বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো তার আর একমাসও বাকি নেই| বাংলা তথা প্রবাসী বাঙালির মনেও এখন পুজোর গন্ধ| কুমোরপাড়ার সোলা কিংবা ফাইবারের দূর্গা পাড়িও দিয়েছে বিদেশে| আর উমার আগমনিতে প্রস্তুতি তুঙ্গে বঙ্গের বাঙালির, সে পাড়ার মণ্ডপে হোক কিংবা বাড়িতে| পুজোর প্রস্তুতি মানে শুধুই সাজগোজ কিংবা ঘোরা বেড়ানো নয় চাই খাওয়াদাওয়াও| তাই এখন থেকেই দেশের রান্নাঘরে থাকবে পুজোবাড়ির রান্নাবান্না|
কথিত আছে উমা মর্তে এলে গয়না পরতে যান উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো দা বাড়িতে, গান শুনতে যান শোভাবাজার রাজবাড়িতে আর ভোগ গ্রহণ করতে যান চোরবাগান চ্যাটার্জ্জী বাড়িতে| ১৮৬০ সাল নাগাদ রণচন্দ্র চ্যাটার্জী তাঁর পিতামহ ধনবিজয় চ্যাটার্জীর সঙ্গে বাংলাদেশের খুলনা জেলা থেকে কলকাতায় আসেন এবং উত্তর কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাড়িতে সেই সময় থেকেই প্রচলন করেন দেবী দুর্গার আরাধনা| প্রায় ১৬০ বছরের প্রাচীন এই দূর্গাপুজোয় রীতি মেনে আজও পরিবারের উপনয়ন হয়ে যাওয়া পুরুষ সদস্যরাই নিজে হাতে দেবীর ভোগ রান্না করেন|

উমার এখানে আমিষ ভোগ হয়| বাড়ির পূর্বপুরুষদের লিখিত রীতি মেনেই বর্তমান সদস্যরাও ষষ্ঠী থেকে দশমী প্রতিদিনই ভিন্ন ভিন্ন আমিষ পদ পদ রান্না করে দেবীকে উৎসর্গ করেন| মূলত: ভাত, শুক্ত, ডাল, মাছভাজা, খিচুড়ি, পায়েস, চাটনি ও মিষ্টি পুজোর মেনুতে প্রতিদিনই থাকে; এরসঙ্গে বিশেষ আমিষ ভোগে সপ্তমীতে পাঁচ রকম ভাজা ও লাউ চিংড়ি, অষ্টমীতে শাক ও মাছের ঘন্ট, নবমীতে ভেটকি মাছের ঘন্ট, চিংড়ি মাছের মালাইকারি ইত্যাদি হয়|

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে বনেদিবাড়ির এই পুজোর মেনু রীতিমতো বেশ দীর্ঘ| আর যাদের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয় না, তাতে আর দুঃখ কি পুজোর পাঁচটা দিন না হয় পুজোবাড়ির রীতি মেনে পেটপুজো তো হতেই পারে|

করলার শুক্ত :

উপকরণ: করলা ১ টা, বড় বেগুন আধখানা, কাঁচকলা ১ টা, দুটো ছোট মুলো, কুমড়োবড়ি ৬টা, তেজপাতা ৩ টি, সরষে দেড় বড় চামচ, হলুদ ১ চা চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, নুন দেড় চা চামচ, ঘি ১ বড় চামচ, চিনি ১ চা চামচ, দুধ ১ বড় চামচ, সরষের তেল দেড় বড় চামচ|
প্রণালী: সমস্ত সবজি টুকরো করে কেটে নিতে হবে| কড়াইতে তেল গরম করে বড়ি ভেজে তুলে নিতে হবে| এরপর করলা ও বাকি সব সবজি এক এক করে দিয়ে হালকা লাল করে ভেজে তুলে নিতে হবে| আবার তেল দিয়ে তাতে ভাজা করলা দিয়ে সরষে, হলুদ ও আদা বাটা জলে গুলে ভাজা করলার মধ্যে ঢেলে দিতে হবে| ফুটতে শুরু করলে বাকি ভাজা সবজি দিতে হবে| এরপর হালকা ভেজে রাখা বেগুন ও তেজপাতা দিতে হবে| সব সবজি নরম হয়ে এলে দুধ ও চিনি দিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে নামাতে হবে| এরপর কড়াইতে ঘি গরম করে সরষে ফোড়ন দিয়ে শুক্তোর মধ্যে ঢেলে সাঁতলে নিতে হবে ফুটে উঠলে অল্প আদা বাটা দিয়ে নেড়ে নামাতে হবে|

পটোলের ঘন্ট:

