মাননীয়
প্রধানমন্ত্রীজী,

আপনাকে এই খোলা চিঠি লিখছি, যদিও জানি এ চিঠি আপনার কাছে পৌঁছাবেও না। তবুও আমার বন্ধুবান্ধব, পরিচিত, বাংলার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কিছু মানুষের কাছে তো পৌঁছাবে।

গতকাল কালীঘাটে সাংবাদিক সম্মেলনে দিদি যখন বলছেন দেশের কোন কোন নেতা তাঁকে এই জয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, ঠিক তখন একজন সাংবাদিক বলে ওঠেন, “প্রধানমন্ত্রী টুইট করেছেন, পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।” দিদি খুব সরলভাবে বলে উঠলেন, “টুইট করেছেন, কই আমাকে ফোন করেননি তো ?”

দিদি সহজভাবে কথাটা বললেও আমার খুব অবাক লাগলো। সত্যিই তো দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর জয়ী হবার অভিনন্দন জানিয়েছেন টুইট করে!! এ কেমন সভ্যতা!! এ যেন বন্ধুদের মধ্যে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এ যেন দূরে থাকা সন্তানের মা বাবাকে বিজয়ার প্রণাম।

আপনি এইতো দুইমাস ধরে প্রায় রোজই বাংলায় আসছেন। একজন মহিলা তথা দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে দিদি ও দিদি বলে কটাক্ষ করেছেন। পিসি ভাইপো বলে ব্যক্তিগত আক্রমণ শানিয়েছেন। আপনার দলের লোকজন তো আরও দু কদম এগিয়ে বেগম, ভাঙা পায়ে নাটক বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে প্রচারে ঝড় তুলতে চেয়েছেন। হাফপ্যান্ট বারমুডা পরতে বলেছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী সেটা যদি বাদও দিই একজন মহিলাকে ন্যূনতম শালীনতা দেখানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। আপনারা ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে খুব চিন্তিত শুনি। তা ভারতীয় সভ্যতায় নারীদের বুঝি এরকম হেনস্থা করা হয় ? এতকিছুর পর হেরে গিয়ে সামান্য একটা টুইট। ফোন করে কথা বলারও ভদ্রতা নেই। নাকি বাংলা অধরা তাই এসবের প্রয়োজন কিসের ?

সবথেকে মজা লাগলো আপনি রাজ্যকে ভবিষ্যতে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন। কেন ? সাহায্য আগে করেননি ? ব্যাপারটা কিরকম যেন আজব লাগলো। আপনি দান করেছেন নাকি ? গণতান্ত্রিক দেশে কেন্দ্র রাজ্যকে সাহায্য করবে এটাই রীতি। রীতিও নয় সাংবিধানিক অধিকার। সেখানে আপনি এমন বলছেন যেন আপনার আপন সম্পদ আপনি রাজ্যকে দিয়ে কৃতার্থ করবেন।

আপনি জানেন, আমাদের রাজ্যপাল যিনি আপনাদের নির্দেশে প্রায়দিন রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলান। কিন্তু মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কখনো ওনাকে এই অনাবশ্যক কাজের জন্য কোনো অপমানসূচক কথা বলেননি। বরং মাঝে মাঝেই রাজভবনে গিয়ে ওনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ও সঙ্গে ফুল মিষ্টি নিয়ে যেতেও ভোলেননা।

এটাই বাঙালির রুচি। এটাই সংস্কৃতি। তাই আপনার বারবার অসৌজন্যমূলক আচরণ আমাদের আঘাত করে। আপনি আমাদের দেশের অভিভাবক অথচ গত সাত বছরে তার কোনো অনুভূতি আমরা পাইনি। অন্তত আমি তো বুঝিনি। আমরা কিন্তু আপনাদের মত ওতো পয়সাওলা নই। সাধারণ জীবনযাপন করি। চলনবলন খাওয়াদাওয়া সবই খুব পরিধির মধ্যে। কারণ কষ্ট করেই চলতে হয় আমাদের। কিন্তু আমাদের তারজন্য কোনো আফসোস নেই জানেন। কারণ আমরা আমাদের কবিতা, গান, গল্প, নাটক, আড্ডায় বাঁচি।

আর এই বাঁচার জন্যই আমরা আমাদের মেয়ে অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পেয়েছি আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। আমরা খুব খুশি। উনি আমাদের মতোই সাধারণ। আমাদের ভালো রাখার জন্য আমাদের আগলে রাখেন। আমরা ভরসা করি ওনাকে আমাদের সুবিধা অসুবিধা বলতে পারি।

আপনি তেমন নন। তাই পিছিয়ে পরলেন। বাংলা আপনাদের অধরা থেকে গেল শুধুমাত্র বাংলার আত্মা বুঝতে না পারার জন্য। রবীন্দ্রনাথের দুটো কবিতা পাঠ করলেই বাঙালি আপনাকে বরণ করে নেবে এটা হয়না। বাংলাকে জানতে গেলে বাংলার কৃষ্টিকে আপন করতে হবে। বাংলার আগামীকে ভালোবাসার পাঠ দিতে হবে। বাংলার মেয়েদের সন্মান করতে হবে। কারণ এখানে মেয়েদের মাতৃরূপী দেবী দুর্গা ভাবা হয়।

কিন্তু আপনি তো সামান্য একটা ফোন করে বাংলার মেয়েকে শুভেচ্ছা জানাতেই কার্পণ্য করলেন। বাংলার জন্য উদার হবার সম্ভাবনা তো দুরাশা।

আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এই বাংলার মেয়েটিই আপনাদের মনোনীত রাজ্যপালের কাছে শপথ নেবেন। যে রাজ্যপালকে কাল আপনি ফোন করে রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসার খবর নিয়েছেন। আশাকরি আজকের পর আপনার এটুকু সুমতি হবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করার। কারণ আপনি শুধুমাত্র কোনো পার্টির নেতা নন, দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাই প্রধানমন্ত্রীত্বসুলভ দায়িত্ববোধ আশা করাটা অন্যায় নয়।

যাইহোক আগামীদিন কিন্তু এই বাংলার মেয়েটাই দিল্লীর দরবারে আপনাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়বেই। আর যদি আপনার উত্তরসূরি তিনি হতে পারেন সেদিন বিদায়ী হিসেবেও যে সন্মান উনি আপনাকে দেবেন, সেদিন বুঝবেন একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা কিকরে জানাতে হয় সাংবিধানিক ও সামাজিক ভাবে।

এদিন যেন আপনার দেখার সৌভাগ্য হয়। আপনি ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।

ধন্যবাদ।
অশোক মজুমদার।।
০৫.০৫.২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here