দেশের সময় বনগাঁ: তখন সকাল ৮টা খবরের কাগজে স্থির চোখ নিয়মিত ভাবে দেশের করোনা পরিস্থিতি এবং পরিসংখ্যান দেখতেই ব্যাস্ত পরিবারের সদস্যরা,শীতের সকালে একটু উষ্ণতার জন্য চায়ে চুমুক দিতে দিতে জোর আলোচনা চলছে চায়ের টেবিলে,করোনা টিকা আর কত দিন পর মিলবে!বনগাঁ জয়পুর এলাকায় যশোর রোড লাগোয়া দে’বাড়িতে এটাই এখন রোজনামচা৷ ঠিক সেই সময় মোবাইল এ কথা বলতে বলতে এক যুবক প্রবেশ করল বাড়ির উঠোনে, হাতে তার একটি স্ক্রড্রাইভার,দূর থেকে দেখলে মনে হবে ইলেক্ট্রিশিয়ন, একটু এদিক ওদিক দেখে নিয়ে বাড়ির সামনে রাখা নতুন সাইকেলে চেপে নির্দিধায় চলে গেল বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে৷ বাড়ির কাজে বেরবে বলে প্রদীপ বাবু সবে দোতলা থেকে নিচে নেমে দেখেন তাঁর বড় ছেলের সখের দামি সাইকেল টি নেই৷তড়িঘড়ি সিসি টিভি ক্যামেরা ফুটেজ সার্চ করে দেখতে পেলেন ওই যুবকের সাইকেল চুরির দৃশ্য ৷ সিসিটিভির ফুটেজ সঙ্গে নিয়ে সোজা হাজির হলেন বনগাঁ থানায়, সাইকেল চুরির অভিযোগও জানালেন ৷

গরু, মোটরবাইকের পর এবার সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে পাচার হচ্ছে দামি সাইকেল। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বাইরের রাজ্য থেকেও এইসব সাইকেল চুরি করে এনে বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে তা বাংলাদেশে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছুদিন ধরেই৷ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ ব্যাপারে খবর থাকলেও প্রশাসন তার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছেন না,তার কারণ হিসাবে জানতে চাইলে এক পুলিশ আধিকারিক জানান, সাইকেলের কোন রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকে না যা দেখে সাইকেলটির সম্পূর্ণ বিবরণ জানা যেতে পারে ,এই সুযোগটাই মুলত কাজে লাগিয়ে সকলের চোখে ধূলোদিয়ে পালাতে সক্ষম হচ্ছে এই ধরনের সাইকেল চোরাকারবারিরা৷ তবে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে,নজরদারি বাড়ানো হয়েছে,বেশ কিছু চুরি যাওয়া সাইকেল উদ্ধার করে সে গুলিকে ফের প্রকৃত সাইকেল মালিকদেরকে হহস্তান্তরও করা হয়েছে বলে জানাগিয়েছে পুলিশ সূত্রে৷


বনগাঁ সীমান্ত আগাগোড়াই পাচারের জন্য কুখ্যাত। সুযোগ সুবিধা মতো ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে নানা সময়ে নানা দ্রব্য সামগ্রী এদেশ থেকে ওদেশে পাচার হয়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে পাচারের দ্রব্য হল ভারতে তৈরি দামি সাইকেল। এক সময় চোরাই মোটরসাইকেল বাংলাদেশে পাচার হতো। বিশেষ কায়দায় নদী পথ পেরিয়ে সেই চোরাই মোটর সাইকেল বাংলাদেশে পাচার হয়ে যেত। সেখানে ভারতের এই মোটর সাইকেলের চাহিদা থাকায় তা চড়া দামে বিক্রি হতো। এখন পরিস্থিতির কিছুটা বদল ঘটেছে। মোটর সাইকেলের বদলে এখন পাচার হচ্ছে দামি সাইকেল। পাচারকারীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে সেই সাইকেল চুরি করে সীমান্ত এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছে। সেখান থেকে আলাদা দল তা বাংলাদেশে পাচার করে দিচ্ছে। বাংলাদেশে সেই সাইকেল মোটা টাকায় বিক্রি হচ্ছে।জয়পুর কালীবাড়ি এলাকায় পর চুরি হচ্ছে এরকম সাইকেল,স্থানীয় এক চায়ের দোকানের মালিকের কথায় চোখের নিমেশে সাইকেল নিয়ে পালাচ্ছে চোর৷ মতিগজ্ঞ এলাকার এক বাসিন্দা গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়েছে অনেক যুবক তাদেরই একটা অংশ এই ধরনের কাজে নিযুক্ত হয়ে গেছে বলেধারনা৷ পাশাপাশি স্থানীয় সূত্রের খবর ,জয়পুর, পীরোজপুর,জামতলা, হরিদাসপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই মাদককারবারিদের রমরমা, তেমনই কোন- একটা চক্র যুক্ত হয়েছে সাইকেল চুরির ঘটনায়৷ সাইকেল পাচারের ঘটনা এই মুহূর্তে নতুন।তবে সাইকেল পাচারকারি ধরার উপায় খুঁজতেই পুলিশ-প্রশাসন এই কনকনে ঠান্ডায় ঘাম ঝড়াচ্ছেন দিবারাত্রি ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here