দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বর্ষপূর্তি পুলওয়ামার ঘটনার। গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জঙ্গি হামলায় চুয়াল্লিশ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় শহিদ হয়েছিলেন উলুবেড়িয়ার বাউড়িয়ার বাসিন্দা বাবলু সাঁতরাও।

বাবলু সাঁতরার স্মৃতি রক্ষায় ইতিমধ্যেই তাঁর মূর্তি বসানো হয়েছে একটি মন্দির কমিটি ও তাঁর পরিবারের উদ্যোগে। উলুবেড়িয়া পুরসভার সহায়তায় ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পরিচালনায় এক ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এক সংস্থার উদ্যোগে মেছেদা থেকে শহিদের বাড়ি পর্যন্ত বাইক মিছিলেরও আয়োজন করা হয়েছে।এছাড়া বছরভর বিভিন্ন সময়ে নানা স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

বাবলুর স্মৃতি আজও অমলিন তাঁর পরিবারে। বাবলুর মা বনমালা দেবী বললেন, “প্রতিবার বাড়িতে এসে কোনও না কোনও কাজ করত আমার ছেলে। গতবার নিজের হাতে বাড়ির উঠোন ঢালাই করেছিল। বাড়ির ছোট খাটো সব কাজেই রয়েছে বাবলুর হাতের ছোঁয়া। যেদিকে তাকিয়ে দেখি সেদিকেই যেন বাবলুকে আজও দেখতে পাই।”

বাড়িতে এসে কাটারি, শাবল, কোদাল নিয়ে খুঁটিনাটি কাজ করতেন বাবলু। তিনি চলে গেলে সেসব কাজের জিনিস গুছিয়ে রাখতেন তাঁর মা। প্রয়োজনে সেইসব জিনিসে হাত দিলে আজকাল বাবলুর কথা তাঁদের মনে পড়ে যায়।
১৪ ফেব্রুয়ারি বাবলুর শহিদবার্ষিকী হলেও তিথি অনুযায়ী তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ৩ ফেব্রুয়ারি। সেই উপলক্ষে ওই দিনই বাড়ির লোকেরা তাঁর বাৎসরিক পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন বলে জানালেন বনমালা দেবী।
তিনি বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ। আমরা চাই সব সময় শান্তি বজায় থাকুক। আমি চাই না আর কোনও মায়ের কোল এভাবে খালি হোক।” এর পরেই আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে শুরু করেন বনমালা দেবী।

গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু থেকে কাশ্মীর যাওয়ার পথে পুলওয়ামার অবন্তীপুরায় জঙ্গি হামলায় ৪৪ জন জওয়ান শহিদ হন। বাবলু তাঁদের অন্যতম। তিনি সিআরপিএফের ৩৫ নম্বর ব্যাটালিয়ানের জওয়ান ছিলেন। ২০০০ সালে বাবলু সিআরপিএফে যোগ দেন। তখনও তিনি উলুবেড়িয়া কলেজে পাঠরত ছিলেন।

তিনি শহিদ হওয়ার পর রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী এসেছিলেন বাবলুর বাড়িতে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের পাশে থেকেছেন বলে এদিন জানান বনমালা দেবী। বৃহস্পতিবার তিনি একাই বাড়িতে ছিলেন। বাবলুর স্ত্রী মিতা সাঁতরা এখন তাঁর মায়ের বাড়ি হুগলির উত্তরপাড়ায় থাকেন। মাঝেমধ্যে অবশ্য শ্বশুরবাড়িতে আসেন। বাবলুর বাৎসরিক পারলৌকিক ক্রিয়ায় তিনি এসেছিলেন। তিনি বর্তমানে কাঁকুড়গাছিতে কর্মরতা। মেয়েকেও ভর্তি করেছেন উত্তরপাড়ার একটি স্কুলে।
বাবলু সাঁতরার পরিবারের লোকেরা জানান, ১৪ ফেব্রুয়ারি অনেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কোনও অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন মিতা। তবে তিনি এদিন শ্বশুরবাড়িতে আসবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here