অর্পিতা দে

ভরা বর্ষার সবে শুরু সে নিম্নচাপ হোক কিংবা শ্রাবনের ধারা, খাদ্যরসিক বাঙালির খিচুড়ির স্বাদ অল্পে কখনোও মেটে! তাই দেশের রান্নাঘরের এবারেও রইলো আরো বেশ কয়েক রকমের বর্ষার খিচুড়ির রেসিপি।

ভুনা খিচুড়ি :
উপকরণ: বাসমতি চাল ১ কাপ, হাফ কাপ মুগ ডাল, হাফ কাপ মুসুর ডাল, একটা মাঝারি মাপের পিয়াঁজ স্লাইস করে কুচানো, আদা বাটা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, লঙ্কা গুঁড়ো ১ চামচ, ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, গরমমশলা গুঁড়ো ১ চা চামচ, ভাজা জিরে মশলা ১ চা চামচ, কাজুবাদাম ৮-১০ টা, মুচমুচে ভাজা পিয়াঁজ হাফ কাপ, নুন ১ বড় চামচ, চিনি ১ বড় চামচ, তেল ২ বড় চামচ, ঘি ১ বড় চামচ, গোটা গরম মশলা, ১ টা তেজপাতা, হাফ চা চামচ গোটা জিরে৷

প্রণালী: চাল ডাল মিশিয়ে ভালো করে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তবে মুগ ডাল ধোয়ার আগে একটা ফ্রাই প্যানে সোনালী করে ভেজে নিতে কাজুবাদামগুলো অল্প ঘিয়ে ভেজে তুলে নিতে হবে। প্যানে তেল ও ঘি দিয়ে গরম হলে গোটা গরম মশলা ফোড়ন, তেজপাতা, সাদা জিরে ফোড়ন দিয়ে পিয়াঁজ ভেজে নিতে হবে।

পাঁচমিশালি ডাল ও কিমা খিচুড়ি :
উপকরণ: পাঁচমিশালি ডাল ১ কাপ, বাসমতি চাল ২ কাপ, পাঁঠার মাংসের কিমা ৫০০ গ্রাম, আদারসুন বাটা ৪ চামচ, পিয়াঁজ মাঝারি মাপের ৪ টি, ২ বড় চামচ নুন, ২ বড় চামচ হলুদ, ২ বড় চামচ লঙ্কাগুঁড়ো, ২ বড় চামচ ধনে গুঁড়ো, ২ বড় চামচ জিরে গুঁড়ো, গোটা গরম মশলা, গুঁড়ো গরম মশলা, তেল ৪ বড় চামচ, ঘি ৪ চা চামচ, জল ৪ কাপ৷

প্রণালী: চাল ডাল একসাথে মিশিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। প্রেসারকুকারে ঘি ও তেল দিয়ে জিরে ও গোটা গরম মশলা ফোড়ন দিয়ে পিয়াঁজ ভেজে নিতে হবে৷ এরপরপর একে একে সবরকম মশলা দিয়ে অল্প কষে কিমা দিয়ে নুন দিয়ে ভালো করে কষতে হবে৷ কিমার জল বেরিয়ে শুকিয়ে এলে এবং তেল ছাড়তে শুরু করলে ভেজানো চাল ডাল জল ঝরিয়ে দিতে হবে; কিমা মশলার সাথে চাল ডাল ভালো করে মিশিয়ে গরম জল দিয়ে প্রেসারকুকারের চাপা বন্ধ করতে হবে। ৩-৪ টি সিটি হলে নামিয়ে ঢাকনা খুলে গরমমশলার গুঁড়ো, ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করতে হবে৷

