শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেবের সংঘাত নতুন নয়:

পিয়ালী মুখার্জী, কলকাতা : ফের একবার বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হল বনগাঁর সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের৷ কয়েকদিন আগেই কেন্দ্রে মন্ত্রী করা হলেও তাঁর উপরে যে দলের রাজ্য নেতৃত্ব বিশেষ খুশি নয়, বুধবার কলকাতায় দলের সাংগঠনিক বৈঠকে সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছে শান্তনুকে৷ সূত্রের খবর, দলের কেন্দ্রীয় নেতা শিব প্রকাশ নিজে শান্তনুকে সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন৷ প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে কিছু না বললেও ঘনিষ্ঠ মহলে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে নিয়ে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর৷

শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেবের সংঘাত বেশ পুরনো৷ একা শান্তনু নন, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় দলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সংগঠনের নেতাদের কার্যত কোনও যোগাযোগই নেই বলে অভিযোগ বিজেপি-র অন্দরে৷ যে কারণে বার বার অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে বিজেপি-কে৷ যেমন কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বনগাঁয় দলের সাংগঠনিক বৈঠক করতে গেলেও সেই বৈঠকে গরহাজির ছিলেন দলের একাধিক বিধায়ক৷ বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের ক্ষেত্রে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে৷ ফলে তাঁর অনুপস্থিতিকে গুরুত্ব দেয়নি বিজেপি৷ কিন্তু বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুররাও বৈঠকে গরহাজির ছিলেন৷

এই পরিস্থিতিতে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় দলের মধ্যেকার এই কোন্দল মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব৷ সেই কারণেই এ দিন নরমে গরমে বার্তা দেওয়া হয় শান্তনুকে৷ মূলত মতুয়া ভোটের দিকে তাকিয়েই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা ভেঙে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৈরি হয়৷ তা নিয়ে বসিরহাটের নেতাদের মধ্যে এমনিতেই ক্ষোভ ছিল৷ বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা গঠনের পর থেকেই শান্তনুর সঙ্গে মনস্পতির মতের মিল ছিল না বলেই বিজেপি-র অন্দরের খবর৷ কিন্তু সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনের পর বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে৷ শান্তনু ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, বনগাঁর সাংসদ এতদিন মুখ বুজে সব মেনে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু গত বেশ কিছু দিন ধরেই মনস্পতি দেব শান্তনুকে কোণঠাসা করার চেষ্টা শুরু করেছেন বলে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ৷
মনস্পতি দেব দীর্ঘদিন আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ দলের আদি নেতাদের মধ্যে অন্যতম তিনি৷ সেই কারণেই দলের রাজ্য নেতৃত্বের আস্থাভাজন হিসেবেই পরিচিত মনস্পতি দেব৷ সেই কারণেই শান্তনুকে এ দিন রফা করে নেওয়ার বার্তাই কার্যত দেওয়া হল বলে মনে করা হচ্ছে৷

শান্তনু ঠাকুর অবশ্য বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি৷ যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে বনগাঁ জেলার এই কোন্দলের জন্য দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশকেই দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী৷ তাঁর অভিযোগ, সমস্যা তৈরি করে দিয়ে এখন তাঁর দায় নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট রাজ্য নেতারা৷

উল্লেখ্য , গত শনিবার বনগাঁয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সংবর্ধনায় হাজির ছিলেন শুভেন্দু, দেখা যায়নি দলের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস কে! সেই অনুষ্ঠান ঘিরেও ফের প্রকাশ্যে আসে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব৷

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পর গত শনিবার ২০ আগষ্ট বনগাঁয় পা রাখেন মতুয়া বাড়ির ছেলে শান্তনু ঠাকুর। শান্তনু ঠাকুরকে ঘিরে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। শান্তনু ঠাকুরকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করে বিজেপি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জে সেই সংবর্ধনার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন বনগাঁ বিজেপির দাপুটে নেতা দেবদাস মন্ডল। অনুষ্ঠানে হাজির হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরাও।তবে এই অনুষ্ঠানে দেখা গেল না বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে। অনুষ্ঠানে আসেননি বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেব, দলের বনগাঁ পৌর মণ্ডলের (উত্তর) সভাপতি শোভন বৈদ্য সহ অনেককেই। এর ফলে বনগাঁয় বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে চলে আসে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের৷ ওই অনুষ্ঠানের বিষয়ে বনগাঁ বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেব জানিয়েছিলেন, এমন কোনো অনুষ্ঠানের কথা আমার জানা নেই আমাকে কেউ যানায়নি । এটা কোনো স্থানীয় স্তর থেকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছে আর এখানে শুভেন্দু দা আসবে এই বিষয়ে রাজ্য থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি ।

যদিও এই বিষয়ে তৃণমূল কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বনগাঁ পৌর প্রশাসক গোপাল শেঠ বলেন এটা বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল কিনা আমরা জানি না । কিন্তু দল যে ভেঙে যাচ্ছে তার একটা প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাচ্ছি বনগাঁতে ।

পাশাপাশি টাকা নিয়ে বিজেপি-তে যোগদানের চেষ্টা! হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট ঘিরে বিতর্ক ছড়িয়েছে বনগাঁর রাজনীতিতে৷ এক কথায় বনগাঁ বিজেপি-র যেন বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here