দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ দেশজুড়ে টানা ২১ দিন লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাতে নরেন্দ্র মোদির এই ঘোষণার পরে, বুধবার সকাল থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের টানে বাজারগুলিতে উপচে পড়েছিল মানুষের ভিড়,সেই একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে বৃহস্পতিবার সকালেও শহর থেকে জেলা সর্বত্রই অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগ নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগও উঠল বিভিন্ন বাজারে। পাশাপাশি লকডাউনের মধ্যেই আড্ডা-জমায়েতের ছবিও চোখে পড়ছে অনেক এলাকায়।

বনগাঁ ‘ট`বাজার বৃহস্পতিবার সকালের দৃশ্য।
এ দিন সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে বনগাঁ নিউমার্কেট এবং ‘ট’ বাজারে। আগামী কয়েক দিন কিছু পাওয়া না-ও যেতে পারে— এই আশঙ্কায় চাল, ডাল, আনাজ, ডিম কেনার জন্য ফের হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেছে। কে আগে মালপত্র কিনবেন তা নিয়ে বচসা, হাতাহাতিও বেধে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে কয়েকটি দোকানে। একই ছবি দেখা যায় গাইঘাটার চাঁদপাড়া, ঠাকুরনগর, হাবড়ার বিভিন্ন বাজারেও।

বনগাঁ পূর্বপাড়ার বাসিন্দা সুমন বৈরাগী,দেবজ্যোতি ঘোষরা বলেন,এর ‘‘আগে এক সপ্তাহ লকডাউন ছিল। এখন তিন সপ্তাহ ঘোষণা হল। এই পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত খাবার মজুত রাখতেই সকালে তড়িঘড়ি বাজারে এসেছি। মালপত্র বাড়িতে মজুত থাকলে কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়।’’

বনগাঁ বাজারে ক্রেতাদের ভিড়,ছবি-দীপ বিশ্বাস৷

বনগাঁ নিউমার্কেট ব্যাবসায়ী সমিতির কার্যকরী সভাপতি নিত্য গোপাল দাস দেশের সময় কে জানান ‘দেশের সময় ‘এ বাজারের জিনিসের বেলাগাম দামের কথা জানতেই আমরা সমিতির পক্ষ্য থেকে সমস্ত সদস্যরা দোকানে দোকানে গিয়ে প্রতিটি জিনিসের সঠিক মূল্য নেওয়ার জন্য ব্যাবসায়ীদেরকে বারবার করে অনুরোধ করেছি। পাশাপাশি মাইক এ প্রচার করছি,যাতে কোনভাবে কোন জিনিসের বেলাগাম দাম কেউ না নেয়৷

“দেশের সময় “এর খরের জেরে
বৃহপতিবার বনগাঁ নিউমার্কেটের বাজার দর:

ডিম দাম, ৪ টাকা পিস।

বুধবার অনেক বাজারে ৭-৮ টাকা করে পিস বিক্রি হয়েছে।

মুরগির মাংস

গত কয়েক দিন ধরেই কেজি প্রতি দাম ছিল ১৮০-১৯০ টাকার আশপাশে।

এ দিন এক ধাক্কায় দাম কমে হয়েছে ১৬০-১৬৫ টাকা কেজি।

• আলু

সরকারের বেঁধে দেওয়া দর ২০ টাকা প্রতি কেজি। অধিকাংশ বাজারেই ২০-২২ টাকা, এমনকী ২৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে।

প্রচুর চাহিদার সুযোগে অনেক বাজারেই জিনিসপত্রে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীদের একাংশ।

বনগাঁ নেতাজী মার্কেটে এ দিন ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ৫-৬ টাকায়। সাধারণ দিনে এই ডিমের দাম থাকে সাড়ে চার টাকা।

করোনা-আতঙ্কে একটা সময়ে মুরগির মাংসের দাম কমে গিয়েছিল অনেকটাই। দু’দিন আগেও ১০০ টাকা কেজি দরে মুরগির মাংস কিনেছেন ক্রেতারা। এ দিন এখানে সেটাই বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে। ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে আলু। কেজি প্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা দাম বেড়েছে চালেরও।

এর আগেও এই বাজারে অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। বনগাঁ স্টেশন বাজারে ১৮ টাকা কেজি আলু অনেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ।

