দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: চিনে হু হু করে বাড়ছে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা। তবে পাশাপাশি বড় সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে ইরানও। সে দেশে করোনাভাইরাসে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। মারণ অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন খোদ সে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে এবতেকর!

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। এখনও পর্যন্ত সে দেশে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ২৪৫। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০৬ জনের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চিনের বাইরে এখনও পর্যন্ত ইরানেই মৃতের সংখ্যা এই সব থেকে বেশি।

ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে সে দেশের মহিলা বিষয়ক দফতরেরও দেখাশোনা করেন। বাড়িতেই তাঁর শুশ্রূষা চলছে বলে জানা গেছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ইরান সরকারের আরও এক প্রতিনিধি এই ভাইরাসে আক্রান্ত। তিনি ইরানি পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশ বিষয়ক কমিটির প্রধান মজতুবা জলনৌর।

ইরান সরকার জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক ও উদ্বিগ্ন। তেহরান, কোম, মাশাদ-সহ দেশের ২২টা শহরে শুক্রবারের নমাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। আগামী সপ্তাহে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসের আক্রমণে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৫৮ জন। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ হাজার ২৬৫ জন। এর মধ্যে শুধু চিনের হুবেই প্রদেশেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৪২৪ জন। মারা গেছেন ২ হাজার ৭৮৮ জন।

চিনের স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, গতকাল নতুন করে ৪৪ জন এই ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৭ জন। তবে আশার বিষয় হচ্ছে এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৪৩৬ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

চিন ও ইরানের পরেই ঝুঁকির দেশ হিসেবে রয়েছে ইতালি এবং দক্ষিণ কোরিয়া। যথাক্রমে ১৬ জন ও মারা গেছেন ১৩ জন মারা গেছেন সে দু’টি দেশে। আক্রান্ত হয়েছেন কয়েক হাজার। হু-এর আশঙ্কা, যেভাবে সমস্ত দেশে করোনাভাইরাস থাবা বসাচ্ছে, তাতে এই অসুখ এপিডেমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ‘প্যান্ডেমিক’ হতে পারে।

এসবের মধ্যেই বিধ্বস্ত অবস্থা শেয়ার বাজারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন করোনাভাইরাসের জেরে বিশ্বব্যাপী আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খেতে পারে। এই আশঙ্কাতেই এ রকম পতন দেখল শেয়ার বাজার। শুক্রবার বাজার খুলতেই সেনসেক্সের সূচক পড়েছে ১,১৫০ পয়েন্টেরও বেশি। মুহূর্তে ৩৮,৫৯০ পয়েন্টে অবস্থান করছে সেনসেক্স।
তবে এই ধস দেশীয় কোনও কারণে নয়। এর জন্য সরাসরি দায়ী করা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে করোনা আতঙ্ককেই। যার কারণে এদিন নিফটি ৩৪৬ পয়েন্ট পতনের মুখ দেখে। বর্তমানে নিফটির অবস্থান ১১,২৮৬.৫০। তথ্য বলছে, ২০০৮–০৯ সালের পর থেকে এত খারাপ সময় কখনও আসেনি বিশ্ব বাজারে। সব ক্ষেত্রেও শেয়ার বিক্রিতে পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে দ্রুতগতিতে।

ব্যাঙ্কিং থেকে শুরু করে অটোমোবাইল, মেটাল হোক বা গ্যাস-তেল, সব ক্ষেত্রের শেয়ারই সর্বাধিক পতন দেখছে এদিন। এছাড়াও সেনসেক্সের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পতন দেখতে পাওয়া গিয়েছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক ও ইনফোসিসের শেয়ারে। অধিকাংশ সময়ে ঊর্ধ্বমুখী থাকা এই প্রতিষ্ঠানগুলির সূচক নেমেছে প্রায় ৩০০ পয়েন্ট।

বৃহস্পতিবারও বজায় ছিল শেয়ার বাজারের নিম্নগতি। দিনের লেনদেন শেষে সেনসেক্স পড়ে ১৪৩.৩০ পয়েন্ট। সেনসেক্স বন্ধ হয়েছে ৩৯৭৪৫.৬৬ পয়েন্টে। নিফটি বন্ধ হয় ১১৬৩৩.৩০ পয়েন্টে। করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে বৈদেশিক তহবিল প্রত্যাহারের কারণে বৃহস্পতিবার ভোরে সেনসেক্স ২০০ পয়েন্ট নীচে নামে।

বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের ৩০টি শেয়ারের সেনসেক্স শুরুতে ২০২.৪৪ পয়েন্ট বা ০.৫১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৩৯৬৮৬.৫২–পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে জাতীয় স্টক এক্সচেঞ্জের নিফটি প্রারম্ভিক অবস্থান থেকে ৬২.৭৫ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ লোকসানে ১১৬১৫.৭৫ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
সেনসেক্সের সংস্থাগুলির মধ্যে এইচসিএল টেক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, টিসিএস, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা, ইন্ডাসিন্ড এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর কমেছে। পাশাপাশি টাইটান, এনটিপিসি, নেসলে ইন্ডিয়া এবং কোটাক ব্যাঙ্কের শেয়ার লাভে চলছে।

ওএসএসের সর্বনিম্ন মূল্য শেয়ার প্রতি ২৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার শেয়ার বন্ধের মূল্য ৩১৮.০৫ টাকা থেকে এটি ৬ শতাংশ কম। সরকার সংস্থার পাঁচ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এছাড়াও পাঁচ শতাংশ অতিরিক্ত সাবস্ক্রিপশন রাখার বিকল্প রয়েছে।

বৃহস্পতিবার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার বিক্রয় শুরু হয়েছে। খুচরা ক্রেতারা শুক্রবার তাদের দর রাখতে সক্ষম হবে।পতন হয়েছে নিফটিতেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ২০০৮-০৯ আর্থিক বছরের পর শেয়ার সূচকে এক ধাক্কায় এত বড়ো পতন এই প্রথম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here