্বস্তি বোধ হওয়ায় তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। শ্বাসকষ্টও বাড়তে থাকে। পরে সন্ধ্যায় তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্নে ভর্তি ছিলেন মদন বাবু। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। বুকের এক্স-রে রিপোর্টেও কোনও অসংগতি ছিল না। তবে বেশ কিছু পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছিল। তাতেই জানা যায় করোনা বাসা বেঁধেছে মদন বাবুর শরীরে।

প্রসঙ্গত, পঞ্চম দফার ভোট মিটটেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মদন মিত্র। গত শনিবার বিকেলে কামারহাটির পার্টি অফিসেই আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। তড়িঘড়ি তৃণমূল প্রার্থীকে অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয়। নিকটবর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক পৌঁছন পার্টি অফিসে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো তাঁর দেখভাল চলছিল।

রাজ্যে করোনার দাপট ক্রমশ বাড়ছে। রেহাই পাচ্ছেন না রাজনৈতিক নেতারাও। এদিন সকালেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী। সন্ধ্যায় কোভিড পজিটিভ হওয়ার খবর দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। মনমোহন সিং থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধী, শশী থারুর সকলেই করোনা আক্রান্ত। এমন অবস্থায় মদন মিত্রের শারীরিক গতিবিধি নিয়ে চিন্তায় চিকিৎসকরা।

উল্লেখ্য, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ক্রমশই জটিল আকার নিচ্ছে বাংলায়। এর মধ্যেই মিটিং, মিছিল, রোড শো হয়ে উঠছে করোনার সুপার স্প্রেডার। আক্রান্ত হচ্ছেন একাধিক প্রার্থী, কর্মী-সমর্থকেরা। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত রকমের প্রচার বাতিলের উপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। হাইকোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে, সংক্রমণ রুখতে কেবল পুলিশই দায়িত্ব নেবে না, সতর্ক হতে হবে রাজনৈতিক নেতাদেরও। বাকি তিন দফার ভোটে সংক্রমণের আকার আরও চরমে পৌঁছতে পারে বলেই আশঙ্কিত চিকিৎসকরা।

গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৭৮৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের। অর্থাৎ শুধু বাংলার দৈনিক করোনা সংক্রমণই ১১ হাজার ছুঁইছুঁই, যা এখনও পর্যন্ত দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে সর্বোচ্চ। সবমিলিয়ে ক্রমশ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে বাংলার করোনা পরিস্থিতি।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, এই মুহূর্তে রাজ্য সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৪৯৬ জন। বিগত ২৪ ঘণ্টায় শুধু কলকাতাতেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৬৮, মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। উত্তর ২৪ পরগনাতে করোনা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৪৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। ২১ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৭১০ জনের। আশঙ্কাজনকভাবে কমছে সুস্থতার হারও। এই মুহূর্তে রাজ্যে সুস্থতার হার ৮৯.২৩ শতাংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here