আমার একটা পাহাড় আছে। আমি মনখারাপ হলেই সেখানে চলে যাই। যেদিন কেউ দু:খ দেয় আমি সেদিনই পাহাড়ে চলে যাই। পাহাড়ে তখন বর্ষা কাল। চাপ চাপ ফুলের মত ফার্ণ ফুটে রয়েছে পাহাড়ের গায়। একটা ঘন সবুজের গন্ধ আটকে আছে আশেপাশে। আমার মনখারাপ কেটে যায় অস্ফুটে।
আমার রাগ হলেও আমি পাহাড় চলে যাই। যখন হয় তখনই চলে যাই। গিয়ে দেখি ঘন বর্ষা। জল ধরা আছে সবখানে। সবকিছু সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছে। ফুলও ফুটে আছে কালারফুল। আমি বুক ভরিয়ে নিশ্বাস নিই। আমার রাগ বৃষ্টির মত ঝরে ঝরে যায়।
আমার অভিমান হলে আমি পাহাড়েই চলে যাই। তক্ষুণি চলে যাই। সেদিনও বর্ষাকাল। ঝিঁঝিঁ ডাকছে সেই কখন থেকে। দিনের বেলায়ও। জল পড়ে সবকিছুর আসল রং বেরিয়ে এসেছে ক্যানভাসে। ভেজা বাতাস আমার সব অভিমান শুষে নিয়ে খাদের দিকে চলে যায়।
আমার ঘুম না আসলে, ইনসমনিয়া হলে, আমি পাহাড় চলে যাই। যখনই আসে না তখনই চলে যাই। সেদিনকে এত বর্ষা যে গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ থাকে মিরিক ছাড়িয়ে। আমি হাঁটতে থাকি। কুয়াশার মধ্যে মেঘের মধ্যে দিয়ে চলে যাই আরও গভীর কোনও পাহাড়ে। তারপরেই আমার ঘুম এসে যায়। মনে থাকে না কিছু আর।
আমার মনভালো হলেও আমি পাহাড় চলে যাই। সঙ্গে সঙ্গে টিকিট কাটি দার্জিলিং মেলের। ট্রেন থেকে নেমে ভিজতে ভিজতে গিয়ে টয়ট্রেনে উঠি। এনজেপি থেকে। ট্রেন সুকনা তিনধারিয়া কার্শিয়াং পেরিয়ে যখন একটা ল্যুপে করে ওঠে, আমি নেমে যাই। পরের ল্যুপটায় উঠবো বলে। কিন্তু ট্রেন আর আসে না। হুইশল বাজিয়ে, ধোঁয়া উড়িয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে যায়, আমি দেখতে পাই না। ট্রেন হারিয়ে যায়। না কি আমি হারিয়ে যাই! তবু আমি মনভালো হলে পাহাড়েই চলে যাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here