দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কৃষি আইন নিয়ে সোমবারই সুপ্রিম কোর্টে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল মোদী সরকারকে। আপাতত কেন্দ্রকে কৃষি আইন স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। আর মঙ্গলবার কৃষি আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই কৃষকদের কথা শোনার জন্য বিশেষ কমিটি গঠনের কথা জানালো প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তিনটি কৃষি আইন স্থগিত রাখা হল সুপ্রিম কোর্টের তরফে। একইসঙ্গে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হল। ওই কমিটিতে আছেন, এইচএস মান, প্রমোদ কুমার যোশী, অশোক গুলাটি ও অনিল ধানওয়ান্ত।

নয়া কৃষি আইনের বৈধতা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটিও গঠন করল শীর্ষ আদালত। অর্থাৎ যতদিন পর্যন্ত না পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, ততদিন আইনগুলি কার্যকর করা যাবে না।


সম্পূর্ণভাবে আইন প্রত্যাহার করতে হবে সরকারকে। বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন নিয়ে আগেই নিজেদের এই অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু আইন তিনটির বৈধতা খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়া ছাড়া পথ নেই, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত একটি বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়া। আইন স্থগিত রাখার ক্ষমতা রয়েছে আমাদের।

কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য আইন স্থগিত রাখা যায় না। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইনের বিরোধিতা করে আদালতে যে সমস্ত পিটিশন জমা পড়েছিল, মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় তার শুনানি শুরু হলে আদালত জানিয়ে দেয়, ‘এর সঙ্গে জীবন ও মৃত্যু জড়িয়ে। আইন তিনটি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন আমরা। একটানা আন্দোলনের জেরে মানুষের জীবনযাত্রা এবং সম্পত্তির উপরও প্রভাব পড়েছে। যতটা ভালভাবে সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি আমরা।’ 


পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে কৃষকদের আন্দোলন থামানোর জন্য সবরকম চেষ্টা করবে সু্প্রিম কোর্ট। উভয়পক্ষের মধ্যে জট কেন কাটছে না, তা বোঝারও চেষ্টা করেছে আদালত। পাশাপাশি কৃষকরা যাতে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ না করে রামলীলা ময়দানে তাঁদের আন্দোলন চালানোর জন্য দিল্লির পুলিশ কমিশনারের কাছে অনুমতি চান তার পরামর্শও দেন প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে।

উল্লেখ্য, সোমবারই কেন্দ্রের উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘কেন কেন্দ্রের তরফে কৃষকদের আবেদনে কোনও সাড়া দেওয়া হচ্ছে না? সরকারই তো ধরনার পরিবেশ তৈরি করেছে। এই আইনের প্রয়োগ রদ করা হলেই আমরা আলোচনার টেবিলে বসে কৃষকদের সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করার নির্দেশ দেব৷ সরকার আইনের প্রয়োগ রদ করবে, নাকি আমরা স্থগিতাদেশ জারি করব?’ কেন্দ্রের প্রতিনিধি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘কোনও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হলে তার দায় কার উপরে বর্তাবে? সংবিধানকে রক্ষা করার দায় আদালতের, এই পরিস্থিতিতে কোনও সমস্যা হলে দায়ী থাকব আমরা প্রত্যেকেই৷ আমরা চাই না, কোনও রক্তপাত হোক৷’ এর পরেই প্রধান বিচারপতি প্রস্তাব দেন আদালতের তরফে একটি কমিটি গঠনের৷ এদিন সেই কমিটি গঠন করা হল।

মঙ্গলবারই এই মর্মে রায় দিল শীর্ষ আদালত। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠনের নেতা হান্নান মোল্লা বলেছিলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে রায়ের কোনও মিল থাকে না। এই মামলায় কী হয়, সেদিকেই আমাদের কড়া নজর থাকবে। রায়দান না-হওয়া পর্যন্ত কিছু বিশ্বাস করা উচিত হবে না। সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব। ১৫ তারিখের বৈঠকেও যাব।’ যদিও এদিনের রায়ের পর বেশ খুশি কৃষকরা। কার্যত জয়ের স্বাদ পাচ্ছেন তাঁরা।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবড়ে বলেন, ‘তিনটি কৃষি আইনের বৈধতা নিয়ে আমরা যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি মানুষের জীবন বাঁচানোরও দায় রয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের। তাই মানুষ ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য কোনও আইন স্থগিত রাখার ক্ষমতা আমাদের হাতে রয়েছে।’ আর সেই কারণেই কৃষকরা যাতে তাঁদের মনের কথা খুলে বলতে পারে, তার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হতে পারে। কিন্তু কৃষকদের নাছোড় মনোভাবের সামনে কমিটি গঠন কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here