উপকরণ: পটল ২৫০ গ্রাম, আলু ১২৫ গ্রাম, কিসমিসh ১৫গ্রাম, বাদাম ১২ ১৩ টা, পেস্তা ১২১৩ টা, দই বড় চামচ, ধনেবাটা দেড় চামচ, আদা ১২ গ্রাম, শুকনো লঙ্কা ২টো, কাঁচা লঙ্কা , জায়ফল আধখানা, তেজপাতা ১টা, ছোট এলাচ ৪টে, লবঙ্গ৬টি, দারচিনি গ্রাম, নুন চা চামচ, ঘি বড় চামচ, জল চারকাপের তিন কাপ|
প্রণালী: আলু পটোলের খোসা ছাড়িয়ে কুচো করে কেটেরাখতে হবে; বাদাম পেস্তা জলে ভিজিয়ে খোসা উঠে এলেকুচিয়ে নিতে হবে; কিসমিস ধুয়ে নিতে হবে; আদা কাঁচা লঙ্কাকুচিয়ে রাখতে হবে| শুকনো লঙ্কা বেটে নিতে হবে; জায়ফল, ২টো ছোট এলাচ, ৩টে লবঙ্গ, হাফ চামচ দারচিনি মিহি করেগুড়িয়ে রাখতে হবে| কড়াই গরম করে ঘি দিয়ে কিসমিসভেজে তুলে নিতে হবে| এরপর ঘিয়ে বাকি গোটা গরম মশলাফোড়ন দিয়ে ধনে, হলুদ, লঙ্কাবাটা, দইয়ে গুলে ঢেলে দিতেহবে, মশলা কষে জল শুকিয়ে এলে আলু, পটল দিতে হবে, এরপর নুন দিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে, পটোলের জলশুকিয়ে এলে সবজি নরম হওয়ার মতো জল দিতে হবে; ফুটেউঠলে কুচানো বাদাম, পেস্তা, আদা, কাঁচা লঙ্কা, ভাজাকিসমিস ঢেলে দিতে হবে; বাকি জল শুকিয়ে ঘিয়ের ওপরথাকলে নামিয়ে গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে ভালো করে নেড়েচাপা দিয়ে রাখতে হবে|
লাউডাঁটা ও চিংড়ির ছেঁচকি:

উপকরণ: লাউ ডাঁটা এক ডাল, শুকনো লঙ্কা ২টো, কুচো চিংড়ি ৬০ গ্রাম, পাঁচ ফোড়ন ১ চা চামচ, নুন ১ চা চামচ, সাদা সরষে বাটা দেড় বড় চামচ, তেল ৩ বড় চামচ|
প্রণালী: লাউডাঁটা ১ আঙ্গুল লম্বা করে কেটে আঁশ ছাড়িয়ে নিতে হবে| কুঁচো চিংড়ি ভালো করে ছাড়িয়ে ধুয়ে নিতে হবে| এরপর চিংড়ি মাছ ভালো ভাবে ভেজে আলাদা তুলে নিতে হবে, বাকি তেলে লঙ্কা, পাঁচফোড়ন দিয়ে, লাউডাঁটা দিয়ে ভেজে নুন ও ৩ বড় চামচ জল দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে| লাউডাঁটা সিদ্ধ হলে সরষে বাটা জলে গুলে এতে ঢেলে দিতে হবে, এরপর চিংড়ি মাছ দিয়ে নেড়ে ভালো করে ফুটে উঠলে নামাতে হবে|

ভেটকি মাছের চচ্চড়ি

উপকরণ : ভেটকি ২৫০ গ্রাম, তেল ৩ বড় চামচ, পাঁচফোড়ন ১চামচ, কাঁচা লঙ্কা ৩ টি, তেজপাতা ২টি, নুন ১চা চামচ, সরষে বাটা ১চা চামচ, শুকনো লঙ্কা বাটা ২টো, হলুদ হাফ চামচ, জল ২ বড় চামচ|
প্রণালী: মাছ ৬-৮ পিস্ করে কেটে ধুয়ে নিতে হবে| কড়াইতে তেল দিয়ে মাছ ভেজে নিতে হবে| এরপর পিতল অথবা কলাই করা বাটিতে বাকি রাখা তেল দিয়ে তার ওপর মাছ, সব রকম মশলা, কাঁচা লঙ্কা কুচানো, নুন, তেজপাতা, পাঁচফোড়ন, জল সব দিয়ে ভালো করে নেড়ে মাছের সাথে মশলা মাখিয়ে বাটির মুখ ঢেকে দিতে হবে; এরপর তাকে হালকা নরম আঁচে বসিয়ে রাখতে হবে| ১৫-২০ মিনিট পর ভালো করে ফুটে তেল ভেসে উঠলে নামাতে হবে|

রুই মাছের ঝাল –

উপকরণ: রুই মাছ ১ কিলো, পিয়াঁজ বাটা ১ বড় চামচ, আদা বাটা ২চা চামচ, পাতিলেবু ২ টো, ভাজা গুঁড়ো সাজিরা ১চা চামচ, ভাজা গুঁড়ো সামরিচ হাফ চা চামচ, গুঁড়ো গরমমশলা হাফ চা চামচ, হলুদ ১চা চামচ, শুকনো লঙ্কা হাফ চা চামচ, ঘি ২ বড় চামচ, চিনি ১ চা চামচ|
প্রণালী: কড়াইতে ঘি গরম করে পিয়াঁজ ভাজতে হবে, লাল হলে আদাবাটা, হলুদ, লঙ্কা ও চিনি দিয়ে কষে নিতে হবে| এবার আগে থেকে সিদ্ধ করা মাছ ওই মশলায় দিয়ে কষে নিতে হবে| বেশ ভাজা হলে নুন, লেবুর রস, সাজিরা, সামরিচ, লঙ্কাগুঁড়ো, গরমমশলা গুঁড়ো, দিয়ে নেড়ে নিতে হবে| নামিয়ে ভাজা পিয়াঁজ কুচি মাছের উপর থেকে ছড়াতে হবে|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here