দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ নির্ভয়াকাণ্ডে ‌দোষীদের ফাঁসি ফের পিছোল। মঙ্গলবার সকালেই চার দোষীর ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল। ফের আরও একবার ফঁাসির আদেশ স্থগিত করল দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্ট। সোমবার বিকেলে আদালত জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখা হল। জানা গেছে একজন দোষীর প্রাণভিক্ষার আবেদন এখনও পড়ে রয়েছে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে।

এছাড়া বেশ কিছু আইনি জটিলতাও রয়েছে। যার ফলে সোমবারও পিছিয়ে গেল ফাঁসি। আর এই নিয়ে মোট তিনবার পেছলো ফাঁসির আদেশ। চার দোষী অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, মুকেশ সিং ও পবন গুপ্তার ফাঁসির দিন বারবার পিছিয়েছে। বারবার চার ধর্ষকের ফাঁসি পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে বেশ অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে চলন্ত বাসের ভিতরে ২১ বছরের এক তরুণীকে নৃশংস ভাবে গণধর্ষণ করে ছ’জন যুবক। ২৯ ডিসেম্বর মারা যান তরুণী। এক জন অভিযুক্ত ধরা পড়ার পরে জেলে আত্মহত্যা করে, অন্যজন নাবালক বলে ছাড় পেয়ে যায়। বাকি চার জনের বিচার চলছে দীর্ঘ আট বছর ধরে। শেষমেশ এই জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখে ফাঁসির আদেশ ঘোষণা হয় আদালতে। কিন্তু তার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা টালবাহানা। আইনি ফাঁককে কাজে লাগিয়ে একের পর এক অজুহাতে ফাঁসির পদ্ধতি পিছিয়ে চলেছে তারা।
২২ তারিখে ফাঁসি রদ হওয়ার পরে ফের ১ ফেব্রুয়ারি জারি হয় ফাঁসির দ্বিতীয় তারিখ। সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে পিছিয়ে যায় সেই তারিখও। এভাবে দু’বার দিনঘোষণার পরে ফাঁসি বাতিল হওয়ার পরে দিল্লির পাটিয়ালা হাউস আদালত ১৭ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় বারের জন্য ঘোষণা করে, ৩ মার্চ ভোর ৬টায় কার্যকর হবে চার আসামির মৃত্যুদণ্ড। সেই মর্মে জারি করা হয় মৃত্যু পরোয়ানাও। তিহাড় জেলও সেরে রেখেছে ফাঁসির সবটুকু প্রস্তুতি। কিন্তু আবারও বিফল হল সবটা।
ফাঁসি পিছিয়ে যাওয়ার পরে নির্ভয়ার পরিবারের আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি বলেন, “ওরা আইনের অপব্যবহার করছে, আদালত কি সেটা বুঝতে পারছে না! আমাদের সিস্টেমটাই নষ্ট হয়ে গেছে। বিচার পেতে এখানে কয়েক বছর লেগে যায়। আইনের এই গলদ আমাদের মেরামত করতে হবে।”
সংশয় অবশ্য ছিলই। আইন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার পরে আসামির সমস্ত আইনি বিকল্প শেষ হওয়ার পরেও আরও ১৪ দিন সময় দিতে হয় তার মানসিক প্রস্তুতির জন্য। এই সময়ে চলে তাদের কাউন্সিলিং। তাদের পরিবারের লোকজনকে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া বোঝানো হয়। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও সারেন জেল কর্তৃপক্ষ।
এ ক্ষেত্রে যদিও সবটাই সারা হয়ে গিয়েছে, তবুও আইন-মোতাবেক সেই ১৪ দিনের সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আশঙ্কা ছিল নির্ভয়া মামলায়। হলও তাই। নির্ভয়া-কাণ্ডে তিন আসামির সমস্ত আইনি বিকল্প শেষ হয়ে গেছে আগেই। এখন একমাত্র বাকি পবন গুপ্ত। সে-ই এই বার শেষ চেষ্টা চালাল ফাঁসি আটকানোর। সফলও হল।
কিন্তু প্রশ্ন এখন একটাই। আর কত দিন চলবে এই আইনি টালবাহানা! ২০১২ থেকে ২০২০– আট বছর ধরে চলেছে বিচার। বিচার শেষে শাস্তি ঘোষণার পরেও যদি এমন কাণ্ড চলতে থাকে, তাহলে তো বিচারব্যবস্থার উপরেই আস্থা হারাবে মানুষ!– এমনই ক্ষোভ ঘনিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।আবার কবে আদালত রায় দেবে, সেইদিকেই নজর থাকবে দেশবাসীর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here