দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: কাল শুক্রবার জাতীয় জনগণনা পঞ্জি তথা এনপিআর নিয়ে যে বৈঠক কেন্দ্র ডেকেছে তাতে যোগ দেবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা পষ্টাপষ্টিই জানিয়ে দিলেন।

সেই সঙ্গে সংঘাতের সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেছেন, এজন্য তাঁর সরকার যদি ফেলে দেয় তাও ভি আচ্ছা কিন্তু মুখ্য সচিব বা রাজ্য সরকারের কোনও আমলাই ওই বৈঠকে যোগ দেবেন না। তাঁর কথায়, “দিল্লিতে ওরা যেমন নির্বাচিত সরকার, এখানে আমরা নির্বাচিত সরকার। এখানে বিজেপির একজন মুখপাত্র (পড়ুন রাজ্যপাল) রয়েছেন। ক্ষমতা থাকলে আমাদের সরকার ভেঙে দিয়ে দেখাক”।

১৭ জানুয়ারি দিল্লিতে বৈঠকটি ডেকেছে রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার অব ইন্ডিয়া। সব রাজ্যের মুখ্য সচিবকে ওই বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে। ঘটনাচক্রে বাংলার মুখ্য সচিব রাজীবা সিনহা শুক্রবার দিল্লিতেই থাকবেন। কিন্তু তিনি ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের বৈঠকে যোগ দেবেন। এনপিআর বৈঠকে তিনি যাবেন না। বাংলা থেকে কেবল সেন্সাস ডিরেক্টর এনপিআর বৈঠকে থাকবেন। কেন না তিনি কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার।

প্রশ্ন হল, কেন এনপিআর নিয়ে বৈঠকে থাকবে না নবান্ন?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশঙ্কা এনপিআর আসলে ছুতো। আগামী দিনে গোটা দেশে এনআরসি চালু করার প্রাথমিক ধাপ হিসাবেই এনপিআর করা হচ্ছে। আর সেই কারণেই এবার এনপিআর প্রক্রিয়ায় নতুন প্রশ্নমালা যুক্ত করা হয়েছে। নইলে শুধু সেন্সাস নিয়ে রাজ্য সরকারের আপত্তি নেই।

যদিও কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর বলেন, এনপিআর নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। বিরোধীদের আসল উদ্দেশ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁরা তা করছেন। নইলে বার বার বলা হয়েছে যে, এনপিআর প্রক্রিয়ার সময় স্বেচ্ছায় যে যা তথ্য দেবেন তা গ্রহণ করা হবে। মনমোহন সিংহ জমানাতেও ২০১০ সালে এনপিআর হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়া ভাল হয়েছিল বলেই তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, এনপিআর প্রক্রিয়া সুষ্ঠু না হলে উন্নয়ন প্রক্রিয়াই বাধা পাবে। কারণ, তখন কেন্দ্র বা রাজ্যের কাছে স্পষ্ট হিসাব থাকবে না যে কোন এলাকা কত পিছিয়ে রয়েছে, সেখানকার আর্থ সামাজিক পরিস্থিতিই বা কী?

অন্যদিকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “উন্নয়নের প্রশ্নে দিল্লির ডাকা কোনও বৈঠকেই তৃণমূল সরকারের প্রতিনিধিরা যান না। অতীতে মনমোহন সিংহ জমানাতেও তাই করেছে। এই সংস্কৃতি আজ নতুন নয়। উন্নয়নের ব্যাপারেও রাজনীতি খোঁজা তৃণমূলের বরাবরের স্বভাব”।

পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশ জুড়ে এনআরসি চালু করা যে আপাতত আর সম্ভব নয় তা মোদী সরকার পরিষ্কার বুঝে গিয়েছে। কিন্তু এনপিআর একটি জরুরি প্রক্রিয়া। বিরোধীরা কৌশলেই এনপিআর-এর সঙ্গে এনআরসি-কে জুড়ে দেখাতে চাইছেন। কারণ, তাঁরাও চান বিভ্রান্তি ছড়াতে। আসলে বিজেপি সরকার যেমন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এনআরসি চালু করার কথা বলেছিলেন। তেমনই রাজনৈতিক কারণেই এনপিআর-এ বাধা দিচ্ছেন বিরোধীদের একাংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here