বিশ্বভারতীর শতবর্ষের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল বক্তৃতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। অনুষ্ঠানে রয়েছেন রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। 

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বোলপুরে ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেশের সবচেয়ে পুরনো কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই বিশ্বভারতী।ভারতের প্রাচীন আশ্রম শিক্ষার ভাবনায় বিশ্বভারতী গড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গাছের তলায়, প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষা। শান্তিনিকেতনের অর্থই হল, যে শান্তির ঘর। এখনও শান্তিনিকেতনে গাছের তলায় শিক্ষার রীতি রয়েছে। আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। ১৯৫১ সালে সংসদে আইন পাশ করে বিশ্বভারতীকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ শতবর্ষ।

আজ বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনুষ্ঠানের আগে নিজেই ট্যুইট করেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। নরেন্দ্র মোদী, শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপন। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর আচার্য ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে ২৪ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা।

বিশ্বভারতীর শতবর্ষের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভার্চুয়াল ভাষণে বললেন, আত্মনির্ভর ভারতের ভাবনা , আত্মনির্ভর ভারতের ভাবনা চালু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথই। বিশ্বভারতীতে পৌষ মেলায় বহু শিল্পী তাঁদের শিল্পকর্ম বিক্রি করে স্বনির্ভরতার দিশা পেতেন। কোভিডের জন্য এ বছর পৌষ মেলা হয়নি। বিশ্বভারতীর পডু়য়াদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, ‘‘এই পৌষ মেলায় যে সব শিল্পী আসতেন, তাঁদের খুঁজে বের করে তাঁদের শিল্পকর্মকে অনলাইনে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। বিক্রির জন্য তাঁদের উদ্বুদ্ধ করুন। প্রয়োজনে সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যও নিন।প্রধানমন্ত্রী নিজে গুজরাতের নাগরিক। রবীন্দ্রনাথও মাঝেমধ্যে গুজরাতে যেতেন। সে কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘‘কবিগুরুর দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গুজরাতে থাকতেন বলে সেখানে মাঝেমধ্যেই যেতেন গুরুদেব। গুজরাতের সংস্কৃতি তাঁর ভাল লাগত। আমদাবাদে থাকাকালীনই দু’টি কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন। ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এর কিছু অংশও সেখানেই লিখেছিলেন৷

এক নজরে:নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভার্চুয়াল ভাষণে এদিন যা বললেন:

আপনারা সবাই সফল হোন, এগিয়ে যান এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলুন 

• গুরুদেবের কথা দিয়েই আমরা বক্তব্য শেষ করব, ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল, খোল দ্বার খোল 

• ক্ষুধিত পাষাণের কিছু অংশও গুজরাতে থাকাকালীনই লিখেছিলেন 

• আমদাবাদে থাকাকালীনই দু’টি কবিতা লিখেছিলেন 

• রবীন্দ্রনাথ মাঝেমধ্যেই গুজরাতে যেতেন 

• এই বিশ্বভারতী দেখিয়ে দেয়, বহু ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও আমরা এক 

• আমি আবার যখন এলাম, গুরুদেব এবং গুজরাতের আত্মীয়তার কথা মনে পড়ে গেল 

• আমি যখন গুরুদেবের কথা স্মরণ করি, নিজেকে সামলাতে পারি না 

• বিশ্বভারতীর ১০০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, ১০০ বছরের জ্ঞান রয়েছে

• আমাদের মাথা যেন সব সময় উঁচু থাকে 

• অর্থাৎ আমরা এমন এক ব্যবস্থা তৈরি করি যাতে আমাদের জ্ঞানের কোনও সীমা না থাকে 

• গুরুদেব বলতেন, চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত 

• আমার মনে নেই, আমাকে কী পড়ানো হয়েছিল, কিন্তু আমার মনে আছে, যেটা আমি শিখেছিলাম 

• পড়াশোনা ও শিক্ষার মধ্যে যে পার্থক্য, সেটা গুরুদেবের একটি বাক্যের মাধ্যমেই বোঝানো সম্ভব 