‘ট’বাজারের এক আলু বিক্রেতার কথায়, ‘‘আমরা তো পুলিশের নির্দেশ মেনে ১৮ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি করতে চাই। কিন্তু পাইকারি দর বেড়ে যাওয়ায় ওই টাকায় আলু বিক্রি করলে আমাদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। সে কারণেই একটু বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’’

চাঁদপাড়া বাজারে গিয়ে দেখা গেল ১৭০ টাকা প্রতি ক্রেট দরে ডিম বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, ক’দিন আগেও ১২০ টাকা প্রতি ক্রেট দরে ডিম বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন পাইকারি দর বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, বাজারদরের উপরে নজরদারি রাখা হয়েছে। কোনও অভিযোগ পেলেই তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বনগাঁ, হাবড়া,গাইঘাটা এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান,বাজারে আলু, পেঁয়াজ ও অন্যান্য আনাজ আসে মূলত কলকাতা থেকে। কিন্তু লকডাউনের জেরে অধিকাংশ গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় সেই মাল আসার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই আবার মহকুমার ভিতরের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকা থেকে গাড়িতে করে মাছ, আনাজ নিয়ে এসে বাজারে বসতেন।

কিন্তু লকডাউনে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরাও। এর জেরে বাজারে মাছ বা আনাজপাতির জোগান চাহিদার তুলনায় অনেকটাই কমে গিয়েছে। ফলে দামও বাড়ছে। সকালে বাজার খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই মাল শেষ হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ দোকানে। একটু দেরি করে যারা বাজারে আসছেন, তাঁরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে কিছু ব্যবসায়ী ক্রেতা পিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল, ডাল, আলু বিক্রি করছেন। বেশি চাইলে না করে দেওয়া হচ্ছে। এ দিন বাজারের একটি মুদি দোকানে গিয়ে দেখা গেল, একজন ক্রেতাকে এক কেজির বেশি চাল, ডাল বিক্রি করা হচ্ছে না। কয়েকটি আলু-পেঁয়াজের দোকানেও চোখে পড়ল একই ছবি।


বাজারগুলিতে ভিড় হলেও পুলিশের তৎপরতায় এ দিন বনগাঁর ‘ট’ বাজার, নেতাজী মার্কেট,সহ অনেক রাস্তাঘাট ছিল সুনসান। কিছু জায়গায় লকডাউন উপেক্ষা করে পাড়ার মোড়ে আড্ডা-জামায়েতও চলেছে। সাইকেল-মোটরবাইকে রাস্তাঘাটে ঘুরতে দেখা গিয়েছে অনেককে।

বহু জায়গায় লাঠি উচিয়ে অকারণে বাইরে বেরোনো মানুষদের বাড়ি ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ। বাটামোড়,যশোর রোড সংলগ্ন মতিগঞ্জ, এলাকায় এ দিন একাধিক বাইক আরোহীদেরকে রীতিমত ধমকেছে পুলিশ। বনগাঁ পুলিশ জেলার এক আধিকারিক জানান, গত দু’দিনের থেকে এদিন রাস্তাঘাট তুলনায় অনেকটাই ফাঁকা রয়েছে।

বনগাঁয় যশোর রোড – পার্থ সারথি নন্দী।

বনগাঁর এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায় এই শহর সহ জেলা জুড়ে ডিম-মাংসের দাম আগুন, কালোবাজারি রুখতে পুলিশ আরও একটু তৎপর হোক, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি মানুষের যে ভরসা আছে তা অক্ষুণ্য থাকবে৷

বনগাঁ কোর্টরোডে ‘লকডাউন‘ -পার্থ সারথি নন্দী

ছবি- তুলেছেন রতন সিনহা।
গোটা দেশে ২১ দিনের জন্য ‘লকডাউন’ চালু হয়েছে মঙ্গলবার মাঝ রাত থেকে। কার্যকর হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইন। এ অবস্থায় রাজ্যে জরুরি পরিষেবা সচল রাখতে বুধবার একগুচ্ছ নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সর্বস্তরের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন মমতা।

৩১ মার্চ ফের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন তিনি।
মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি এবং পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকা একটি টাস্ক ফোর্স সক্রিয় করেছে রাজ্য। এই দু’টি কমিটিই সাধারণ প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা-সহ সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘মানুষ তো না-খেয়ে থাকবেন না। তাঁদের জরুরি পরিষেবা দিতে আমরা দায়বদ্ধ।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here