দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ চীনা আগ্রাসনের মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক মোতায়েনের কথা বিবেচনা করছে আমেরিকা। বৃহস্পতিবার সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেও। ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্সের মতো দক্ষিণ এশিয়ার যে রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে বেজিং তাদের আগ্রাসী সামরিক নীতি টেবিলে ফেলেছে, সেটাই ওয়াশিংটনকে ভাবাচ্ছে বলে বোঝাতে চেয়েছেন মার্কিন বিদেশ সচিব।

এবার চীনের চোখে চোখ রেখেই কথা বলতে চায় আমেরিকা। জব্দ করতে চায় পিপল্‌স লিবারেশন আর্মিকে। ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিনস–এর মতো এশিয়ার দেশগুলোয় চীনা আগ্রাসন ঠেকাতে চায়। তাই ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা থেকে সেনা সরাচ্ছে আমেরিকা। জানিয়ে দিলেন আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট মাইক পম্পেও। 

বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে একটি ভিডিও সম্মেলনে এই কথা জানিয়ে দিলেন পম্পেও। বললেন, ‘‌পিপলস লিবারেশন আর্মিকে ঠেকাতে যেন ঠিক জায়গায় সেনা মোতায়েন হয়, সেদিকে নজর রাখছি আমরা।’‌ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে ইতিমধ্যে জার্মানিতে মার্কিন সেনার সংখ্যা ৫২ হাজার থেকে কমিয়ে ২৫ হাজার করা হয়েছে। সেই নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রশাসন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে ইউরোপে রাশিয়ার আগ্রাসন বাড়তে পারে।

আমেরিকা এসবে কান দিতে নারাজ। পম্পেওর কথায়, যেখানে যেমন প্রয়োজন, সেখানে সেই অনুযায়ী সেনা মোতায়েন করা হবে। ‘‌কিছু জায়গায় আগের থেকে কম সেনা রাখা হবে। ব্যতিক্রমও থাকবে। যেমন বললাম চীনের আগ্রাসন নিয়ে। ভারত, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিনস–এসব জায়গায় চীনের আগ্রাসন বাড়ছে।’‌ এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, যে এখন ইউরোপের বদলে এশিয়ার দেশেই হয়তো বাড়ানো হবে মার্কিন সেনা।

এ প্রসঙ্গে পম্পেও আরও বলেন, ‘‌এই যে সেনার অবস্থানের পরিবর্তন করা হচ্ছে, তাতে কিছু দেশের নিরাপত্তার দিকটা নিজেদেরই দেখতে হবে। যেটা তারা আগে করেনি। দুনিয়ার আমাদের সমস্ত জোটসঙ্গি এবং ইউরোপের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই আমেরিকা এই পদক্ষেপ করছে।’‌
১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে জড়ায় ভারত এবং চীন।

শহিদ হন ২০ জন ভারতীয় জওয়ান। ঘটনার নিন্দা করেছে আমেরিকা। মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেটের কথায়, শুধু ভারতে হামলা নয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা বাড়িয়েছে পিপল লিবারেশন আর্মি। বেআইনিভাবে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে জমি ছিনিয়ে নিচ্ছে চীন। 

শুধু ভারত সীমান্তে লাল ফৌজের উৎপাত যে বাড়ছে তা নয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন তাদের সামরিক উপস্থিতি ও প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছে। দক্ষিণ চিন সাগর ও পূর্ব চিন সাগরেও জল সীমানার অধিকার নিয়ে গোল বাধিয়ে রেখেছে বেজিং। তেল ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ এই সব অঞ্চলে বহু ছোট দ্বীপে সামরিক ছাউনি তৈরি করে ফেলেছে তারা। তা জাপান, ভিয়েতনামের মতো দেশের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, ভারত-চীন দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত সমস্যার মাঝে নয়াদিল্লি কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ চায় না। কিন্তু তা যেমন ঠিক, তেমনই এও ঠিক যে দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকা সামরিক মোতায়েন বাড়ালে নয়াদিল্লি খুব অখুশি হবে না।

মার্কিন সামরিক মোতায়েনের বিষয়টি বরাবরই সে দেশের প্রেসিডেন্ট বিবেচনা করেই চূড়ান্ত করে। বর্তমানে জার্মানিতে ৫২ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। তা কমিয়ে ২৫ হাজার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন।

পম্পেও আরও বলেন, কিছু জায়গায় মার্কিন সেনার উপস্থিতি থাকবে নামমাত্র। কিন্তু কিছু জায়গায়—যেমন আমি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আগ্রাসনের কথা বলেছি, যা থেকে ভারত, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স এবং দক্ষিণ চীন সাগরে নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, সেখানে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে।

এখানেই থেমে থাকেননি মার্কিন বিদেশ সচিব। তিনি বোঝাতে চান, দক্ষিণ এশিয়ার এই রাষ্ট্রগুলির নিজেদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি যেমন বাড়াতে হবে। তেমনই ইউরোপ সহ গোটা বিশ্বে তাদের বন্ধু দেশগুলিকেও বুঝতে হবে যে, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য কাকে সাহায্য করতে হবে। এ ব্যাপারে আমেরিকা যে বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন পম্পেও।

প্রসঙ্গত, কদিন আগেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে দুর্বৃত্ত বলে মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন বিদেশ সচিব। চীনের মতো একটি শক্তিধর রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন দল সম্পর্কে সরাসরি এহেন মন্তব্য করার অর্থ পরিষ্কার। তা হল—ওয়াশিংটন-বেজিং কূটনৈতিক সম্পর্ক খাদের কিনারায় ঝুলছে। গত ত্রিশ বছরে আমেরিকা ও চীনের সম্পর্কে এতো শৈত্য এর আগে কখনও নেমে আসেনি।

এদিকে জার্মানি থেকে মার্কিন সেনা মোতায়েন কমানো নিয়ে আবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা শুরু করেছেন অনেকে। তাঁদের মতে, ইউরোপের শান্তি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি বজায় রাখতে তা জরুরি। নইলে রাশিয়াকে ভরসা নেই। মার্কিন বিদেশ সচিব অবশ্য সেই তত্ত্বে বিশ্বাসী নন।

তিনি বলেন, মার্কিন সেনা কোথায় কত মোতায়েন থাকবে সে ব্যাপারে কৌশলগত রিভিউ আলোচনা অনেক দিন বকেয়া ছিল। সেই আলোচনা আড়াই বছর আগে থেকে নতুন করে শুরু হয়েছে। আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপে কোথায় কত সেনা মোতায়েন থাকবে সেটা নিয়েই আলোচনা চলছে। তাঁর কথায়, কেউ কেউ মনে করছেন রাশিয়ার থেকে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে তাই এতো বিপুল সেনা জার্মানিতে বসিয়ে রাখতে হবে—এর কোনও মানেই নেই। কারণ বুঝতে হবে কোথায় বিপদের মাত্রা কতটা। সেই অনুপাতেই মোতায়েন জরুরি।

জানিয়ে রাখা ভাল, একদা মার্কিন সেনাবাহিনীতে ট্যাঙ্ক অফিসার ছিলেন পম্পিও। এদিনও তিনি বলেন, এম ওয়ান ট্যাঙ্ক আমার সব থেকে পছন্দের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here