দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভোটে আসছে বাংলায়। আর সেই সূত্রেই বাংলার মনীষীদের নিয়ে আসরে তৃণমূল-বিজেিপ সব শিবিরই। তৃণমূল অবশ্য শুরু থেকেই বলছে, দৈনন্দিন রাজনীতিতে স্বামী বিবেকানন্দকে ব্যবহার করছে গেরুয়া শিবির। তাঁর ভাবনাকে বিজেপি বিকৃতভাবে ছড়িয়ে দিতে চাইছে। মঙ্গলবার স্বামী বিবেকানন্দর জন্মদিনে প্রথমে স্বামীজির বাসভবনে গিয়ে মাল্যদান করার পর গোলাপার্ক থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত মিছিল করলেন তৃণমূল সাংসদ তথা যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মিছিল শেষে বিজেপিকে রীতিমতো তোপ দাগলেন তিনি।

ভোটেরর আগে এই শেষ স্বামীজির জন্মজয়ন্তী। তাই তৃণমূল, বিজেপি দু’পক্ষই ১২ জানুয়ারিকে ব্যবহার করল বিধানসভার দিকে তাকিয়ে। মঙ্গলবার সকালে শ্যামবাজার থেকে স্বামীজির বসত ভিটে সিমলা স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিল করেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। বিকেলে গোলপার্ক থেকে হাজরা পর্যন্ত মিছিল করল তৃণমূল যুব কংগ্রেস। সেই মিছিল শেষে যুব তৃণমূল সভাপতি তীব্র আক্রমণ শানালেন গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে।


ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ এদিন বলেন, ‘যারা বিবেকানন্দের নাম ঠিক ভাবে উচ্চারণ করতে পারে না, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে, যারা বলে বিদ্যাসাগর সহজপাঠ লিখেছে। তাদের আপনারা ক্ষমা করবেন? এই বিজেপির মুখে রাম, কর্মে নাথুরাম। মুখে বিবেকানন্দ, কর্মে ধর্মে ধর্মে দ্বন্দ্ব। এদের অধিকার নেই, বিবেকানন্দর ছবি নিয়ে মিছিল করার। স্বতঃস্ফূর্ততায় ওদের মিছিল ১০ গোল খেয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করতে দেবে না বাংলা।’ “বিবেকানন্দের শিক্ষাদীক্ষা যদি কেউ নিজের মধ্যে নিয়ে কাজ করেন তাহলে ভারতের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

স্বামীজি মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বলেছিলেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী করেছেন, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড বাড়ির মহিলাদের নামে করে দিয়েছেন। ভারতবর্ষে একটা রাজ্য দেখান তো, যেখানে পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ রয়েছে। একমাত্র বাংলা।”
অভিষেক এদিন বলেন, “এদিন যে মিছিল হল তার স্বতঃস্ফূর্ততার কাছে অন্য যে কোনও মিছিল ১০ গোলে হেরে যাবে।” মোতেরা স্টেডিয়ামে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিবেকানন্দের নাম ভুল উচ্চারণের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান যুব তৃণমূল সভাপতি।

তিনি বলেন, “ট্রাম্পকে ধরে নিয়ে এল। বিবেকানন্দের নাম উচ্চারণ্ন করতে পারে না। বলল বিবেকামুণ্ড। আর পাশে বসে এদেশের সবচেয়ে বড় ধর্মের ভাঁওতা বাহক হাততালি দিচ্ছে। বিজেপির কোনও অধিকার নেই স্বামীজির ছবি নিয়ে রাস্তায় নামার।”

স্ট্যাচু অফ ইউনিটি তথা সর্দার বল্লভ ভাই পটেলের মূর্তি নিয়েও খোঁচা দেন যুব তৃণমূল সভাপতি। তিনি বলেন, “গুজরাতে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে সর্দার বল্লভভাই পটেলের মূর্তি বসল। আমাদের তাতে কোনও আপত্তি নেই। সর্দারজি আমাদের কাছে দার্শনিক। কিন্তু বাংলায় কেন স্বামীজি বা নেতাজির মূর্তি বসল না তাঁর জবাব দিতে হবে বাংলার মানুষের কাছে।” তাঁর কথায়, “ওরা মুখে বলে জয় শ্রীরাম। আর কর্মে ওদের নাথুরাম। ওরা মুখে বলে বিবেকানন্দ আর কর্মে ওদের ধর্মে ধর্মে দ্বন্দ্ব।”

বাংলায় কেন ৩ হাজার কোটি খরচ করে স্বামীজি, নেতাজির মূর্তি হবে না? ২০১৪ সালে স্বামীজির ছবি নিয়ে যারা ভোট প্রচার করেছিল, ভোটে জয়ী হওয়ার পর তারা বেলুড় মঠকে মর্যাদা দেয়নি।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মনীষীদের পথেই চলেছেন, তা উল্লেখ করে অভিষেক বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বামীজির দেখানো পথেই চলেছেন। এই লড়াইতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতবেন, কিন্তু দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না।’


অভিষেকের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করেনি বিজেপিও। যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ নাম না বলেন, “একজন কয়লা চোর, গরু চোর, পাথর-বালি পাচারকারীরদের সর্দার বিবেকানন্দকে নিয়ে কথা বলবেন সেটা বাংলার মানুষ শুনবে না।”

লোকসভা ভোটের আগে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে ব্যাপক রাজনৈতিক জলঘোলা হয়েছিল বাংলায়। বিধানসভার আগে এবার হাতিয়ার বিবেকানন্দও।

উল্লেখ্য, এদিন সকালেই বিবেকানন্দর সিমলা স্ট্রিটের বাড়িতে মুখোমুখি পড়ে যান রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। দুজনের মধ্যে সৌজন্য বিনিময় করেন দুজন। কিন্তু কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি সুদীপ। বলেন, ‘সর্দার প্যাটেলের ৩০০০ কোটির মূর্তি হয়েছে। এবার কলকাতাতেও একটা বিবেকানন্দর মূর্তি হোক।’ এদিন স্বামীজির জন্মদিন উপলক্ষ্যে মিছিল করেন মুকুল রায়, রাহুল সিনহা, দিলীপ ঘোষ, স্বপন দাশগুপ্ত, সব্যসাচী দত্তরা। সেই মিছিলকে অবশ্য ছাপিয়ে গিয়েছে দক্ষিণ কলকাতায় তৃণমূলের মিছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here