দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ এক ব্যক্তি এক পদ। অর্থাৎ দলের কোনও নেতা এক সঙ্গে দুটি পদে থাকতে পারবেন না। কেউ সংগঠনের কোনও পদে থাকলে প্রশাসনিক পদে থাকতে পারবেন না। আবার কেউ রাজ্য বা জেলায় প্রশাসনিক পদে থাকলে সাংগঠনিক দায়িত্ব পাবেন না।

শেষমেশ হলও তাই। শনিবার তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে দলের কর্মসমিতির বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দলে এই নতুন নীতি প্রবর্তণের প্রসঙ্গে। কর্মসমিতির বৈঠকে তা পাশ হয়েছে। পরে দলকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে এই ফর্মুলার বাস্তবায়ন যে এক্ষুণি শুরু হয়ে যাবে বা আজই তার প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে তা নয়। সূত্রের খবর তা ধীরে ধীরে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোটামুটিভাবে যা জানা যাচ্ছে তা হল, মাসখানেক পর এই ফর্মুলার বাস্তবায়ন শুরু করবে তৃণমূল। যে সব মন্ত্রীরা জেলা সভাপতি পদে রয়েছেন, তাঁদের কোনও একটি দায়িত্ব ছাড়তে হবে। আবার পাশাপাশি পুরসভা বা জেলা পরিষদের পদে থাকলে জেলা সংগঠনে কাউকে রাখা হবে না।

প্রসঙ্গত, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, শিল্প মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ প্রমুখ এখন সরকার এবং সংগঠন দুটির পদেই রয়েছেন।

তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে, এই নীতি বাস্তবায়নের ব্যাপারে দলের মধ্যে আলোচনা নতুন নয়। তবে এ ব্যাপারে এ বার জোরালো দাবি তুলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ, তিনি মনে করেন, গত জমানায় যে ভাবে একেক জন নেতা বা মন্ত্রীর অনেক দায়িত্ব ছিল, তাতে সংগঠনের বিষয় অবহেলিত হয়েছে। এমনও ছিল যে, কেউ তিনটি দফতরের মন্ত্রী, কোনও উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, সেই সঙ্গে দুই জেলার সভাপতি। যেমন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি দমকল, আবাসন ও পরিবেশ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। সেই সঙ্গে কলকাতার মেয়র। হাউজিং বোর্ডের চেয়ারম্যান। আবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতা জেলার সভাপতি।

তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, এ ভাবে একাধিক পদে থাকলে কোনও না কোনও দায়িত্বের প্রতি অবহেলা হয়। বিশেষ করে সংগঠনের কাজ অবহেলিত হতে দেখা যায়। সেই কারণেই এই নীতি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অন্যদিকে, একুশের নির্বাচনের আগে প্রার্থী তালিকায় একঝাঁক তারকাদের নাম ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ চক্রবর্তী থেকে শুরু করে  লাভলি মৈত্র, ঘাসফুল শিবিরের জন্য জয় এনে দিয়েছিলেন অনেকেই। এবার এই তরুণ তারকাদের দলের সাংগঠনিক কাজেও লাগাতে চান তৃণমূল সুপ্রিমো। শনিবার তৃণমূলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর দলের সাংগঠনিক পদে একাধিক রদবদল করা হয়।

তৃণমূলের যুব সভাপতি পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় সায়নী ঘোষকে। তৃণমূলের কালচারাল প্রেসিডেন্ট করা হয় রাজ চক্রবর্তীকে। এছাড়া তৃণমূলে রাজ্য সম্পাদক পদে আনা হয়েছে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এছাড়াও বঙ্গজননীতে আনা হয়ে জুন মালিয়া ও লাভলি মৈত্রকে। মোটের উপর তৃণমূলের একাধিক সাংগঠনিক পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারকাদের, যা কার্যত নজিরবিহীন।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের কথায়, উল্লেখযোগ্যভাবে তারকা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু জয়ী প্রার্থীদের নয়, যাঁরা পরাজিত হয়েছেন, দলে পদ পেয়েছেন তাঁরাও। এক্ষেত্রে আসানসোলেন তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষের নাম উল্লেখযোগ্য। বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পলের কাছে তিনি পরাজিত হলেও তাঁকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছে দল। তরুণ মুখ এবং তারকাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব বৃদ্ধি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

প্রসঙ্গত, একুশের জয়ের পর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দল পরিচালনার ক্ষেত্রে কার্যত তৃণমূলের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’ পদে অভিষেক। শনিবার তৃণমূল যুব সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে, ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি মেনেই অভিষেক ইস্তফা দিয়েছেন।জানা যাচ্ছে, কথায় কথায় লালবাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহারপ করা যাবে না বলে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতেও কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here