দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একদিনে রেকর্ড মৃত্যু। বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস  প্রাণ কাড়ল ১ হাজার ৭৬১ জনের। মৃত্যুর হারের এই ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ অত্যন্ত ভয়াবহ, মানছেন বিশেষজ্ঞরা।

দৈনিক সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। পৌনে তিন লাখ থেকে আড়াই লাখে নেমেছে। তবে তাতে চিন্তা বিন্দুমাত্র কমেনি। কারণ করোনায় একদিনেই মৃতের সংখ্যা রেকর্ড করেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক বলছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ১৭৬১ জনের, এখনও অবধি যা সর্বাধিক। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে মৃত্যুহার তেমনভাবে না বাড়লেও প্রতিদিন সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে। খুব শীগগির দৈনিক মৃত্যু দু’হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ জন এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬১ জন।

করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন অত্যন্ত সংক্রামক, মানছেন বিশেষজ্ঞরা। এখনও পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৫৩ লাখ ২১ হাজার ৮৯ জন। ভাইরাসকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ কোটি ৩১ লাখ ৮ হাজার ৫৮২ জন। এই মারণ ভাইরাস দেশে প্রাণ কেড়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৩০ জনের। বর্তমানে দেশে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৩১ হাজার ৯৭৭ জন।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে টিকাকরণে জোর দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এবার দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। আগামী ১ মে থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখনও পর্যন্ত টিকা পেয়েছেন ১২ কোটি ৭১ লাখ ২৮ হাজার ১১৩ জন।

উল্লেখ্য, এতদিন ৪৫ বছর বা তার ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তাঁদেরকেই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, এবার খোলাবাজারেও বিক্রি করা যাবে ভ্যাকসিন। ৫০ শতাংশ ভ্যাকসিন খোলাবাজারে বিক্রি করতে পারবে প্রস্তুতকারী সংস্থা। তারা সরাসরি সরবরাহ করতে পারবে রাজ্যকে।

দেশের সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত রাজ্য মহারাষ্ট্র। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৫৮,৯২৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩৫১ জনের। বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ের করোনা পরিস্থিতিও ভয়ঙ্কর। বৃহন্মুম্বই পুরসভা জানাচ্ছে, মুম্বইতে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৮৭ হাজার ছাড়িয়েছে। বস্তি এলাকাগুলোর থেকে বড় বড় আবাসনেই সংক্রামিত রোগীর সংখ্যা বেশি। শহরের অন্তত ৯০ শতাংশ সংক্রমণের রিপোর্ট এসেছে আবাসনগুলি থেকেই। রাজ্যে এখন ১৫ দিনের লকডাউন চলছে। তবে তাতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে সম্পূর্ণ লকডাউনের কথা ভাবা যেতে পারে বলেই জানিয়েছে উদ্ধব ঠাকরের প্রশাসন।

দিল্লিতে একদিনে সর্বাধিক মৃত্যু ২৫০, যা এখনও অবধি রেকর্ড করেছে। স্বাস্থ্য দফতর বলেছে, প্রতি ঘণ্টায় রাজধানীতে অন্তত ১০ জন মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগীর সংখ্যা এতটাই বাড়ছে যে হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলিতে কোভিড বেড দেওয়া যাচ্ছে না রোগীদের। একই বিছানায় রোগীদের ঠাসাঠাসি করে থাকতেও দেখা গিয়েছে।

দক্ষিণের রাজ্যগুলির মধ্যে কেরল, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশে সংক্রমণ বেশি।  বিহারে রাত্রিকালীন কার্ফু জারি করা হয়েছে। রাত ৯টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত এই কার্ফু কার্যকর থাকবে। উত্তরপ্রদেশের ৫ শহরে লকডাউনের নির্দেশ দিয়েছে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। লখনউ, প্রয়াগরাজ, বারাণসী, কানপুর এবং গোরক্ষপুর— এই ৫ শহরে আগামী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের কথায়, করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অসচেতনতা পরিস্থিতির জন্য দায়ী। বাসে, ট্রামে, ভিড় জায়গাতেও মাস্ক না পরেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে অনেকেই। যা ডেকে আনছে বিপদ। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রাজ্য়ে জারি করা হয়েছে নাইট কার্ফু। অবিলম্বে সাধারণ মানুষ সতর্ক না হলে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here