দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০১ জন। এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫৫ জন। এই নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ২৯০২। যে ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে আবার তাতে উদ্বেগ বেড়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দেওয়া হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩০১।
মৃত্যুর হারেও চিন্তার ভাঁজ চওড়া হয়েছে কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারগুলির। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৮। শুক্রবার সকালে মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৬। ১২ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। তবে আশার কথা আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও বাড়ছে দেশে। বর্তমানে সেই সংখ্যা ১৮৪।
আক্রান্তের সংখ্যায় এখনও পর্যন্ত শীর্ষস্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র। সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৩ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৮৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১১। এখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১০২ জন। অন্য দিকে, দিল্লিতেও এক লাফে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৮৬ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
আক্রান্তের সংখ্যায় মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু এবং দিল্লির পর রয়েছে কেরল(২৯৫), তার পর রাজস্থান(১৭৯), উত্তরপ্রদেশ(১৭৪), অন্ধ্রপ্রদেশ(১৬১) এবং তেলঙ্গানা(১৫৮)।
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩। মৃতের সংখ্যা ৩। রাজ্য সরকারের হিসেব অনুযায়ী এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসাধীন আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮।

গত তিন দিনে দ্বিগুণ বাড়ল ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা:

বিগত তিন দিনে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বি’‌গুণ হয়েছে। দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিঘি জামাতের সমাবেশের কারণেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট। ওই সমাবেশে হাজির হওয়া এমন প্রায় ৬৫০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে শুক্রবার সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। ফলে হিসাব করলে দেখা যাবে, গত তিন দিনে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, তার ২৫ শতাংশই এই ধর্মীয় সমাবেশের কারণে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়, ‘‌তবলিগি জামাতের সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন এমন ৬৪৭ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে গত দু’দিনে।’‌ আক্রান্ত ব্যক্তিরা দেশের ১৪টি রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। গত ২৪ ঘন্টায় মোট ৪৭৮ জনের শরীরে করোনার হদিশ মিলেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একদিনে এখনও পর্যন্ত এটাই সর্বাধিক। তার মধ্যে ২৪৭ জন ব্যক্তি ওই সমাবেশে হাজির ছিলেন।
মার্চ মাসের শুরু থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আলামি মার্কেজ বাংলেওয়ালি মসজিদে ধর্মীয় জমায়েতের ডাক দিয়েছিল তবলিঘি জামাত। তাতে যোগ দিতে এসেছিলেন দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার মানুষ। বিশ্ব জুড়ে করোনা তখন রীতিমতো থাবা বসিয়েছে। সেই আবহেই মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কিরঘিজস্তান থেকে বিদেশিরা এসেছিলেন। ১৫ মার্চ অনুষ্ঠান শেষের পরেও নিজামউদ্দিন এলাকাতেই থেকে যান অনেকে। জনতা কার্ফুর আগের দিন অর্থাৎ ২১ মার্চ ওই মসজিদে ছিলেন ১৭৪৬ জন। যাঁদের মধ্যে ২১৬ জন বিদেশি ছিলেন। আর গোটা দেশে সেই সময়ে বিদেশ থেকে আসা মুসলিম ধর্মপ্রচারক ছিলেন ৮২৪ জন। মার্কিন মুলুক, ইতালি, ফ্রান্স সহ বহু দেশে থেকে আরও ১৩০০ জন প্রতিনিধি এসেছিলেন সেখানে। জানা গিয়েছে, ওই সমাবেশে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণকারী এসেছিলেন তামিলনাড়ু থেকে। ওই রাজ্য থেকে এসেছিলেন প্রায় ৫০০ জন। উত্তরপ্রদেশ ইতিমধ্যেই ১৬০ জনকে চিহ্নিত করেছে, যাঁরা ওই ধর্মসভায় অংশগ্রহণ করেছেন। মহারাষ্ট্র থেকে ১০৯, মধ্যপ্রদেশ থেকে ১০৭, বিহার থেকে ৮৬ জন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৭৩ জন, তেলঙ্গনা থেকে ৫৫ জন, ঝাড়খণ্ড থেকে ৪৬ জন ওই ধর্মসভায় যোগ দিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়াও, মেঘালয়, ওডিশা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, আন্দামান, হিমাচল প্রদেশ থেকেও মানুষ গিয়েছিলেন ওই ধর্মসভায়। আন্দামানে ৯ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে যাঁরা ওই তবলিঘে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। যাঁদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে দিল্লি থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজেদের গন্তব্যে ফিরে গিয়েছেন। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কাটা বেড়ে গিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here