দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ। সারা দেশের মতো বাংলাতেও কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা রেকর্ড তৈরি করছে রোজ। এ নিয়ে বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাঠগড়ায় তুলতে চাইলেন বিজেপিকে। এদিন জলপাইগুড়ির জনসভা থেকে মমতা বলেন, “এই বিজেপি বাইরে থেকে হাজার হাজার লোক ঢোকাচ্ছে। তারা রোগ ছড়িয়ে দিয়ে পালাচ্ছে”।

এদিন দিদি আরও বলেন, “আমি কতবার বললাম, আমায় ইঞ্জেকশনগুলো দিন। আমি পয়সা দিয়ে কিনে নিয়ে রাজ্যের সব মানুষকে টিকা দেব। আমায় দিল না। এদের জন্যই করোনা আবার বাড়ছে। এরা কিচ্ছু কন্ট্রোল করতে পারে না।”


কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সারা দেশেই লন্ডভণ্ড অবস্থা। আজকেই কেন্দ্রীয় সরকার সিবিএসই-র দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করে দিয়েছে। পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাও। রাজ্য সরকারও ইতিমধ্যে জেলাগুলিকে বলেছে, হাসপাতালে কোভিড বেড দ্রুততার সঙ্গে বাড়াতে হবে। পরিস্থিতি যখন এমনই তখন বাংলায় করোনা সংক্রমণের জন্য বিজেপিকে দায়ে করলেন মমতা।

বিজেপির বিরুদ্ধে বহিরাগত ঢোকানোর অভিযোগ তৃণমূলের নতুন নয়। প্রথম দফার নির্বাচনের আগে থেকে এ নিয়ে জনসভাগুলিতে সরব দিদি। তাঁর কথায়, বাংলায় ভোট করাতে বিজেপি বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে গুণ্ডাদের ঢোকাচ্ছে। মাথায় গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে, মুখে পান ভার চিবোতে চিবোতে তারা গুণ্ডামি করছে।

পঞ্চম দফার নির্বাচনের আজই শেষ প্রচার। ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। তা ছাড়া সোমবার রাত আটটা থেকে মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত মমতার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বারাসত ও বিধাননগরে সভা করেন দিদি।

এদিন নির্বাচন কমিশনের নাম না করে মমতা বলেন, “আপনারা তো জানেন আমার ৯৬ ঘণ্টা লস হয়ে গেছে। এদিকে ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ ও দিকে ২৪ ঘণ্টা আমাকে করতে দেওয়া হয়নি। তাই এই সময়ের মধ্যেই আমাকে এই প্লাস্টার করা পা নিয়ে সবটা ম্যানেজ করতে হচ্ছে।”

সারা দেশের মতো রাজ্যেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সারা দেশের একাধিক রাজ্যে দেখা দিচ্ছে টিকার সংকট। রাজ্যে কোভিডের টিকাকরণ নিয়ে মঙ্গলবারও কেন্দ্রীয় সরকারকে দুষেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারাসত ও বিধাননগরে মঙ্গলবারের নির্বাচনী সভা থেকেও কোভিড টিকা সরবরাহ নিয়ে কেন্দ্রের গাফিলতির কথা তুলে ধরলেন তিনি। বললেন, ‘‘টাকা নিয়ে বসে আছি, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার টিকা দিচ্ছে না।’’ তার মতে, রাজ্য সরকার বিনামূল্যে টিকা দিতে চাইলেও কেন্দ্রীয় সরকার টিকা পৌঁছে দিতে চাইছে না।

মমতা বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, আমি ফেব্রুয়ারি মাসে মোদীকে চিঠি লিখেছিলাম। বলেছিলাম, সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেব, আপনারা রাজ্যে টিকা পৌঁছে দিন। কিন্তু দিল না।’’ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। মমতার যুক্তি, ‘‘যখন করোনার প্রকোপ কমে এসেছিল, তখন সবাইকে টিকা পৌঁছে দিতে পারলে সংক্রমণ অনেকটাই কমত। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। তাই দেশে নতুন করে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পিছনে দায়ী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ও তার স্বাস্থ্য মন্ত্রক।’’

গুজরাতের টিকাকরণ প্রসঙ্গও এ দিন টেনে আনেন মমতা। বলেন, ‘‘আমি সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, গুজরাতে বিজেপি-র দলীয় কার্যালয় থেকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি টিকার কী বোঝে? আমাদের এখানে এ সব হয় না। সরকারি নিয়ম মেনে চলতে হয়।’’

এদিনের মতো মঙ্গলবারও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ করেন মমতা। বলেন, ‘‘আমি টাকা নিয়ে বসে আছি, দিল্লি টিকা দিচ্ছে না। তাই আমি যতটুকু জোগাড় করতে পেরেছি, বুধবার থেকে কলকাতা ও পুর শহরগুলিতে বিনা পয়সায় টিকা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। যার যার প্রয়োজন, যেখানে যেখানে ওয়ার্ড অফিস আছে, সেখান থেকে টিকা পাবেন। শুধু নির্বাচনের দিন ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে, ইলেকশন শেষ হলে তার পর আবারও চালু হবে।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here