দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কথায় কাজ হয়নি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরের আহ্বানেও সাড়া মেলেনি। তাই অন্নদাতাদের আন্দোলন ঘিরে অচলাবস্থা কাটাতে ফের নিজেই আসরে নামছেন প্রধানমন্ত্রী। চাষিদের ক্ষোভের ক্ষতে প্রলেপ দিতে বড়দিনে ছয় রাজ্যের ন’কোটি কৃষকের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। 

এর আগে কৃষকদের কাছে প্রধানমন্ত্রী করজোড়ে আবেদন জানিয়েছেন, যেন তাঁরা তিন নতুন কৃষি আইন মেনে নেন। এ বার ২৫ ডিসেম্বর, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে ৬ রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন মোদী। বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান বোঝাবেন তাঁদের। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধির পরবর্তী কিস্তির প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা দেশের ন’কোটি কৃষকের মধ্যে ভার্চুয়ালি বিতরণও করবেন প্রধানমন্ত্রী।

কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি-হরিয়ানা সীমানার সিংঘুতে কৃষকদের আন্দোলন ২৮ দিনে পড়ল বুধবার। কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষকদের এখনও পর্যন্ত মোট ৫ দফা বৈঠক হলেও কোনও রফাসূত্র মেলেনি। এই অবস্থায় এদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ছয় রাজ্যের বাছাই করা কৃষকরা তাঁদের উন্নতিকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের করা পদক্ষেপ নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানাবেন। কিষান সম্মান নিধি প্রকল্প থেকে কৃষকরা কী কী সুবিধা পেয়েছেন, তা খোলাখুলি শুনবেন মোদী। উত্তর দেবেন নতুন কৃষি আইন নিয়েও। এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী কৃষি আইন নিয়ে সরাসরি কৃষকদের কথা শুনতে চাইলেন। স্বাভাবিক ভাবেই ওয়াকিবহাল মহলের আশা, বড়দিনেই কৃষক সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়ে যেতে পারে। তবে এদিন পর্যন্ত কৃষকদের তরফে সে রকম কোনও ইঙ্গিত তো মেলেইনি, বরং তাঁরা অনড় নিজেদের অবস্থানেই। এরই মাঝে আজ, বৃহস্পতিবার আসরে নামছেন রাহুল গান্ধীও। কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দেশজুড়ে প্রায় ২ কোটি সই সংগ্রহ করেছে কংগ্রেস। যা আজ রাহুলের নেতৃত্বের কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল জমা দেবে রাষ্ট্রপতির কাছে।

বুধবার ছিল দেশের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংয়ের জন্মদিন, যা পালিত হয় কৃষক দিবস হিসেবে। সেই উপলক্ষ্যে রাজনাথ সিংয়ের আশ্বাস, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীও চরণ সিংয়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষকদের স্বার্থেই এই পদক্ষেপ করেছেন। কৃষকদের ক্ষতি হবে এমন কোনও পদক্ষেপ তিনি করবেন না।’ পাশাপাশি ২৫ ডিসেম্বর কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরের লেখা খোলা চিঠিও কৃষকদের কাছে বিতরণ করা হবে বলে টুইটে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। তোমর নিজেও এদিন আবার আশা প্রকাশ করেছেন যে, কৃষকরা কেন্দ্রের আলোচনার ডাকে সাড়া দেবেন এবং কৃষক সংগঠনগুলির সময়-সুযোগমতো আলোচনা করা যাবে। সেই বৈঠকেই সমস্যা অনেকটা মিটে যাবে। কৃষকদের কথা থেকে অবশ্য তেমন কোনও আশা পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যুদ্ধবীর সিং বলেছেন, ‘কেন্দ্র যে ভাবে আলোচনার পদ্ধতি এগোতে চাইছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, অকারণ দীর্ঘসূত্রতা করে কৃষকদের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে সরকার। কেন্দ্র আমাদের হালকা ভাবে নিতে চাইছে, যা আমরা কোনও মতেই মেনে নেব না।

রবিবার কেন্দ্রের তরফে বিক্ষোভরত কৃষকদের ৪০টি সংঠনকে নতুন করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আদৌ আলোচনায় বসবেন কি না, মঙ্গলবার তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও কৃষকনেতা কুলবন্ত সিং সাধু জানিয়ে দেন, এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশের সব প্রান্তের কৃষকদের মতামত জরুরি বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া পিছিয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য কেন্দ্রকে পাল্টা চিঠিও পাঠিয়েছে ইউনাইটেড ফার্মার্স ফ্রন্ট। সংযুক্ত কিসান মোর্চা-র চিঠিকে উল্লেখ করে স্বরাজ ইন্ডিয়া-র নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেন, ‘কিছু সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যাদের সঙ্গে এই আন্দোলনের কোনও যোগ নেই। এখনও পর্যন্ত আমরা মজবুত কোনও প্রস্তাব পাইনি সরকারের তরফে। আমরা আইন প্রত্যাহারের দাবিতেই অনড় থাকব। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে কোনও আশ্বাস বা প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। যদি সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য-র ‘আইনি মান্যতা’র খসড়াও পাঠায়, আমরা তা গ্রহণ করব।’ এদিন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টারের কনভয় আম্বালায় আটকে কালো পতাকাও দেখান প্রতিবাদীরা।রাজধানীতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যেও তাই কৃষক আন্দোলনের পারদ চড়া অব্যাহত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here