দেশের সময় ওয়েরডেস্কঃ কখনও একটু কাছাকাছি, আবার কখনও আরও দূরে। পৃথিবী আর চাঁদের মধ্যে এমন রোম্যান্সের মুহূর্ত চলতেই থাকে। দীর্ঘ ব্যবধানে সামান্য কাছাকাছি আসাটাই বড় প্রাপ্তি। কিন্তু এ বার আরও একটু দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ।

পৃথিবী আর তার কৌণিক ব্যবধানে পূর্ণিমায় এক গাল হাসি ছড়িয়ে গোল থালার মতোই চাঁদ জ্বলজ্বল করবে আকাশে। তবে একটু অন্যরকম। গোল, কিন্তু সে যেন পুরোপুরি গোল নয়। একটু ছোট, একটু ডিম্বাকার। তবে উজ্জ্বলতায় ঘাটতি নেই। বরং যেন কিঞ্চিৎ বেশি উজ্জ্বল তার জ্যোৎস্না।

এমন মাহেন্দ্রক্ষণ বিরল। ১৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার রাতে এমনই এক মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষ্মী হতে চলেছে বিশ্ব। দীর্ঘ ১৩ বছর পর।

‘ফুল মুন’ অর্থাৎ পূর্ণ চন্দ্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন এই পূর্ণ চন্দ্র আসলে ‘হারভেস্ট মুন’। ২০০৬ সালে এমনই ‘হারভেস্ট ফুল মুন’ দেখা গিয়েছিল শেষ বার। ১৩ বছর পরে ফের এই মহাজাগতিক ঘটনা ঘটতে চলেছে আগামিকাল, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর। টেলিস্কোপ সাজিয়ে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

কী এই হারভেস্ট মুন?

আকারে, রঙে, চেহারায় চাঁদের রকমফের রয়েছে। কখনও সে রূপোলি থালার মতো উজ্জ্বল ‘সুপারমুন,’ কখনও রক্তাক্ত লাল ‘ব্লাড মুন’ আবার কখনও নীলাভ আভায় ঘেরা ‘ব্লু মুন।’ হারভেস্ট মুনকে অনেক সময় বলা হয় ‘মাইক্রোমুন।’ পূর্ণিমায় যে চাঁদকে আমরা দেখি তার তুলনায় এই চাঁদ আকারে ১৪ শতাংশ ছোট, ৩০ শতাংশ বেশি ডিম্বাকার। খালি চোখে আমি, আপনি অবশ্য এই ফারাকটা ধরতে পারব না। ধরা পড়বে টেলিস্কোপে।

সৌর পরিবারের পৃথিবী আর পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের গড় দূরত্ব তিন লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। মাইক্রোমুন যখন আকাশে জ্বলজ্বল করে তার দূরত্ব পৃথিবী থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লক্ষ ৫ হাজার কিলোমিটার। শুক্রবার যে চাঁদ দেখা যাবে সে আরও কিছুটা সরে যাবে পৃথিবী থেকে, আরও ১৩১৩ কিলোমিটার বেশি।

হারভেস্ট মুন নামের কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। পৃথিবা ও চাঁদের পারস্পরিক ঘূর্ণনের তারতম্যে সাধারণত সেপ্টেম্বরেই এই দূরত্ব তৈরি হয়। যদিও শেষবার ২০০৬ সালে এটা হয়েছিল জানুয়ারিতে। আকারে ছোট দেখালেও, পূর্ণিমায় এই চাঁদের রূপোলি আলোয় ভেসে যায় ধানক্ষেত। বিঘের পর বিঘের এক মায়াবী আবহ তৈরি হয়। তাই তখন চাঁদকে হারভেস্ট মুন বলা হয়।

জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ঘোরে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে। আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে উপবৃত্তাকার (অনেকটা ডিমের মতো) কক্ষপথে পাক খায় চাঁদ। পৃথিবীকে এক বার লাট্টুর মতো পাক খেতে চাঁদের সময় লাগে সাড়ে সাতাশ দিন। এই সাড়ে সাতাশ দিনের মধ্যে চাঁদ এক বার পৃথিবীর কাছে চলে আসে এবং এক বার পৃথিবীর থেকে দূরে চলে যায়। দূরত্বটা যখন সব থেকে কমে যায়, সেটাকে বলে ‘অনুসূর’ অবস্থান (Perihelion Location) এবং তারা যখন একে অপরের থেকে সর্বাধিক দূরত্বে থাকে, সেই অবস্থানের নাম ‘অপসূর’ (Aphelion Location)

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি অনুসূর অবস্থানে দূরত্ব সমান হয় না। বেশির ভাগ সময়েই চাঁদ ও পৃথিবীর দূরত্ব তিন লক্ষ ৫৭ হাজার কিলোমিটার বা তার বেশি হয়। অনুসূর অবস্থানে সব সময় পূর্ণিমাও মেলে না। এই সব দিক থেকেই শুক্রবারের পূর্ণিমাটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একে পূর্ণ চন্দ্র, তায় হারভেস্ট মুন।

ওয়াশিংটনের আকাশে শুক্রবার সন্ধে সাড়ে ৭টা থেকেই হারভেস্ট মুন দেখা যাবে। ভারতীয় সময়ের হিসেবে শুক্রবার রাত ১২টা ৩২ মিনিট নাগাদ চাঁদ উঠবে আকাশে। রাত থেকেই হারভেস্ট মুন দেখতে পাবেন বিশ্ববাসী। যদিও ২০০৬ সালের ১৪ জানুয়ারিতে ভোর ৪টে ৪৮ মিনিট নাগাদ হারভেস্ট মুন দেখা গিয়েছিল।

২০১৯ সালটাই চাঁদের বিস্ময়ে ভরা। জানুয়ারিতেই ‘সুপারমুন’ দেখা গিয়েছিল। পৃথিবীর অনেক কাছে চলে এসেছিল চাঁদ। বিশাল গোল থালার মতো সেই চাঁদকে কেউ বলছিলেন সুপারমুন, কেউ বা এক্সট্রা সুপারমুন। ফের এমন চাঁদ দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ২০৩৭ সাল অবধি।

জানুয়ারি ৩১ থেকে মার্চ ৩১ পর্যন্ত তিন মাসের ব্যবধানে দু’বার দেখা যাবে ‘ব্লু মুন।’ সাধারণত, ১২ মাসে ১২টি পূর্ণিমা অর্থাৎ গোটা চাঁদ দেখতে পাই। কিন্তু ৩০ দিনে সব মাস হয় না। কিছু মাস ৩১ দিনের হওয়ায় অতিরিক্ত দিন যোগ করলে কোনও মাসে দু’বার পূর্ণিমা হয়ে থাকে। সেই মাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমাকে ব্লু মুন বলা হয়। এটিও বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here