দেশেরসময় ওয়েবডেস্ক: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর তার জেরে দেশজুড়ে লকডাউন। এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে গাড়ি শিল্পে। গোটা এপ্রিল মাসে একটিও গাড়ি বিক্রি হয়নি মারুতি সুজুকির। শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছে সংস্থা। বলা হয়েছে, সংস্থার ইতিহাসে এক মাসে একটিও গাড়ি বিক্রি না হওয়ার নজির নেই। উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কজনক হয়ে ওঠার পরে পরেই গত ২২ মার্চ থেকে উৎপাদন থেকে বিক্রি সবই বন্ধ রাখে মারুতি সুজুকি।

এই লকডাউনের অনেক আগে থেকেই অবশ্য ভারতের বাজারে গাড়ি শিল্পে মন্দা দেখা দেয়। ২০১৯ সালের শেষ দিক থেকেই এই শিল্প কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। সেই বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই এনিয়ে চিন্তা শুরু হয়। হিসাব বলছে, ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য চার চাকার গাড়ি বিক্রি ৪১ শতাংশ কমে যায়। একই ভাবে কমে যায় ট্রাকের বিক্রিও। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে দেশের অন্যতম বৃহৎ ট্রাক উৎপাদক সংস্থা অশোক লেল্যান্ড গোটা দেশে তাদের বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায়।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গাড়ি শিল্পে মন্দা অশনিসংকেত। কারণ, এই শিল্পটা ছাতার মতো। এর সঙ্গে অনুসারী অনেক শিল্প জড়িয়ে। একটা গাড়ি তৈরি করতে ৩০ হাজার বডি পার্টস প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে অনেক কিছুই অনুসারী শিল্প সংস্থায় তৈরি হয়। ফলে গাড়ি শিল্পে মন্দা গ্রাস হলে তা শিল্পক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে বাধ্য।

আর শুধু ভারতেই নয়, গোটা বিশ্বেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে গাড়ি শিল্পে তার ধাক্কা লেগেছে। গত ফেব্রুয়ারিতেই দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশ্বের সব থেকে বড় গাড়ি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করে দেয় হুন্ডাই। উসলান কমপ্লেক্সে গাড়ি তৈরির পাঁচটি প্ল্যান্ট রয়েছে। পাঁচটি প্ল্যান্ট মিলিয়ে এই কমপ্লেক্সে বছরে তৈরি হয় ১৪ লাখ গাড়ি। তখন এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল মূলত চিনে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ, গাড়ি তৈরির যন্ত্রপাতির একটা বড় অংশই আসে চিন থেকে। আর সেই সাপ্লাইলাইন বন্ধ হয়ে যায়।

তবে লকডাউন উঠে গেলে ভারতে গাড়ি বিক্রি বাড়তে পারে বলে আগেই আশা প্রকাশ করেছিল মারুতি সুজুকি। মহামারী করোনাভাইরাস ভারতের গাড়ি শিল্পের জন্য সুদিন নিয়ে আসতে পারে বলে এপ্রিলেই মন্তব্য করেছিলেন মারুতি সুজুকির চেয়ারম্যান আর সি ভার্গভ। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, লকডাউন শেষ হলে ভারতে গাড়ি বিক্রি অনেকটা বাড়তে পারে। লকডাউনের পরেও সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে মানুষ সামাজিক দূরত্ব চালিয়ে যাবে। আর তার জন্যই বাড়বে গাড়ি বিক্রি। তাঁর কথায়, “ভারত আর আগের মতো থাকবে না, মানুষের মানসিকতা অনেকটা বদলে যাবে।”

তবে শুধু মারুতি সুজুকিই নয়, দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে ভারতে সব সংস্থারই গাড়ি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বন্ধ বিক্রিও। এর জেরে মনে করা হচ্ছে, কারখানা থেকে শোরুম, এই ক্ষেত্রের বহু কর্মী কাজ হারাতে পারেন। সংখ্যাটা কয়েক লক্ষও হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here