দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন রাজ্যের ১৯ হাজার ১১৭ জন। অর্থাৎ হিসেবমতো পরপর দু’দিনই একটু কমেছে সংক্রমণ। তবে একদিনে মারা গেছেন ১৪৭ জন, যা কোনও ভাবেই স্বস্তি দিচ্ছে না। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা জয় করে সুস্থ হয়ে উঠেছেন রাজ্যের ১৯ হাজার ১১৩ জন। অর্থাৎ সংক্রমণ ও সুস্থতা প্রায় সমান। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৮৭. ২০শতাংশ। রাজ্যে এই মুহূর্তে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজার ৮০৫। এদিকে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে রাজ্যের সুস্থতার হার। 

স্বাস্থ্য ভবনের বুলেটিন বলছে, রাজ্যে এদিনে যাঁরা কোভিডে মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে ৩৯ জনই উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। দৈনিক মৃত্যুর নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে এই জেলাই। এর পরেই রয়েছে কলকাতা, একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় করোনার বলি ১৬ জন।

রাজ্যে কোভিড রোগীদের দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বে়ড়ে ফের দেড়শোর কাছাকাছি পৌঁছল। এই নিয়ে টানা দু’দিন। রবিবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৭ জন সংক্রমিতের মৃত্যু হয়েছে। সে সঙ্গে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ফের ১৯ হাজারের গণ্ডি পার করেছে। গত কয়েক দিন ধরে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এর মোট হার দাঁড়িয়েছে ৯.৯১ শতাংশে। যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ফের ৪ হাজারের বেশি নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। কলকাতায় দৈনিক আক্রান্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার।

পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে যাঁরা সংক্রমিত, তাঁদের মধ্যে ৪ হাজার ১১৬ জনই উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। অর্থাৎ দৈনিক সংক্রমণের নিরিখেও ফের গোড়ায় রয়েছে ওই জেলা। দ্বিতীয় স্থানে কলকাতা। এ শহরে তিন হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এদিন।

তবে শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের করোনা গ্রাফও রীতিমতো ভয় ধরিয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের। রাজ্যের মোট আক্রান্তের সংখ্যা এই পর্যন্ত বেড়ে হয়েছে ১১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৪৩০। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনাজয়ীর সংখ্যা ৯ লক্ষ ৮৮ হাজার ৩৪১। একদিনে কোভিড টেস্ট হয়েছে ৬৪,৩২৭ জনের।

স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৪৭ জনের মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতার বাসিন্দা যথাক্রমে ৩৯ ও ৩৩। এ ছাড়া, ওই সময়ের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৬, জলপাইগুড়িতে ৮, হাওড়া এবং উত্তর দিনাজপুরে ৭ জন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদের ৬ জন করে সংক্রমিত মারা গিয়েছেন। অন্য দিকে, দার্জিলিং এবং বীরভূমে ৫ জন করে কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, বাঁকুড়ায় ৪, হুগলিতে ৩, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, এবং পশ্চিম বর্ধমানে ২ জন করে মারা গিয়েছেন। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ১৩ হাজার ২৮৪ জনের কোভিডে মৃত্যু হল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ১১৭ জন। এর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা দৈনিক আক্রান্ত ৪ হাজার ১১৬। কলকাতায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৩ হাজার ৪৫১ জন। অন্য দিকে, হুগলি (১,৩৩৯), হাওড়া (১,২২২), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১,২৩৬), নদিয়া (৯৯৪), পশ্চিম মেদিনীপুর (৯০৩), পূর্ব মেদিনীপুর (৮৪৯), পশ্চিম বর্ধমান (৬৯৬), পূর্ব বর্ধমান (৬০৫), বাঁকুড়া (৫৪৪), দার্জিলিং (৫০৯) জেলায় আক্রান্তের দৈনিক সংখ্যা উদ্বেগজনক। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ১১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৪৩০ জন।

সংক্রমণ রুখতে টিকাকরণ কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের ৬০ হাজার ১৩৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই সঙ্গে, ওই সময়ের মধ্যে কোভিড টেস্ট হয়েছে ৬৪ হাজার ৩২৭টি। তবে সংক্রমণের দৈনিক হার ৩০.৩৩ শতাংশে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ রুখতে আজ, রবিবার থেকে ১৫ দিনের জন্য জারি করা হয়েছে একগুচ্ছ বিধিনিষেধ। রবিবার থেকে ৩০ মে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলায় কার্যত লকডাউন পরিস্থিতি। সমস্ত স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অফিসগুলি খোলা থাকবে। শপিং মল, স্পা, বিউটি পার্লার, সিনেমা হল, স্পোর্টল কমপ্লেক্স বন্ধ থাকবে। লোকাল ট্রেন, বাস, মেট্রো, লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ থাকবে। সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বাজার থাকবে। মিষ্টির দোকান খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বাইরে বেরোনো যাবে না। শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বিধিনিষেধের কথা জানালেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, সরকারি ভাবে লকডাউনের কথা না জানালেও যে কডাকড়ি করা হল, তাতে রাজ্যে কার্যত লকডাউন পরিস্থিতি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here