দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃবাংলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কিছুটা বৃদ্ধি হয়েছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ হয়েছে মৃতের তালিকা। রাজ্যে এই মুহূর্তে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্য়া ১,২৫৯ জন। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে এমনই জানালেন মুখ্যচিব রাজীব সিনহা। এছাড়া ৬১ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আর এই মুহূর্তে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯০৮ জন।

মুখ্যসচিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ঘণ্টায় কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। কারণ রবিবার পর্যম্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৫০। মুখ্যসচিবের দাবি, রাজ্যে প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যা পিছু মৃত্যুর সংখ্যা ১.৪৭। সুস্থ হয়ে ওঠার হার প্রতি ১০ লাখে ১৩.৯৮। প্রতি ১০ লাখ নমুনা পরীক্ষায় ১৩.৯৮ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। কোভিড-১৯-এ মৃত্যু প্রসঙ্গে রাজীব সিংহ জানান, রাজ্য নিযুক্ত কোভিড মৃত্যু সংক্রান্ত অডিট কমিটি ১০৫ জন কোভিড আক্রান্তের মৃত্যু নিয়ে অডিট করে ৩৩ জনকে চিহ্নিত করে করোনার কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে। বাকি ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে কো-মর্বিডিটির কারণে।

এ দিন মুখ্য সচিব স্বীকার করেন, রাজ্যে টেস্ট ল্যাবের সংখ্যা কম থাকার জন্য প্রথম দিকে নমুনা পরীক্ষা কম হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন ত্রুটিযুক্ত কিটের জন্যও নমুনা পরীক্ষা কম হয়েছে। রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘১০ দিন আগেও প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যায় নমুনা পরীক্ষা করা হত ১০৯ জনের। সেই নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে বর্তমানে প্রতি ১০ লাখে ২৭৯ হয়েছে।” তিনি এ দিন জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ২০১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ২৫ হাজার ১১৬টি নমুনা।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে মিজোরাম হাউসের এক বাসিন্দার। তিনি কোভিড আক্রান্ত ছিলেন। ফলে মিজোরাম হাউসের ২৬ জনকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে, জোড়াবাগানের বাসিন্দা এক মহিলারও নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে।পুলিশের পর শহরে কোভিড আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেল এক সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানের। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, ওই বিএসএফ জওয়ান করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দলের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি এমআর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রাজ্য সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬১। এই মুহূর্তে মোট করোনায় চিকিৎসাধীন ৯০৮ জন। আর মোট সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২১৮ জন। এছাড়া এখনও পর্যন্ত ২৫,১১৬টি করোনা টেস্ট করা হয়েছে। রাজ্যে করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠার হার ১৭.৩২ শতাংশ বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

গতকালই কোভিডে সংক্রামিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কলকাতা পুলিশের আরও এক অফিসার। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, উত্তর কলকাতার একটি ট্রাফিক গার্ডের এক ট্রাফিক সার্জেন্ট  এবং কনস্টেবলও করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে।  লালবাজার সূত্রে খবর, কলকাতা পুলিশের যে আধিকারিক রবিবার কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁর পরিচারিকাকে কোয়রান্টিনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ওই পুলিশ কোয়াটার্সে তিন জন পরিচারিকা। তাঁদের সকলকেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

এদিন মুখ্যসচিবের প্রেস কনফারেন্স শেষ হতে না হতেই লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, একটা সরকার কতটা মিথ্যাচার করতে পারে, তার শীর্ষ আমলা কতরকম বাহানা করতে পারে এই সংকটের পরিস্থিতিতে তা দেখা গেল। মানুষের নিয়ে কীরকম ছেলেখেলা হচ্ছিল তাও বোঝা গেল। কোনও দায়িত্বশীল সরকারের মুখ্যসচিব প্রেস কনফারেন্সে বলতে পারেন, এতদিন আমাদের কাছে সব তথ্য আসছিল না। এখন আসছে! মুখ্যসচিবের এ কথা শুনে মানুষ হাসবে না কাঁদবে সেটাই ভাবছি!

এদিকে, দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩ হাজারের দোড়গোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশজুড়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২,৫৭৩ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, এই মুহূর্তে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২,৮৩৬ জন। এর মধ্যে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ২৯,৬৮৫ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১১,৭৬২ জন। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩৮৯ জন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here