চিংড়ির ভুনা খিচুড়ি
উপকরণ: হাফ কাপ বাসমতি চাল, হাফ কাপ মুসুর ডাল, পিয়াঁজ কুচি ১ কাপ, রসুন কুচি ২ বড় চামচ, জিরে গুঁড়ো হাফ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো হাফ চা চামচ, লঙ্কা গুঁড়ো হাফ চা চামচ, আদা বাটা ১ চামচ, ১ টি তেজপাতা ও গোটা গরম মশলা, গোটা শুকনো লঙ্কা ৪ টি, সাদা তেল ৬ বড় চামচ, নুন ১ চামচ, ঘি ১ চামচ, খোসা ছাড়ানো ছোট চিংড়ি মাছ ৩০০ গ্রাম।

প্রণালী : কড়াইতে তেল গরম করে পিয়াঁজ ও রসুন কুচি অল্প নুন দিয়ে ভেজে নিতে হবে, ভাজা হয়ে নরম হয়ে এলে এতে পরিষ্কার করে রাখা চিংড়ি মাছ দিতে হবে৷ দুই মিনিট পরে এতে সবরকম গুঁড়ো মশলা দিয়ে ভাজতে হবে৷ তিন মিনিট পরে চিংড়ি মাছ ভাজা হয়ে গেলে শুধু মাছগুলো গ্রেভি ও মশলা বাদ দিয়ে আলাদা ভাবে তুলে নিতে হবে৷ এবার ওই মশলার মধ্যে আদা বাটা, গোটা গরম মশলা দিয়ে হালকা আঁচে নাড়তে হবে, মশলা কষা হয়ে এলে এতে চাল ও ডাল দিয়ে মাঝারি আঁচে দুই তিন মিনিট ধরে ভালো করে ভেজে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার এতে ২কাপ গরম জল দিয়ে আঁচ কমিয়ে চাপা দিতে হবে। জল শুকিয়ে এলে চিংড়ি মাছ, শুকনো লঙ্কা দিয়ে ও ঘি দিয়ে ভালো ভাবে নেড়ে নিভু আঁচে দমে চাপা দিয়ে রেখে দিতে হবে মিনিট পাঁচেক৷ এরপর গরম গরম পরিবেশন করতে হবে৷

ইলিশ খিচুড়ি
উপকরণ: ৩ কাপ গোবিন্দভোগ চাল, দেড় কাপ মুগের ডাল, মোটা করে কাটা ইলিশমাছের পেটি ৬ পিস্, ৩ বড় চামচ হলুদ সর্ষে ও ২ বড় চামচ কালো সর্ষে, ১ বড় চামচ পোস্ত, ৮ টি কাঁচা লঙ্কা, ১ বড় চামচ লঙ্কাগুঁড়ো, ২ বড় চামচ হলুদ গুঁড়ো, ১ কাপ সর্ষের তেল , ২ বড় চামচ নুন, 2 টো বড় সাইজের পিয়াঁজ মিহি করে কুচানো, ৪-৫ টি লেবু পাতা৷

