দেশের সময় , বাগদাঃ সকাল থেকেই উত্তপ্ত উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক বিধানসভা কেন্দ্র। দফায় দফায় গুলি, বোমাবাজি চলছে টিটাগড়, অশোকনগর, আমডাঙা, গাইঘাটা, বাগদা, ব্যারাকপুরে। অশোকনগরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল, সেই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এবার বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

বাগদার ৩৫ নম্বর বুথকে ঘিরে অশান্তি ছড়িয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বুথের বাইরে ভিড়-জমায়েত সরাতে পুলিশ যথেচ্ছভাবে লাঠিচার্জ করেছে। বেপরোয়া লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন অনেকে। গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, রাজ্য পুলিশের কর্মীরা তাদের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করছিল। গ্রামবাসীরা তার প্রতিবাদ করায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ। গুলি ছোড়ে। সেই গুলি লেগে তিন জন জখম হয়েছেন বলেও দাবি। এলাকাবাসীরা বলছেন, পুলিশের ভয়ে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন পরিজনেরা। তবে পুলিশ সত্যিই গুলি চালিয়েছে কিনা বা কী ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত খবর এখনও পাওয়া যায়নি।

আমডাঙা বিধানসভা কেন্দ্রেও নতুন করে অশান্তি শুরু হয়েছে। দাদপুর গ্রামের ২৭ নম্বর বুথ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে বোমাবাজি হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গ্রামের বাঁশ বাগান, আম বাগান থেকে তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। ভোটাররা আতঙ্কে আর বুথমুখো হতে সাহস পাচ্ছেন না। উত্তেজনা ক্রমশই বাড়ছে এলাকায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। নামানো হয়েছে র‍্যাফ।

সকাল থেকেই উত্তপ্ত উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক বিধানসভা কেন্দ্র। দফায় দফায় গুলি, বোমাবাজি চলছে টিটাগড়, অশোকনগর, আমডাঙা, গাইঘাটা, ব্যারাকপুরে। কোথাও মাথা ফাটছে তৃণমূল কর্মীর, কোথাও বিজেপির ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর হচ্ছে। যুযুধান দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে। টিটাগড়ের মিলনগড় আর অশোকনগরে দুপুরের পর থেকে তুমুল অশান্তি শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছে শাসক দল, পায়ে গুলি লেগে জখম দুই তৃণমূল কর্মী।

অশোকনগর বিধানসভার ৭৯, ৭৯এ, ৮০, ৮০এ এই চারটি বুথে আজ ভোটগ্রহণ চলছিল। চার মধ্যে ট্যাংরা ৭৯ নম্বর বুথের বাইরে চরম অশান্তি শুরু হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, দলের কর্মীদের লক্ষ্য করে পায়ে গুলি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। গুরুতর জখম দু’জন। মনিরুল মণ্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মীর পায়ে গুলি বিঁধেছিল। তাঁকে বারাসাত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অশোকনগরের তৃণমূল প্রার্থী নারায়ণ গোস্বামীর অভিযোগ, দুই তৃণমূল কর্মীকে পায়ে গুলি করেছে সিআরপিএফ।

ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে অশোকনগরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে দুই তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও, অশোকনগরে গুলি চলেনি বলে জানিয়েছে কমিশন।

ঘটনাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ট্যাংরা এলাকা। স্থানীয়রা বলছেন, মুড়িমুড়কির মতো বোম পড়ছে। তৃণমূল-বিজেপি কর্মীদের মধ্যে লাঠালাঠি চলছে। কয়েক রাউন্ড গুলিও ছোড়া হয়েছে। বিজেপির দাবি, তাদের কর্মী-সমর্থকদের লক্ষ্য করে গুলি-বোমা ছোড়া হচ্ছিল। ঝামেলার সূত্রপাত সেখান থেকেই।
স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, এদিন বেলা ১১টা নাগাদ ট্যাংরা আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের বুথে ভোটের কাজ দেখতে ঢোকেন বিজেপি প্রার্থী তনুজা চক্রবর্তী।

বুথে তাঁকে ঢুকতেই দেখেই বোমাবাজি শুরু করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, ওই বুথ লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছলে তাদের গাড়ি লক্ষ্য করেও পর পর বোম ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। জওয়ানরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তারপরেই গুলি চলে। কিন্তু কে বা কারা গুলি চালিয়েছে সে বিষয়ে কোনও নিশ্চিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

অশোকনগরের বিজেপি প্রার্থী তনুজা চক্রবর্তীর বক্তব্য, তাঁকে উদ্দেশ্য করেই এই হামলা চালানো হয়েছে। পুরোটাই তৃণমূলের পরিকল্পিত। তৃণমূল কর্মীরা যে গুলি চলার কথা বলছেন তাও মিথ্যা। গুলি চালনার ঘটনায় রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল নির্মাচন কমিশন। সেই রিপোর্ট পেয়ে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালায়নি।

অন্যদিকে, টিটাগড়েও দফায় দফায় বোমোবাজি চলছে। বিজেপির ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সংঘর্ষে আহত হয়েছে তিন বিজেপি কর্মী। গেরুয়া শিবিরের দাবি, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে। ভোটদানে বাধা দিচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে শাসক দলের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।

পঞ্চম দফার ভোটেও গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। শূন্যে গুলি চালানো হয় বলে দাবি করেন গ্রামবাসীদের একাংশ। এই ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর মেলেনি। যদিও গুলি চালানোর অভিযোগ খণ্ডন করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।দেগঙ্গা বিধানসভার চাকলা পঞ্চায়েতের কুরুলগাছা গ্রামে ২১৪ ও ২১৫ নং বুথে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় রিপোর্ট তলব করে কমিশন। ঘটনার ভিডিও ফুটজ চেয়ে পাঠায় কমিশন। মিডিয়া মনিটরিং-এর মাধ্যমে জানতে পারার পরেই রিপোর্ট তলব।

প্রসঙ্গত, চতুর্থ দফার ভোট শুরু হতেই শীতলকুচির পাঠানটুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ১৮ বছরের এক যুবকের। বেলা গড়াতেই ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। এরপর উত্তেজনা ছড়ায় জোরপাটকি এলাকায়। ১২৬ নম্বর বুথের বাইরে এলোপাথারি গুলি চলার অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আরও চারজনের। নির্বাচন কমিশন জানায় সিএপিএফ জওয়ানদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। গোটা ঘটনায় রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করে সোচ্চার হয়েছেন মোদী-শাহরা। অন্যদিকে, এই ঘটনা বিজেপি-র চক্রান্ত বলে পালটা সরব হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এ নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here