দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতা ও হাওড়া কর্পোরেশনের ভোটের দিন স্থির করে বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিল রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। ১৯ ডিসেম্বর ভোট ও ২২ ডিসেম্বর ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষনার জন্য নির্ধারিত হয়েছে । কমিশন সূত্রে খবর, আজ বিকেলে রাজ্য সরকারের পুর ও নগরোন্নয়ন মদফতরের তরফে এই সংক্রান্ত চিঠি প্রথমে মেল করে ও পরে স্পেশাল মেসেঞ্জার মারফৎ কমিশনের দপ্তরে পাঠানো হয়।

গতকালই জানা গিয়েছিল ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচন হতে চলেছে। তার সঙ্গে হাওড়া ও বিধাননগরের ভোটের কথাও শোনা গিয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল সূত্রে খবর, ক্রিসমাসের আগে কলকাতার সঙ্গে হাওড়ার ভোট হয়ে গেলেও বিধাননগর কর্পোরেশনের ভোট তখনই হবে না। তা পরে হবে।

তবে কী কারণে বিধাননগরে ভোট হচ্ছে না তা স্পষ্ট নয়। বিধাননগর কর্পোরেশন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে। সব্যসাচী দত্ত মেয়র থাকাকালীনই মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা, বাড়িতে যাওয়া, লুচি-আলুরদম খাওয়া নিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছিল লবনহ্রদের রাজনীতিতে। তারপর সুজিত বসুর ক্লাবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের উপস্থিতিতে বৈঠকের পরেও বরফ গলেনি। শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণা চক্রবর্তী, তাপস চট্টোপাধ্যায়রা অনাস্থা আনেন সব্যসাচীর বিরুদ্ধে। তারপর আস্থা ভোটের মুখোমুখি হননি সব্যসাচী। মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিদেশে বেড়াতে চলে গিয়েছিলেন। তারপর বিধাননগরের মেয়র পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসিয়েছিলেন দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে। মেয়াদ ফুরনোর পর প্রশাসকমণ্ডলীর মাথাতেও রয়েছেন কৃষ্ণা।

কিন্তু সেই সব্যসাচী এখন বিজেপি ঘুরে ফের তৃণমূলে ফিরেছেন। ফলে বিধাননগরের তৃণমূলের সমীকরণেও বদল হয়েছে বলে মত অনেকের। সেসব দিক ভাবনাচিন্তা করার জন্যই বিধাননগরের পুরভোট তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার পরে করতে চাইছে কি না তা স্পষ্ট নয়।

হাওড়া কর্পোরেশনের মেয়াদ ফুরিয়েছে বছড় আড়াই হয়ে গেল। সেই থেকে পুর প্রশাসকমণ্ডলীই হাওড়া পুরসভার কাজ পরিচালনা করছে। একাধিকবার সেই প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান ও সদস্য বদল করেছে নবান্ন। এবার ভোট হবে হাওড়ায়।
গত বছর মে মাসে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়াদ ফুরিয়েছিল। একইসঙ্গে শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, আসানসোল ও চন্দননগর কর্পোরেশনেরও মেয়াদ ফুরিয়েছে ’২০ সালের মে মাসে। তা ছাড়া শতাধিক পুরসভাতেও এখন কাজ চালাচ্ছে প্রশাসকমণ্ডলী। গতবার পুর ভোটের বছরে কোভিডের কারণে তা হয়নি। নবান্নের বক্তব্য ছিল তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। সংক্রমণ হুহু করে ছড়ালে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। মহামারী কারোন দেখিয়ে ভোট করেনি রাজ্য সরকার। যাকে বিজেপি বলেছিল, একুশের আগে টেস্ট পরীক্ষা দিতে চাইছে না তৃণমূল।

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায় ইঙ্গিত মিলেছে ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা ও লাগোয়া হাওড়ার ভোট হতে পারে। তবে সেইসঙ্গে বিধাননগর হচ্ছে না বলেই খবর।

আগেই, প্রথা মাফিক রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে ফোন করেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সূত্রের খবর, মন্ত্রী দুই কর্পোরেশনের ভোটের বিষয়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান কমিশনারকে। ভোটের জন্য নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি ও নির্ঘণ্টর খসড়া চূড়ান্ত করা নিয়েও তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। পুরভোট সংক্রান্ত চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছে কমিশন। কমিশনের এক কর্তা বলেন, ‘রাজ্য সরকারের চিঠি পেয়েছি। ভোটের জন্য কমিশন প্রস্তুত। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে খুব শিগগিরই কলকাতা কর্পোরেশনের মোট ১৪৪টি ও হাওড়া কর্পোরেশনের মোট ৬৬টি ওয়ার্ডের ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে কমিশন।’

তারপর জানুয়ারি মাসের মধ্যেই ধাপে ধাপে বাকি পুরসভা ও পুরনিগমগুলির ভোট করে ফেলতে চায় নবান্ন। তবে ফেব্রুয়ারির আগেই এই ভোট প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কারণ গত সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যামিকের রুটিন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই দুই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চলবে। তখন কোনও ভাবেই ভোট করা সম্ভব নয়।

২০২০ সাল থেকে কলকাতা পুরসভায় ভোট বকেয়া রয়েছে৷ হাওড়ায় ভোট বাকি রয়েছে ২০১৯ সাল থেকে৷ দীর্ঘদিন ধরেই পুরভোট করানোর দাবি তুলছিলেন বিরোধীরা৷ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরই ভোটের করানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার৷ তবে উপনির্বাচনের পরেই যে রাজ্যে পুরভোট হতে পারে, আগেই সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

গত দিনই রাজ্যের চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে৷ সর্বত্রই বিপুল জয় পেয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ পুজোর পর রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলেও এখনও তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই মনে করছে রাজ্য প্রশাসন৷ অন্যদিকে, রাজ্যে শাসক দলের প্রতি জনসমর্থনে যে ভাঁটা পড়েনি বরং তা বেড়েছে, ভোটের ফলেই তা স্পষ্ট৷ ফলে পুরভোটের জন্য এটাই উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসন এবং শাসক শিবির৷ কলকাতা এবং হাওড়া ছাড়াও রাজ্যের শতাধিক পুরসভায় নির্বাচন বাকি রয়েছে৷ কলকাতা এবং হাওড়ার পর ধাপে ধাপে সেগুলিও করিয়ে নেওয়া হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here