দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ তৃণমূলের নিশানা থেকে কিছুতেই রেহাই মিলছে না শুভেন্দু অধিকারীর। তিনি তাঁর সদ্য ছেড়ে আসা দলের বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ তুলছেন, তার প্রত্যেকটিই সপাটে তাঁর দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে র‍াজ্যের শাসকদল। যাকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন— পেইড ব্যাক ইন হিজ ওন কয়েন! আর এই পরিস্থিতিতেনিজের খাসতালুকে শক্তিপরীক্ষায় শুভেন্দু। কাঁথি শহরে বিশাল রোড-শো ঘিরে বিজেপি-কর্মী সমর্থকদের উন্মাদনা তুঙ্গে। শুভেন্দুর সঙ্গে রোড-শোতে রয়েছেন সৌমিত্র খাঁ, জয়প্রকাশ মজুমদারের মতো বিজেপি নেতারা। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর নিজের শহরে এই প্রথম বড় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিলেন শুভেন্দু। প্রথম দিনই তাঁর রোড শোতে বিপুল সাড়া। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এই রোড শো-র শেষে সভা করে বিজেপি।

বিশাল রোড শো করে তিনি বলেন, ‘মেদিনীপুরে বিশ্বাসঘাতকদের জন্ম দেয় না। এখানে এসে তৃণমূল নেতারা বলেছে, মেদিনীপুরে বিশ্বাসঘাতকদের জন্ম হয়। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, মেদিনীপুরের ৩৫টা আসনেই হারাব। মেদিনীপুরের মাটি বর্ণপরিচয় স্রষ্টা বিদ্যাসাগরের মাটি। শহিদ ক্ষুদিরামের মাটি, মাতঙ্গিনী হাজরার মাটি।’ এদিন ফের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘ভাইপোতে আমার আপত্তি নেই। আপত্তি তোলাবাজ ভাইপোতে।’

বুধবারের তৃণমূলের সভাকেও কটাক্ষ করেছেন তিনি। বলেন, ‘গতকাল তৃণমূলের সভায় দুই মেদিনীপুর মিলিয়ে মাত্র ৫০০০ লোক এসেছিল। আর আজকের সংখ্যাটা দেখে নিন। এটা শুধু ট্রেলার মাত্র। আরও অনেক বাকি আছে।’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বর্ধমানের পূর্বস্থলীর সভা থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে শুভেন্দু অভিযোগ তুলেছিলেন পরিবারতন্ত্রের। বুধবার শুভেন্দুর খাসতালুক হিসেবে পরিচিত কাঁথিতে পাল্টা তাঁর বিরুদ্ধেই পরিবারতন্ত্রের সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করেছে তৃণমূল। দলীয় সভায় পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের খোঁচা, ‘শিশির অধিকারীর ছেলে না-হলে তুমি আজকের শুভেন্দু অধিকারী হয়ে উঠতে পারতে না। ২০০৯-এ তোমার মতো একটা বাচ্চা ছেলে কীসের জন্যে এমপি-র নমিনেশন পেয়েছিল? পেয়েছিলে, শিশিরবাবুর ছেলে বলে। তুমি যে পরিবারতন্ত্রের হাত ধরে এমপি হয়েছিলে, সেই তুমিই কি না পরিবারতন্ত্রের কথা বলো!’ এদিন ফিরহাদের উদ্দেশে শুভেন্দুর পালটা কটাক্ষ, ‘কলকাতাকে মিনি পাকিস্তান বানাতে চাওয়া যিনি গতকাল এখানে এসেছিলেন, তিনি আজ টিভি খুলে দেখে নিন।’

পরিবারতন্ত্র নিয়ে ফিরহাদ নিশানা করেছিলেন শুভেন্দুর এখনকার দল বিজেপিকে। গেরুয়া শিবিরের পরিবারতন্ত্রের উদাহরণ দিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ‘বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার ছেলে বিজেপি নেতা নয়? পীযূষ গোয়েল কার ছেলে? অনুরাগ ঠাকুর কার ছেলে? প্রমোদ মহাজনের মেয়ে, গোপীনাথ মুন্ডের মেয়ে বিজেপিতে নেই? অমিত শাহের ছেলে কী ভাবে বড় ক্রিকেটার না-হয়েও ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডে গেল? রাজনাথ সিংয়ের ছেলে এমএলএ নয়? কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ছেলে বিজেপি নেতা নয়? আর তোমরাই কি না পরিবারতন্ত্রের কথা বলো!’ জোর গলায় পুরমন্ত্রী দাবি করেন, ‘আমাদের দলে পরিবারতন্ত্র নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ, গান্ধীবাদ, সুভাষবাদ জিন্দাবাদ নিয়ে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে এগিয়ে আসে, তার জন্যে তাদের এগিয়ে দিচ্ছি।’ সেই প্রসঙ্গতেই এদিন অভিষেককে আলাদা করে বোঝাতে ‘তোলাবাজ ভাইপো’ প্রসঙ্গ তুলে আনেন শুভেন্দু।

তাঁর ‘ভাইপো’ মন্তব্য নিয়েও শুভেন্দুকে বিঁধেছেন সৌগত। তাঁর কথায়, ‘দলনেত্রীর নির্দেশমতো আমি শুভেন্দুকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম। সেখানে অভিষেক ও প্রশান্ত কিশোর ছিলেন। শুভেন্দু সেখানে অভিষেককে বলেছিলেন, কোনও অভিযোগ নেই অভিষেকের বিরুদ্ধে। যে আমার সামনে বলেছিল অভিযোগ নেই, তার মুখের সামনে চটি (শাহকে প্রণাম) ধরতেই ‘তোলাবাজ ভাইপো হটাও’ হয়ে গেল। শুভেন্দু বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ইতিহাসে মানুষ শেষ কথা বলে, বিশ্বাসঘাতকরা নয়।’ এদিন সৌগত ফের বলেন, ‘শুভেন্দুর ঔদ্ধত্যে বিরক্ত মানুষ। তাঁরা এখন স্বস্তি পাচ্ছে শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ায়। মেদিনীপুরের মাটি শুভেন্দুকে ক্ষমা করবে না।’

শুভেন্দু অবশ্য সৌগতর উদ্দেশেও পালটা কটাক্ষ করে বলেন, ‘আমি সৌগত রায়ের হয়ে প্রচারে গিয়েছি, ওনাকে আমার প্রয়োজন হয়নি প্রচারের জন্য। নীতির কথা সৌগত রায়ের মুখে মানায় না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here