দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা আতঙ্কে ‌তেহরানে আটকে দুর্গাপুরের যুবক বিকাশ দাস। ইরানের তেহরানের একটি বাড়িতে গৃহবন্দি বিকাশ। ওই বাড়িতে আরও দশ জন ভারতীয়ের সঙ্গে আটকে তিনি। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন কলকাতার কলকাতার সায়ন্তন ব্যানার্জি।

পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও বিকাশ ফিরতে না পারায় চিন্তায় তাঁর পরিজনেরা। ছেলেকে ফেরানোর বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানান বিকাশের অভিভাবকরা। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসকের সঙ্গে এই নিয়ে তাঁদের কথাও হয়েছে। রাজ্য সরকারের মাধ্যমে ইরানের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

চিনের পরে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে ইরানে। সেখানকার পরিস্থিতি বিপজ্জনক। এদিকে করোনাভাইরাসের ভয় বাড়ছে ভারতেও। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রামিতের সংখ্যা। আতঙ্কের পরিবেশে বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বললেন, ‘‘এখনই আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। অযথা ভয় ছড়াবেন না। গোটা বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুপুরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে।’’

ইতালি ফেরত দিল্লির বাসিন্দা ও দুবাই থেকে বেঙ্গালুরু হয়ে হায়দরাবাদের আসা যুবকের শরীরে করোনাভাইরাসের খোঁজ মেলার পরেই তোলপাড় হয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। এদিকে কেরলে উহান ফেরত তিন ছাত্রও আক্রান্ত ভাইরাসের সংক্রমণে। এর মাঝেই দিল্লিতে আসা ২৩ জন ইতালিয় পর্যটকের মধ্যে ১৬ জনকে ভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে আইসোলেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। জয়পুরেও আক্রান্ত এক ইতালিয় পর্যটক।

ভাইরাস সংক্রমণের খবর মিলেছে বিহার, আগ্রা থেকেও। লখনৌ হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে আগ্রার একই পরিবারের ছ’জন সদস্যকে।

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অযথা আতঙ্ক ছড়িয়ে ভয় তৈরি করার মানে নেই। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত আছে মেডিক্যাল টিম। বিদেশ থেকে ভারতে আসা পর্যটকদের মানেসরের আইসোলেশন ইউনিট ও আইটিবিপি-র ক্যাম্পে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নয়ডার স্কুল প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বলেন, স্কুলের পরিবেশ স্থিতিশীল।

৪০ জন পড়ুয়াকে আইসোলেশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। স্কুল স্যানিটাইজ করছে মেডিক্যাল টিম। সেখানে এখনও ভাইরাস সংক্রামিতের খোঁজ মেলেনি। যে পড়ুয়ার অভিভাবকের শরীরে সিওভিডি ১৯ পজিটিভ ছিল তাঁর অবস্থাও স্থিতিশীল।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশেষ ট্রাভেল অ্যাডভাইজারি জারি করা হয়েছে। ইতালি, ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটকদের জন্য বাতিল করা হয়েছে ভিসা। দেশ থেকেও এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুর, চিন, জাপান, ইরান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া যেতে নিষেধ করা হয়েছে। দেশের ২১টি বিমানবন্দরে চলছে বিশেষ থার্মাল স্ক্রিনিং। সমুদ্রবন্দরগুলিতেও স্ক্রিনিং চালাচ্ছে বিশেষ টিম।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগেই বলেছিলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। সকলে মিলে একসঙ্গে লড়তে হবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। টুইটার বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে তিনি একাধিক মন্ত্রকের সঙ্গে ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছেন। প্রস্তুতির প্রসঙ্গে নানারকম বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের বিমানবন্দরে পরীক্ষা করার বিষয়টিও।
করোনা রুখতে মৌলিক কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে সেই বিষয়টিও উল্লেখ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যে রয়েছে সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধোয়া, হাঁচি বা কাশির সময় মুখ-নাক ঢেকে রাখা ইত্যাদি। এদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনও বলেন, কিছু নিয়ম মেনে চললে এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপ রোখা সম্ভব। সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

করোনায় চীনের বাইরে সবথেকে খারাপ অবস্থা ইরানে। সেখানে ইতিমধ্যেই ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনার কারণে।

গোটা ভারতের স্থানে স্থানেই করোনা প্রভাব পড়ছে। সোমবারই দু’‌জন ব্যক্তির শরীরে করোনার অস্তিত্ব মিলেছে। বুধবার সেই সংখ্যা বেড়ে ২৮–এ দাঁড়িয়েছে। এদিন নতুন করে ১৫ ইতালীয় পর্যটকের শরীরে করোনাভাইরাসের প্রমাণ মিলল। এঁদের সকলকে রাখা হয়েছে দিল্লির আইটিবিপির কোয়ারান্টাইন সেন্টারে।

সমস্ত রকম প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আরও পরীক্ষা–নীরিক্ষা চালনো হচ্ছে। সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে সতর্কতা জারি করেছে রাজস্থান প্রশাসন। ঝুনঝুনু, বিকানের, জয়সলমের, যোধপুর, উদয়পুর ও জয়পুরের জেলা কালেক্টরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সবরকম ব্যবস্থা নিতে। বিশেষ করে, যে হোটেলে ওই পর্যটক দল ছিল, তা খালি করে স্যানিটাইজ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এদিকে, হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর জানিয়েছেন, তাঁর রাজ্যেও একজন আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ।

বলেন, ওই ব্যক্তি বিলাসপুর থেকে এসেছেন। যদিও, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এখনই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চান না। তবে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here