দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উদ্‌যাপনের সূচনায় ২৩ জানুয়ারিকে ইতিমধ্যেই ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিনটিকে জাতীয় ছুটি ঘোষণার দাবি আরও একবার তুলেছেন তিনি। গত সোমবারই নবান্নে ভার্চুয়াল বৈঠকে নেতাজির জন্মজয়ন্তী উদ্‌যাপন নিয়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ‘আজাদ হিন্দ বাহিনী’ মনুমেন্ট তৈরি ও নেতাজির নামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এই পরিস্থিতিতে একুশের ভোটে নেতাজি-আবেগ কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপিও। সর্বোপরি নেতাজিকে নিয়ে আলাদা করে আসরে নামছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী।

ইতিমধ্যেই সুভাষচন্দ্রের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীর জন্য বিশেষ কমিটিও গঠন করেছেন মোদী। এবার নেতাজির জন্মদিবস উপলক্ষ্যে সরাসরি কলকাতায় চলে আসছেন তিনি। আগামী ২৩ জানুয়ারি কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

বিধানসভা ভোটের কারণে এ রাজ্যে শীর্ষ বিজেপি নেতাদের আগমন এখন প্রায় প্রতিদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মোদী এখনও নিজে বাংলায় এসে ভোটের দামামা বাজাননি। আর সেই সূত্রেই ২৩ জানুয়ারি, নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষ্যে বাঙালির আবেগকে ছুঁতে সরাসরি কলকাতায় আসছেন তিনি। নেতাজির কথা তুলে ধরে তিনি যে আসলে বাঙালিকে কাছে টানার চেষ্টা করবেন, তা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন রাজনীতির কারবারিরা।

যদিও পিছিয়ে নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নেতাজির বিষয়ে তিনি বরাবর সরব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। এমনকী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে বেঙ্গল প্ল্যানিং কমিশন গঠন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালনে বিদ্বজ্জনদের নিয়ে গঠিত বিশেষ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে এই কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকার প্ল্যানিং কমিশন তুলে দেওয়ায় তাঁর কটাক্ষ, ‘কেন্দ্র তো প্ল্যানিং কমিশন তুলে দিয়ে নীতি আয়োগ না কী একটা বানিয়েছে। আগে আমরা কমিশনে গিয়ে যে কথা বলতে পারতাম, তা এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা বাংলা প্ল্যানিং কমিশন বানাব।

কারও কোনও আপত্তি থাকলেও, আমরা এগোব। অভিজিত, সুগতরা রয়েছেন। এঁদের পরামর্শ নেব।’

নেতাজির নামে পুরোপুরি রাজ্যের খরচে একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর কথাও এদিন ঘোষণা করেছেন মমতা। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ২৩ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে গোটা বাংলা জুড়ে নেতাজির জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন। চলবে এক বছর ধরে। পাশাপাশি, নেতাজির স্মৃতিতে রাজারহাটে মনুমেন্ট তৈরি, স্কুল-কলেজ স্তরে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সরকারি উদ্যোগে জয় হিন্দ বাহিনী গঠন, পশ্চিমবঙ্গে নেতাজির জন্মতিথিকে দেশনায়ক দিবস হিসাবে পালন করার মতো নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথাও এদিন জানান মমতা। ফের তিনি কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, ২৩ জানুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্রের এনসিসি রয়েছে, থাকুক।

আমরা শিক্ষা দপ্তরের আওতায় স্কুল-কলেজ স্তরে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যে জয় হিন্দ বাহিনী বানাব, তা কন্যাশ্রীর মতো একটি বিশেষ ব্র্যান্ড হবে। তা বিপর্যয় মোকাবিলা থেকে শুরু করে সমস্ত ক্ষেত্রে মানুষের পাশে থাকবে। এর সদস্যরা বিশেষ স্কলারশিপও পাওয়ার সুযোগ পাবে। আমরা নেতাজির উপর শর্ট ফিল্মও বানাব। আজাদ হিন্দ ফৌজের নামে প্রস্তাবিত মনুমেন্টটির গায়ে নেতাজির জীবনের নানা দিক ও আলেখ্য নিয়ে একটি আর্কাইভও থাকবে।’

আবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ ঘোষণার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কয়েক দিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে নেতাজির জন্মদিনকে জাতীয় ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছেন।

এ বছর নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর সূচনা হচ্ছে। সে দিকে তাকিয়েই নেতাজির জন্মদিনকে দেশপ্রেম দিবস ঘোষণার দাবিতে সরব হয়েছে বামেরা। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকেও মান্নান ও সুজন চিঠি দিয়ে নেতাজির জন্মদিনকে দেশপ্রেম দিবস ঘোষণার দাবিতে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের তরফে দাবিপত্র পেশ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here