• সেই গানকে  পাথেয় করেই এগিয়ে চলতে হবে 

• গুরুদেবের গান ছিল যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে 

• ভবিষ্যতেও স্থানীয় উৎপাদক, স্থানীয় শিল্পীরা 

• বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের বলছি, পৌষমেলায় আগত শিল্পীদের সন্ধান করুন, তাঁদের পণ্য অনলাইনে কী ভাবে বিক্রি করা সম্ভব, তা নিয়ে কাজ করুন 

• যখন আমরা আত্মনির্ভরতার কথা বলি, যখন আত্মবিশ্বাসের কথা বলি 

• মহামারির জন্য মেলায় যে সব শিল্পী আসতেন, তাঁরা আসতে পারেননি 

• এই মহামারি আমাদের শিখিয়েছে, ভোকাল ফর লোকাল 

• বিশ্বভারতীর কথা বলতে গেলে এখানে ঐতিহাসিক পৌষমেলা হতে পারেনি 

• আমাদের নতুন লক্ষ্য তৈরি করতে হবে, সেই যাত্রায় আমাদের পাথেয় হবে গুরুদেবেরই ভাবনা 

• ইতিহাসে এমন আরও অনেকের নাম হয়তো লেখাই নেই 

• প্রতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রাণ দিয়েছিলেন অল্প বয়সেই 

• ক্ষুদিরাম বসুর কথা ভাবুন, ১৮ বছর বয়সে বলিদান দিয়েছিলেন 

• তাঁর সেই ভাবনা আজও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক 

• আত্মনির্ভরতার জন্য গুরুদেব আত্নশক্তির কথা বলেছিলেন 

• গুরুদেবের ভাবনায় ছিল আত্মনির্ভরতা, আমাদের দেশের কৃষি, বাণিজ্য সব কিছু আত্মনির্ভর দেখতে চেয়েছিলেন 

• আত্মনির্ভর ভারতের এই ভাবনা শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বকে দিশা দেখিয়েছে 

•  এই অভিযান ভারতকে শক্তিশালী করার অভিযান 

• আত্মনির্ভর ভারতের ভাবনাও এখানে শামিল 

• ভারতে যেটা সর্বশ্রেষ্ঠ, সেটা গোটা বিশ্বকে প্রেরণা দিয়েছে 

• বিশ্বভারতী সব ধর্মকে সম্মান করে 

• বিশ্বভারতীকে তিনি যে স্বরূপ দিয়েছিলেন, তা জাতীয়তাবাদের এক উদাহরণ হয়ে উঠেছে 

• জ্ঞানের এই আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ এক নয়া দিশা দিয়েছেন 

• এই আন্দোলনে প্রভাবতি হয়ে হাজার হাজার মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে শামিল হয়েছেন 

• কয়েকশো বছর ধরে চলেছে এই ভক্তি আন্দোলন 

• বহ বছর ধরে ভারতীয়রা গোলামি করছিলেন 

• তিনি বিবেকানন্দের মতো শিষ্য পেয়েছিলেন 

• শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের চর্চা না করলে এই ভক্তি আন্দোলনের প্রকৃত রূপ বোঝানো যাবে না 

• ভক্তির পথেই বহু মণীষী দেশের গর্ব বাড়িয়েছেন 

• ভক্তি আন্দোলনের পথিক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ 

• দেশের বহু পণ্ডিত দেশের উন্নয়নে সাহায্য করেছেন 

• প্রকৃতির সঙ্গে মিলে অধ্যন ও জীবনচর্যার শিক্ষা দিয়েছে বিশ্বভারতী 

• কবিগুরুর এই প্রতিষ্ঠান দেশকে শক্তি যুগিয়েছে 

• নব ভারত নির্মাণে বিশ্বভারতীর ভূমিক অপরিসীম 

• দেশের জন্য বিশ্বভারতীর শতবর্ষ গৌরবের বিষয় 

• চিন্তন, দর্শনের সাকার রূপ বিশ্বভারতী 

• বিশ্বভারতীতে আসা আমার কাছে গর্বের বিষয় 

• গৌরব দাও, বিশ্বভারতীর শতবর্ষে এটাই দেশের প্রার্থনা

বিশ্বভারতী নিয়ে মোদীর ট্যুইট:

বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো…’ বিশ্বভারতীর শতবর্ষে মমতার ট্যুইট

বিশ্বভারতীর শতবর্ষে মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন?

প্রোটোকল মেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে এখনও কোনও উত্তর মেলেনি।

ট্যুইট কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর:

কেন্দ্রের ভাবনায় রবিঠাকুর:

কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতিও রবীন্দ্র ভাবনায় অনুপ্রাণিত, ইতিমধ্যেই একথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় সফরে এসে গিয়েছিলেন বিশ্বভারতীতে। 

বিশ্বভারতীতে মোদী-মমতা-হাসিনা:

২০১৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ বছর বাতিল পৌষমেলা:

বিশ্বভারতী ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার গত শনিবার জানান, বিশ্বভারতীর পৌষ উৎসবেরই অংশ পৌষ মেলা। আর এ বার শুধু মেলাটুকুই বাদ থাকছে। বিশ্বভারতীর কর্মী মণ্ডলের সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য জানান,  শতবর্ষ পালন অনুষ্ঠানে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। চেষ্টা করা হচ্ছে,  যাতে সমস্ত করোনা বিধি মানা হয়। আম্রকুঞ্জে পালিত হবে প্রতিষ্ঠা দিবস।

এবার প্রতি মাসে বাংলায় অাসবেন মোদী:

পুজোর আগে দিল্লিতে দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং অমিত শাহ। সেই বৈঠকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছল, পুজো মিটলেই মাসে একবার করে বাংলায় সফরে আসবেন প্রাক্তন ও বর্তমান বিজেপি সভাপতি। সেই মতো নভেম্বর ও ডিসেম্বরে নাড্ডা এবং অমিত শাহ বাংলা সফর সেরে ফেলেছেন। এবার জানা গেল পরের মাস থেকে মাসে একবার করে রাজ্যে আসবেন নরেন্দ্র মোদীও।
বুধবার বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, নাড্ডা, শাহের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীও প্রতি মাসে একবার করে বাংলা সফরে আসবেন। তবে জানুয়ারি মাসে কবে মোদী আসবেন তার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলেই জানিয়েছেন মেদিনীপুরের সাংসদ।
অর্থাত্‍ একুশে বাংলার ভোটকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন তা এই সফরসূচিতে স্পষ্ট। মাসে একবার মোদী বাংলায় আসবেন শুনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ওঁদের আর কোনও কাজ নেই তো! যতই করুক, বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দু’দিন করে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসবেন অমিত শাহ। একই ভাবে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা আসবেন দু’দিন করে। মার্চ মাসে দু’দফায় রাজ্যে এসে চার দিন সফরের পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির সর্বোচ্চ সারির এই দুই নেতার। তার পর এপ্রিল মাসে অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে এসে পনেরো দিন থাকতে পারেন বলে একটি সূত্র দাবি করছে। এমনকি এও খবর, হোটেল নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর জন্য কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট বা বাড়ি ভাড়া করা হতে পারে।


জানুয়ারির গোড়ার দিকে হাওড়ায় একটি সমাবেশ করতে পারেন অমিত শাহ। সেখানে বড় যোগদান হতে পারে বলেও খবর। এমনিতেই হাওড়ার এক নেতাকে নিয়ে সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর জল্পনা তৈরি হয়েছে। তাই ওই সভা কবে হয় সেদিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here