দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আগামী ২ মে চারটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরিতে ভোটের গণনা হবে। তার আগে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন কড়া নির্দেশ দিল, ভোটে জিতে কোনও দল যেন বিজয় মিছিল বার না করে। কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কায় ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের তরফে এদিন প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন জাতীয় ও রাজ্য স্তরের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পরে ২০২০ সালের ২০ অগাস্ট নির্বাচন কমিশন সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচন করানো নিয়ে নির্দেশিকা প্রকাশ করে।

পরে ভোটের প্রচার ও জনসভা নিয়ে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরল, তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরিতে বিধানসভা ভোট ও কয়েকটি রাজ্যে উপনির্বাচনের গণনা হবে আগামী ২ মে। দেশে কোভিড সংক্রমণের প্রেক্ষিতে কমিশন স্থির করেছে, গণনার সময় আগের চেয়ে কড়া বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।

এর পরেই মোটা হরফে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রথমত, ফল ঘোষণার পরে বিজয় মিছিল করা চলবে না। দ্বিতীয়ত, বিজয়ী প্রার্থী যখন রিটার্নিং অফিসারের থেকে সার্টিফিকেট নিতে আসবেন, তখন দু’জনের বেশি তাঁর সঙ্গে আসবে না।


দেশ জুড়ে কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ যখন তুঙ্গে, তখন ভোট করানোর জন্য ইতিমধ্যেই নানা মহল থেকে সমালোচিত হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার সবচেয়ে কড়া সমালোচনা করেছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নির্বাচনী প্রচারে মাস্ক পরা, ফেস শিল্ড পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, সামাজিক দূরত্ব মানার মতো কোভিড বিধি রক্ষা করানোর ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ। আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিল কমিশনকে তা তারা পালন করতে পারেনি।

কমিশনের কৌঁসুলীর উদ্দেশে বিচারপতির তির্যক প্রশ্ন, “যখন এত বড় বড় জমায়েত হচ্ছিল নির্বাচনী প্রচারের নামে, তখন কি আপনি অন্য গ্রহে ছিলেন?”


আদালত কমিশনের উদ্দেশে হুঁশিয়ারির সুরে বলেছে, গণনা কেন্দ্রে যদি নির্বাচন কমিশন কোভিড বিধি না মানে, যদি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করে, তাহলে ২ মে গণনা প্রক্রিয়াই বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেবে আদালত।


আদালত আরও বলেছে, “জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, এই রকম একটা সংবেদনশীল বিষয় নির্বাচন কমিশনের মতো একটা সাংবিধানিক সংস্থাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে। আগে তো মানুষের বেঁচে থাকা। তারপর তো গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ!”

এখন রোজ ভারতে তিন লক্ষের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এর ফলে ব্যাপক চাপ পড়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপরে। করোনা আক্রান্তদের অনেকের আত্মীয়রা সোশ্যাল মিডিয়ায় অক্সিজেনের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন। রাজধানী দিল্লিতে লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান প্রধান তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস বলেন, “হু এই সংকটের মোকাবিলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। ভারতে পাঠানো হচ্ছে কয়েক হাজার অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, প্রি ফ্যাব্রিকেটেড মোবাইল ফিল্ড হসপিটাল এবং ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি।”

একইসঙ্গে হু-র ২৬০০ বিশেষজ্ঞ আসছেন ভারতে। তাঁরা অতিমহামারীর মোকাবিলায় ভারতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন।করোনায় বিশ্ব জুড়ে সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ। ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারত এখন করোনার নতুন হটস্পট হয়ে উঠেছে। শুধু ভারতে নয়, বিশ্ব জুড়েই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। তেদ্রোস সোমবার জানিয়েছেন, গত নয় সপ্তাহ ধরে বিশ্ব জুড়ে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। অতিমহামারী শুরু হওয়ার প্রথম পাঁচ মাসে যত লোক আক্রান্ত হয়েছিলেন, গত এক সপ্তাহে সেই সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।

অতিমহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমেরিকা। সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ। মারা গিয়েছেন ৫ লক্ষ ৭২ হাজার ২০০ জন। ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতেও সংক্রমণের হার যথেষ্ট বেশি। সংক্রমণের সংখ্যার বিচারে আমেরিকার পরেই আছে ভারত। গত সোমবার দেশে ৩ লক্ষ ৫২ হাজার ৯৯১ জন আক্রান্ত হন। অতিমহামারী শুরুর পর আর কখনও একই দিনে এত বেশি সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here