মধ্যপ্রদেশ পর্ব ১

দেবন্বিতা চক্রবর্তী:

আয়তনে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভারতের মধ্যবিন্দু মধ্যপ্রদেশ কিন্তু বরাবরই পর্যটনের কেন্দ্র কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই উপেক্ষিত । কিন্তু পুুরান ও ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ কিন্তু নানান প্রাচীনতা ও স্থাপত্যের নির্দেশক , ও পৌরানিকতার দিক থেকে একটুকরো প্রাচীন ভারতের রূপ দেখতে সফর চালানো যেতেই পারে মধ্যপ্রদেশে ।

বিশ্ববন্দিত অমরপ্রেমের কবিতা ও বহুচর্চিত কামসূত্রের প্রদর্শনী হিসাবে খাজুরাহোর মন্দির স্থাপত্যের দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে সেই প্রচীন যুগ থেকেই ৷ তাই বিরাট মধ্যপ্রদেশের এই ভাস্কর্যের রূপের সাথে এবার পরিচয় করে নেওয়া যাক ৷

খাজুরাহো

রাজধানী হিসাবে ভূপাল হলেও আকর্ষনের দিক থেকে খাজুরাহো দিয়েই সফর শুরু করা যাক ৷ স্থাপত্য শৈলির দিক থেকে আগ্রার পরেই খাজুহোর স্থান ৷ বিমান পরিষেবা পৌছালেও রেল লাইন এখনো চালু হয়নি সেখানে ৷ নিকটতম রেল স্টেশন হিসাবে কলকাতা বারানসি এলাহাবাদ লাইনে সাতনা হয়ে চলাই সুবিধা ৷ সাতনা থেকে যেকোনো যানে খাজুরাহো যেতে ঘন্টা খানেক সময় লাগে ৷

এবার চলে আসি ইতিহাসের পাতায় , ৮ গেটের প্রাচীরে ২৫৭ মি উঁচু খাজুরাহো ছিল তন্ত্রের উপাসক চান্দেলা রাজপুত রাজাদের রাজধানী নামও ছিল khajuravaika অর্থাৎ সুবর্ন নগরী ৷ মতভেদে প্রচুর খেজুর গাছ থাকার জন্য ও এরকম নাম হওয়া সম্ভব ৷

রূপসি ব্রাহ্মন কন্যা হেমবতি ও চন্দ্রের জাত চন্দ্রবর্মন চান্দেলা বংশের সৃষ্টি করেন ৷ স্বপ্নে মাতৃ অাদেশে তিনি আর ৯৫০-১০৫০ সালের মধ্যে বংশের নানান রাজার কালে বেলে পাথরের ইন্দো আর্য ঢঙে নাগরা শৈলির ৮৫ টি মন্দির নিয়ে গঠন হয় খাজুরাহো মন্দির ।

তবে ১১ শতকে মুসলিম আক্রমনে কিছু চান্দেলা বংশ ধ্বংস হয় ও ৬০০ বছরের ও বেশি সময় জঙ্গলে ঢাকা পড়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায় এই বিখ্যাত মন্দির ৷ ১৮১৯ থেকে১৮২৩ সালের মধ্যে ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারগন সার্ভে করতে গিয়ে এই মন্দির গুলি আবিষ্কার করেন । কালের কবলে পড়ে কিছু নিদর্শন নষ্ট হলেও বেশিরভাগ মন্দির ই এখনও বলে চলেছে প্রাচীন ভারতের জীবন যাত্রার গল্প যার প্রধান রসদ ভালবাসা ৷

নিঁখুত ভাস্কর্যে স্থান পেয়েছে মিথুন মূর্তি , শিল্পের প্রধান উপজীব্য হিসাবে স্থান পেয়েছে কামসূত্রের বিভিন্ন ভঙ্গীমা ৷ এক বা একাধিক পুরুষ ও নারীর মিলনের দৃশ্য অসাধারন কারুকার্যের মাধ্যমে পরিস্ফুট হয়েছে ৷অাবার কোথাও কোথাও অলৌকিকতত্ব মূর্তি , কোথাও আদল পেয়েছে যৌনক্ষুধা , আবার কোনো মূর্তি বিষাদ ময় ৷

পাথর কুঁদে তৈরী হয়েছে গার্হস্থজীবন, সব সামান্য কাজ ভুলে ভগবানের পায়ে নিজেকে সঁপে দেওয়াই এর মূল মন্ত্র ।
চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিন্ধ্য পর্বত আর মাঝখানে বেলে পাথরের কারুকার্যে নির্মিত ১৩ কিমি ব্যাপী খাজুরাহোর মন্দির তিনটি অংশে বিভক্ত ইস্টার্ন ওয়েস্টার্ন ও সাদার্ন ৷

পশ্চিমি গোষ্ঠির মন্দির বেশি হওয়ায় পর্যটনের দিক থেকে সেটিই বেশি লোকপ্রিয় I তবে বাড়ি ঘর দোকানপাট,হোটেল বেহিসাবী তৈরী হওয়ার জন্য মন্দিরের পরিবেশ ম্লান হয়েছে তবে ভগ্ন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে তৈরী হয়েছে আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম ৷

সেটাও আর একটি দ্রষ্টব্য স্থান হিসাবে গন্য করা যায় ৷ সবচেয়ে আশ্র্যের বিষয় হিসাবে বলা যায় দিনে সূর্যের নানা অবস্থান ও সময়ের উপর নির্ভর করে মন্দির গাত্রবর্নের পরিবর্তন ও বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ৷

চন্দ্রলোকে ও সাদা রং ধরে মন্দিরে , এই আলোকে ফেব্রুয়ারী তে ভারতীয় সংগীতের সাথে নৃত্যের প্রদর্শনী হয় ,যা দর্শনের জন্য দেশ বিদেশ থেকে লোক জনের ভিড় হয় । দক্ষিণ ও পূর্বের মন্দির গুলি নিকটে ই গাড়ি নিয়ে ঘোরা যেতে পারে ।

পশ্চিমের মন্দির গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কান্ডারীয় মন্দির, বিশ্বনাথ মন্দির, চিত্রগুপ্ত ,মহাদেব, লক্ষণ ও লক্ষ্মী মন্দির । প্রতি মন্দিরের আদল এক কিন্তু ভিতরে দেব মূর্তি ভিন্ন রকমের ৷

১২ টি মন্দির নিয়ে বেড়াজালে ঘেরা মহুয়া বাগীচায় পশ্চিমী গোষ্টি – যেন পাথরের জাহাজ চলছে সারি দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ,সূর্য থেকে সূর্যাস্থের খেলা ৷

পশ্চিম গোষ্টির দক্ষিণে ওসন্ অফ শিব অরথাৎ শিব সাগর বা লেক, এখানেই গ্রানাইট পাথরের চৌষট্টি যোগিনীর মন্দির । ধ্বংসের দেবী কালিকে যোগিনরা পূজা করতেন , তারা ছিলেন ৬৪ জন ৷ তাদের চিন্তনে তৈরী হয়েছে চৌষট্টি যোগিনীর মন্দির ৷

মধ্য ভারতের এই অপরূপ শিল্প শৈলী আর প্রাচীনতারর পরতে পরতে খুঁজে চলা চলবেই । খাজুরাহোর পর এবার দ্বাদশজ্যোর্তিলিঙ্গ দর্শনে চলবেপথচলা ৷ ছবি- লেখক৷

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here