দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজ্য বাজেট পেশ হয়ে গেছে। এ বার যে কোনওদিন ভোট ঘোষণা করে দিতে পারে নির্বাচন কমিশন। তার ঠিক আগে, কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে অনুজ শর্মাকে সরিয়ে সেই পদে সৌমেন মিত্রকে বসালেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


নবান্নের এই পদক্ষেপ যে নিছক বদলি নয় তা পিছনের দিকে হাঁটলেই বোঝা যাবে। দেখা যাবে, ষোল সালে বিধানসভা ভোটের সময়ে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের লাগাতার অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে সরিয়ে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আর সেই পদে বসানো হচ্ছে, তৎকালীন এ়ডিজি সিআইডি সৌমেন মিত্রকে।

বাংলায় পুলিশ ফোর্সে সৌমেন মিত্র বরাবরই ব্রাইট ও একনিষ্ঠ অফিসার হিসাবে পরিচিত। এক সময়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান ছিলেন তিনি। হাওড়া ও মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার ছিলেন। পরে প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি, কলকাতা পুলিশের স্পেশাল কমিশনার ইত্যাদি পদে ছিলেন।
ষোল সালের ভোটে কলকাতায় ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে সৌমেন মিত্র যে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন, তা প্রশংসাও পেয়েছিল বিভিন্ন মহলের। কিন্তু ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই বদলে বদলে যায় ছবিটা। মুখ্যমন্ত্রী পদে দ্বিতীয় বার শপথ নিয়েই তাঁর কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে সরিয়ে দেন মমতা। রাজীব কুমারকে সেই পদে ফিরিয়ে আনেন। সোমেন মিত্রকে বদলি করা হয় আইজি ট্রেনিং পদে।

বিরোধীরা তখনই বলেছিলেন, এক প্রকার ‘নির্বাসন’ দেওয়া হল সৌমেন মিত্রকে। পুলিশ সার্ভিসের আইজি পদে থেকেও গত পাঁচ বছরে কলকাতায় সরকারের অতি উজ্জ্বল সব অনুষ্ঠানের প্রায় দেখাই যায়নি। এমনকি আমলা ও পুলিশ মহলে অনেকের তাঁর কথা খেয়াল হলে এক কথায় বলতেও পারতেন না সৌমেনবাবু সার্ভিসে রয়েছেন, নাকি অবসর নিয়েছেন।

অধীর চৌধুরী, মুকুল রায়, সুজন চক্রবর্তীদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধরেই নিয়েছেন যে আদর্শ আচরণবিধি বলবৎ হলেই নির্বাচন কমিশন এক এক করে সরকার ঘনিষ্ঠ অফিসারদের সরাবে। অনুজ শর্মা, এডিজি আইনশৃঙ্খলা পদে বর্তমান অফিসার জ্ঞানবন্ত সিং প্রমুখ মুখ্যমন্ত্রীর কাছের অফিসার বলে পরিচিত। কমিশন ভোটের সময়ে তাঁদের সরালে শাসক দলের বেইজ্জতি হত। তাই আগে ভাগেই তাঁদের সরানো হল।


প্রসঙ্গত, উনিশ সালে লোকসভা ভোটের সময়েও ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার, বিধাননগর কমিশনারেটের কমিশনার, স্বরাষ্ট্র সচিব বদল করেছিল কমিশন। আর এ বার প্রাক ভোট কলকাতায় বৈঠকে এসে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ বার ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। এমনকি এও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, ভোটের পর কোনও অফিসারকে সাসপেন্ড বা পানিশমেন্ট পোস্টিং দেওয়া চলবে না। এমনকি কমিশন সূত্রে এও শোনা যাচ্ছে, ভোটের সময়ে ভিন রাজ্য থেকে অফিসার এনে জেলাওয়াড়ি পুলিশ পর্যবেক্ষক পদেও নিয়োগ করা হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here