প্রণালী : মুগ ডাল কড়াইতে হালকা ভেজে চালের সাথে মিশিয়ে ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে৷ দুই রকম সর্ষে, পোস্ত সামান্য নুন, তেল, ২-৩ টি কাঁচালঙ্কা ও অল্প জল দিয়ে বেটে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে; এর মধ্যে লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, সামান্য নুন ও তেল দিয়ে মেখেনিতে হবে৷ এবার এই মশলা ইলিশ মাছের গায়ে ভালো ভাবে মাখিয়ে আধ ঘন্টা মতো ম্যারিনেট করতে হবে৷ এবার একটি বড় পাত্রে বাকি হাফ কাপ সর্ষের তেল গরম করে কুচানো পিয়াঁজ ভালো ভাবে ভেজে নিতে হবে৷ ভাজা পিয়াঁজ কিছুটা তুলে সরিয়ে রাখতে হবে। বাকি পিয়াঁজের মধ্যে হাফ চামচ হলুদ গুঁড়ো দিয়ে নেড়ে চাল ডাল দিয়ে ৩-৪ মিনিট ভালো করে ভাজতে হবে। এবার ম্যারিনেট করে রাখা ইলিশ মাছ অন্য একটি পাত্রে রেখে বাকি পরে থাকা ম্যারিনেশনের মশলাটি চাল ডালের মধ্যে দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে, এবার সাড়ে সাত কাপ গরম জল দিয়ে আঁচ অল্প কমিয়ে চাপা দিতে হবে৷ চাল ডালের জল অল্প শুকিয়ে এলে কিছুটা খিচুড়ি ওপর থেকে তুলে নিয়ে একটি পাত্রে রাখতে হবে; এবার ইলিশ মাছ গুলো খিচুড়ির মূল পাত্রে সাবধানে সাজিয়ে রেখে ওপর থেকে তুলে রাখা ভাজা পিয়াঁজ, কয়েকটি কাঁচা লঙ্কা, লেবু পাতা, ১ চামচ সর্ষের তেল ছড়িয়ে এর ওপর বাকি তুলে রাখা খিচুড়ি ঢেলে দিতে হবে। ঢাকা দিয়ে হালকা আঁচে দমে বসিয়ে রাখতে হবে ২০ – ২৫ মিনিট। চাল ডাল সম্পূর্ণ নরম ও ঝরঝরে হয়ে গেলে, খিচুড়ি সমেত ইলিশ মাছ সাবধানে তুলে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে৷

কাতলা মাছের মুড়ো খিচুড়ি –
উপকরণ: কাতলা মাছের বড় মাথা ২ পিস্, ২ কাপ বাসমতি চাল, ২ কাপ সোনা মুগের ডাল, ১ টা বড় সাইজের আলু দুম করে কাটা, ১ টা টমেটো কুচানো, ২ বড় চামচ হলুদগুঁড়ো, ২ বড় চামচ, ১ চা চামচ জিরে গুঁড়ো, ১ চা চামচ ধোনে গুঁড়ো,২ টো তেজপাতা, গোটা গরম মশলা, ২ টো শুকনো লঙ্কা, হাফ চা চামচ পাঁচফোড়ন ও গোটা জিরে, ১ চা চামচ গরম মশলা, ২ বড় চামচ আদা রসুন বাটা, ১ টা পিয়াঁজ বাটা৷

প্রণালী: মাছের মাথা ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিয়ে চার টুকরো করে রাখতে হবে| ওই তেলে আলু ভেজে তুলে নিতে হবে৷ এবার বাকি তেলে তেজপাতা, পাঁচ ফোড়ন, শুকনো লঙ্কা ও গোটা গরম মশলা ফোড়ন দিয়ে পিয়াঁজ ভাজতে হবে; পিয়াঁজে সোনালী রং ধরলে আদারসুন বাটা, টমেটো ও সমস্ত গুঁড়ো মশলা একসাথে দিয়ে অল্প জলের ছিটে দিয়ে ভালো ভাবে কষতে হবে৷ মশলা থেকে তেল ছাড়তে শুরু করলে কিছুটা মশলা কষা তুলে অন্য পাত্রে রাখতে হবে৷ বাকি থাকা মশলায় চাল ডাল দিয়ে আরেকবার কষতে হবে, চাল ডাল মশলা দিয়ে ভাজা হয়ে গেলে এরমধ্যে ভাজা আলু, ১ বড় চামচ নুন ও সাত কাপ গরম জল ঢেলে নেড়ে চাপা দিতে হবে৷ মিনিট পাঁচেক পর ভাজা মাছের মুড়ো দিয়ে আবার চাপা দিতে হবে৷ জল শুকোতে শুরু করলে চাপা খুলে এরমধ্যে তুলে রাখা কষা মশলা, অল্প চিনি, ঘি, গরম মশলা ছড়িয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে আবার হালকা আঁচে ঢাকা দিয়ে আরো পাঁচ মিনিট দমে রাখতে হবে৷ মিনিট পাঁচেক পর নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here