দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সকাল ৯টা নাগাদই ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইয়াস। মৌসম ভবন জানিয়েছে, ৩ ঘণ্টা ধরে চলবে এই প্রক্রিয়া। এর প্রভাবে তোলপাড় করা ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে ওড়িশার একাধিক এলাকায়। পাশাপাশি বাংলায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করছে দিঘা-মন্দারমণি এলাকা।

মৌসম ভবন জানাচ্ছে, বুধবার সকাল ৯টা ১৫ নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণে আছড়ে পড়েছে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। তবে তার আগে থেকেই প্রভাব শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকায়। বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রবল জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। জল ঢুকতে শুরু করেছে উপকূলবর্তী এলাকায়। এ ভাবে জলোচ্ছ্বাসের একটা বড় কারণ ভরা কোটাল।

বুধবার পূর্ণিমা। সেই সঙ্গে রয়েছে চন্দ্রগ্রহণ। পূর্ণিমার প্রভাবে বুধবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে শুরু হয় জোয়ার। সকাল ১১টা ৩৭ মিনিটে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায় জোয়ার। জোয়ার চলাকালীন জলের উচ্চতা সর্বাধিক সাড়ে ৫ মিটার উঠতে পারে। অন্য দিকে বুধবার দুপুর ৩টো ১৫ মিনিটে শুরু হওয়ার কথা পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত। ২০২১ সালে এটিই প্রথম ও শেষ ‘ব্লাড মুন’ হতে চলেছে।

পূর্বাভাস মত,আজ বুধবার সাতসকাল থেকেই প্রবল জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়ে যায় দিঘায়। গার্ডরেল উপচে জল চলে আসে ডাঙায়। বেলা গড়াতেই রাস্তা পর্যন্ত চলে আসে জল। প্রায় কোমর-সমান জলে ভেসে যায় বহু গাড়িও। আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ছেন অনেক বাসিন্দা।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে নবান্ন থেকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। গোটা এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধেতেই নামানো হয়েছে সেনা, মানুষ ও গবাদি পশু বাঁচানোর প্রবল চেষ্টা করছে তারা।

হলদি নদীতেও প্রবল জলোচ্ছ্বাস ঘটিয়েছে ইয়াসের দাপট। জল ঢুকতে শুরু করেছে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে। বাঁধ ভেঙে নদী-তীরবর্তী এলাকায় জল ঢোকার আশঙ্কা বাড়ছে সেখানেও। দোকান বেঁধে রাখছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।


গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার রাত থেকেই দিঘায় শুরু হয়েছিল প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া। সেইসঙ্গে সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতাও বাড়ছিল। সময় যত এগিয়েছে, পরিস্থিতি তত সঙ্গীন হয়েছে। ইতিমধ্যেই দিঘার বাজার এলাকা ৫ থেকে ৬ ফুট জলের তলায় চলে গিয়েছে।

যদিও দিঘায় উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের অনেক আগেই নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু শহরের বাসিন্দারা বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু শহরের ভিতরে জলের তোড় ক্রমেই বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নামানো হয়েছে সেনা। জল ঢুকেছে মন্দারমণি, শঙ্করপুর, তাজপুর এলাকায়। প্রচুর গ্রাম জলের তলায়। বেশিরভাগ বাসিন্দারাই গ্রাম ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে।

আগে পূর্বাভাস ছিল বুধবার দুপুরের মধ্যে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে ইয়াস। কিন্তু গতি বাড়িয়ে বুধবার সকাল ৯টা ১৫ থেকেই শুরু হয়েছে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া। ফলে ভরা কোটাল ও ঘূর্ণিঝড়ের স্থলভাগে আছড়ে পড়া প্রায় একই সময় হয়েছে। আর এই জোড়া ফলায় দুর্যোগ ও দুর্ভোগ বেড়েছে উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের। একদিকে পূর্ব মেদিনীপুরে দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণি, তাজপুর এলাকা জলমগ্ন, অন্য দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, বকখালি প্রভৃতি এলাকায় একের পর এক গ্রামে জল ঢুকেছে। ফলে সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here