দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বসন্ত উৎসবে ক্যাম্পাসে বেনজির অসভ্যতার দায় নিয়ে ইস্তফা দিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন উপাচার্য। প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও।

রবীন্দ্রভারতী কাণ্ডে গতকালই দায় নিয়েছিলেন উপাচার্য। এরপর গত চব্বিশঘণ্টায় বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর বিরূদ্ধেও তীব্র সমালোচনা করা হয়। অনেকে বলেন, উপাচার্যের নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই ঐতিহ্যের ক্যাম্পাসে এই ধরনের অসভ্যতা, অশ্লীলতা হয়েছে। তারপরই ইস্তফা দিয়ে দেন উপাচার্য।

বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে হুহু করে ছড়িয়ে পড়েছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসবের ছবি। তরুণীদের পিঠ আর তরুণদের বুকে নানা রঙের আবির দিয়ে লেখা অশ্লীল শব্দ। আর তা দেখিয়ে, পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে-বসে চলে দেদার ফটোশ্যুট। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সামনে আসে ওই তরুণ-তরুণীদের পরিচয়। জানা যায় তারা কেউ রবীন্দ্রভারতীর পড়ুয়াই নয়।

শুক্রবার তারা ক্ষমা চাইতে হাজির হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। মুখ ঢেকে বসে থাকতে দেখা যায় ওই তরুণ-তরুণীদের। এর পরে অভিযোগ উঠছে, গোটা ঘটনায় দায় এড়াতে চাইছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদ। অনেকের বক্তব্য, একটা সময় পর্যন্ত অধ্যাপক-অধ্যাপিকারাই এই অনুষ্ঠান করতেন। তাঁদের হাতেই থাকত সবকিছু। কিন্তু ছাত্র সংসদের হাতে সবটা ছেড়েই শৃঙ্খলার সঙ্গে আপস করেছে কর্তৃপক্ষ।
রবীন্দ্রভারতীর ঘটনা নিয়ে এদিন তীব্র নিন্দা করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থবাবু এদিন বলেন, “এটা কী হচ্ছে বলুন তো! কী চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।” তিনি আরও বলেন, “ওই তরুণ-তরুণীদের অভিভাবকরা দেখলে তাঁরাও চোখের জল ফেলবেন। কী ভাষা! এই ঘটনা লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট করে দিয়েছে।” শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “আমি উপাচার্য এবং প্রশাসনকে বলেছি, যা ভাল মনে হয় করুন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলেছি সামনের বার থেকে এই ধরনের ঘটনা যাতে কোনও ভাবেই না ঘটে।”
বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রভারতীতে অপসংস্কৃতির আমদানি করেছিল বহিরাগত ছাত্রীরা, আর বাংলাজুড়ে তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হতেই নৈতিক দায় নিয়ে উপাচার্যের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী।

নৈতিক দায় নাকি শাসক শিবিরের তরফে জবাবদিহি চাওয়ার জন্য অপমান-ঠিক কোন কারণে সব্যসাচী বাবু ইস্তফা দিলেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। যদিও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখনও সব্যসাচী বাবুর ইস্তফাপত্র তিনি পাননি।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই কুরুচিকর ছবির প্রেক্ষিতে শুক্রবার সিঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর তা নিয়ে শাসকদলের এক নেতা সব্যসাচী বাবুর কাছে জবাবদিহি চান বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে আঘাত পান বলে জানাচ্ছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল। তাই উপাচার্যের পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিয়ে দিলেন বলে মনে করছেন অনেকে।
আধুনিকতা দেখাতে গিয়ে অপসংস্কৃতির পথ ধরেই যেন এগিয়ে চলেছে বাংলার নবীন সমাজ। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসবে পিঠে রবীন্দ্রনাথের গানের কুরুচিকর প্যারোডির শব্দ লিখে বিতর্কে কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া। সমাজের সবস্তর থেকেই এই ঘটনার পর উঠেছে নিন্দার ঝড়।
যদিও রবীন্দ্রভারতী কাণ্ডে রবীন্দ্রনাথের গান বিকৃত করে আবির দিয়ে বুকে-পিঠে লেখা অশ্লীল শব্দ কাণ্ডে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইল ৫ পড়ুয়া। এরা সকলেই বহিরাগত এবং এরা হুগলির বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় তাদের ভুল হয়েছে বলেই তারা জানিয়েছে। চন্দননগর ও চুঁচুড়ার বাসিন্দা অভিযুক্তরা। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই বলে জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিগুলিতে দেখা যায়, ইউটিউবার রোদ্দুর রায়ের গাওয়া রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিকৃত কিছু লাইন মহিলাদের পিঠে আবির দিয়ে লেখা। যা ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই অপসংস্কৃতির অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় যুক্ত পাঁচ ছাত্রছাত্রীকে শুক্রবার চিহ্নিত করা হয়।
এই ঘটনা ঘিরে নিন্দায় সরব হয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ মন্তব্য করেন, ‘রবীন্দ্রভারতীর ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এই অপসংস্কৃতিই এখন সব জায়গায় দেখতে পাই।’ তীব্র নিন্দা করেন সঙ্গীতশিল্পী শ্রাবণী সেনও।

সামনের বছর থেকে রবীন্দ্রভারতীতে বসন্ত উৎসব বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, ‘অপসংস্কৃতির মধ্যেও সংস্কৃতি বলে শব্দ আ। যারা এমন করেছেন, তাদের সামান্য সংস্কৃতি বোধ আছে বলেই মনে করি না।

অত্যন্ত লজ্জাজনক।’ একইভাবে এই ঘটনার নিন্দা করেছেন শিক্ষমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।’
কিন্তু যারা এমন কাণ্ড ঘটালো তাঁদের তেমন কিছু না হলেও শেষমেশ ‘শাস্তি’ পেতে হল উপাচার্য সব্যসাচী বাবুকেই!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here